গায়ত্রী জপে সারবে করোনা! এইমস-কে গবেষণার নির্দেশ কেন্দ্রের

গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলেই কি সেরে যাবে কোভিড? অবাক করা এই প্রশ্ন নিয়েই গবেষণা শুরু হতে চলেছে খোদ এইমসের গবেষণাগারে। হৃষিকেশ এইমসকে এই অদ্ভুত গবেষণারই নির্দেশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রালয়। তবে ইতিমধ্যে এই নির্দেশকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্কও। গায়ত্রী মন্ত্র হিন্দুদের কাছে পবিত্র মন্ত্র বলে স্বীকৃত। তবে তা কোভিড সারাতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের মধ্যে আসলে এক ধরণের গৈরিকীকরণের আভাস খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে গবেষকদের স্বাধীনতা নিয়েও। চিকিৎসকরা কী ধরণের গবেষণা করবেন, তাও কি তাহলে এবার নেতা-মন্ত্রীরাই ঠিক করে দেবেন?

“করোনা ভাইরাস নিয়ে ভারতীয় গবেষকদের কাজও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তা যথেষ্ট স্বীকৃতিও পেয়েছে। কিন্তু এই এক বছর ধরে প্রত্যেককেই কাজ করতে হয়েছে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে। সেখানে এমন একটি বিষয় নিয়ে গবেষণায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে দেখে সত্যিই হাসি পায়।” বলছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অরিজিৎ সিংহ। তাঁর মতে, “রোগের অবর্তমানে তার চিকিৎসা আবিষ্কার হতে পারে না। এর দ্বারা কখনও এমন দাবি করা যায় না, ভারতের বিজ্ঞানচর্চা আদৌ উন্নত ছিল কিনা।”

হৃষিকেশ এইমস সূত্রে জানানো হয়েছে, মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যে গবেষকদের একটি দলও তৈরি করা হয়েছে। আইসিএমআর থেকেও এই গবেষণার বিষয়ে ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে যে ২০ জন রোগীর উপর পরীক্ষা করা হবে, তাঁদের এখনও চিহ্নিত করা হয়নি। গবেষণার জন্য তাঁদের দুই ভাগে ভাগ করে নেওয়া হবে। এক অংশকে দেওয়া হবে সাধারণ অ্যান্টি-বায়োটিক চিকিৎসা। আর অন্য অংশকে সাধারণ চিকিৎসার সঙ্গে নিয়মিত গায়ত্রী মন্ত্র জপ এবং যোগাসন করানো হবে। ১৪ দিন এভাবে পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখে দেখা হবে আদৌ তাঁদের সার্বিক উন্নতির মধ্যে কোনো পার্থক্য রয়েছে কিনা।

চিকিৎসকদের মতে, এধরণের সমীক্ষা কোনোভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর রাস্তা হতে পারে না। শরীরে কোনো একটি অনুসঙ্গের প্রভাব সম্পর্কে আগে তাত্ত্বিক ধারণা থাকতে হবে। তারপর তাই নিয়ে সমীক্ষা হতে পারে। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিই অবৈজ্ঞানিক বলে মনে করছেন তাঁরা। অথচ এর সঙ্গে জড়িয়ে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটিও। অন্যদিকে স্বাধীন গবেষণার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে নানাভাবে। সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থনৈতিক সাহায্য পাচ্ছেন না গবেষকরা। সব মিলিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের প্রশ্নটিকে বেশ জোরের সঙ্গেই উস্কে দিচ্ছে কেন্দ্রের এই অদ্ভুত নির্দেশ।

আরও পড়ুন
রেল প্রকল্পে কাটা পড়বে ১৪০ হেক্টর অরণ্য, কেন্দ্রের ছাড়পত্রে ক্ষুব্ধ গোয়ার পরিবেশকর্মীরা

Powered by Froala Editor

Latest News See More