দার্জিলিংয়ের ছবি, ছবির দার্জিলিং - দার্জিলিংপত্তন নিয়ে আরও

সময়ভ্রমণ -২৭
আগের পর্বে

পিনের সংগৃহীত দলিল থেকে বোঝা যায় লয়েড তেমন কৌশলী লোক ছিলেন না। কৌন্সিলের কর্তাদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। নেপাল ও সিকিমের রাজার মধ্যে মধ্যস্থতাতেও ব্যর্থ হলেন তিনি। আর এর মধ্যেই কিষেনগঞ্জের জনৈক মি. পেরি তাঁকে আর্থিকভাবেও ঠকালেন। অন্যদিকে কলকাতার গরমে সাহেবদের নাভিঃশ্বাস উঠে যায়। দার্জিলিং যাওয়ার বিষয়ে তৎপরতা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেখানে বাজার তো দূরের কথা, বাজারের এলাকায় গাছ কাটাও হয়নি। লয়েডের বদলে তাই দায়িত্ব দেওয়া হল ক্যাম্পবেলকে। নতুন সাহেবি রাজে শুরু হল বেগার শ্রমের নীতি।

ফ্রেড পিনের দার্জিলিং লেটার্স বইটার মাঝামাঝি একটা ছবি আছে। আঁকা ছবি, সম্ভবত পেন্সিলে। ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ পত্রিকায় ১৮৫০ সালে ছাপা এই ছবির ছবি, অর্থাৎ ফটো, আবার ছাপা হচ্ছে পিনের বইতে। সাদা-কালো ছবির সামনের জমিতে একটা কাঠের বেড়া, বেড়ার ভিতরে দুজন মালবাহক। বেড়ার ওধারে ছোট ছোট সায়েবি কুঁড়ে, কটেজ, বা বাংলো। এদিকে ওদিকে কিছু গাছের শোভন জটলা, তাতে চোখ আটকায় না। ঢেউ খেলানো জমি ও পাহাড়ের সারি যেখানে গিয়ে শেষ হচ্ছে, সেখানে বরফের পাহাড়, হয়তো কাঞ্চনজঙ্ঘা। হয়তো বলছি তার কারণ, ছবিতে যে নিসর্গ তা ইউরোপের যে কোন গ্রামাঞ্চলের হতে পারে, পিছনের বরফের পাহাড়গুলো সরিয়ে নিলে ইংল্যান্ডের তৃণাচ্ছাদিত প্রান্তর ও রম্য অরণ্যানীও হতে পারে। কাঠের বেড়া, বাংলো-কটেজ, সুদৃশ্য বৃক্ষরাজি, উঁচুনিচু জমি, এই সব মিলিয়ে যে নিসর্গছবি তৈরি হচ্ছে সেখানে  হিমালয়ের আদিম শ্বাসরোধকারী বন্যতা তো নেইই, উপরন্তু প্রকৃতি হয়ে উঠেছে নিতান্তই বাধ্য ও বশ, ছবির মতো, ছবি। কলকাতা এবং উত্তর ও পূর্ব ভারতের ভয়ঙ্কর গ্রীষ্ম, অসংখ্য পোকামাকড় সাপবিছে এবং পালাজ্বর কালাজ্বর ইত্যাদি প্রাণঘাতী অসুখ থেকে বাঁচতে চেয়ে যে সব সায়েবমেম দীর্ঘ বিপজ্জনক যাত্রা সেরে দার্জিলিং এর পাহাড় চুড়োয় পৌঁছচ্ছেন, তাঁদের আশ্বস্ত করার মতো, মন ভালো করার মতো ছবি। সে ছবি দেখে মনে হবে না ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আছি। সমস্তটাই খুব হোম-লাইক, হুবহু ঘরের মতো। 

পিনের বইয়ের প্রচ্ছদে আর একটি ছবি আছে। ১৮৫২-র দার্জিলিং, ক্যাপ্টেন ডব্লিউ এস শেরউইল এর আঁকা থেকে খোদাইছাপ ছবি, লিথোগ্রাফ। লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি য়্যান্ড রেকর্ডস থেকে সেটি সংগ্রহ করেছিলেন পিন। বাদামি-খয়েরি জমিতে ছাপা সাদাকালো ছবিটাতে যে নিসর্গ ধরা পড়েছে, তা অন্য ছবিটার মতো নয়। ছবির মতো, ছবি, তৈরি হয়ে যাওয়া নিসর্গের কথা এই ছবি বলছে না। বরং, ছবিটা থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে ঔপনিবেশিকদের  প্রকৃতি-শাসনের অদম্য জেদ, নিসর্গবদলের হিংস্র ইচ্ছা। অথচ এ ছবির বিষয়বস্তুও অন্য ছবিটার মতোই, ঢেউ-খেলানো পাহাড়ের সারির শেষে দিগন্তজোড়া তুষারশৃঙ্গ। কিন্তু এ ছবিতে মানুষজন নেই, ঘরবাড়িও। সামনের পাহাড়, দূরের পাহাড় হয় ধূধূ বৃক্ষশূন্য খালি, নয় খালি হয়ে এসেছে। ধংস হচ্ছে হিমালয়ের আদিম পার্বত্য বন, যা তৈরি হতে সময় লেগেছিলো কয়েক লক্ষ বছর। ইতস্তত পড়ে আছে কাটা গাছের শিকড়, গুঁড়ি। খুব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, পরিষ্কার করা জায়গায় গজিয়ে উঠছে কিছু ঘরবাড়ি। হয়তো সৈন্যদের ব্যারাক, কুলিদের থাকবার জায়গা।  

আদি সায়েবপূর্ব দার্জিলিং, অৰ্থাৎ অবজার্ভেটরি পাহাড়ের লাগোয়া এলাকা এবং তৎসন্নিহিত পাহাড়ি ঢালে সায়েবি দার্জিলিং-এর পত্তন ঘটল। জোড়বাংলো থেকে জলাপাহাড়(আসলে জ্বলাপাহাড়, মানে পুড়ে যাওয়া পাহাড়) হয়ে পুরোনো কার্ট রোড পৌঁছোত অবজার্ভেটরি হিল অঞ্চলে। রাস্তার দুপাশ থেকে এবং নতুন দার্জিলিং-এর শহরকেন্দ্র, যেখানে কৌন্সিলকর্তা ও অন্য সায়েবরা জমি নিয়েছিলেন, সেখান থেকে সমস্ত গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। হুরকারুতে প্রকাশিত ভ্রামণিকের চিঠির উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠি প্রকাশের অব্যবহিত পরেই ইংলিশম্যান পত্রিকায় বেরুল পিয়ার্সন সাহেবের 'দার্জিলিং নিয়ে নোট'। পিয়ার্সন বলতে জে টি পিয়ার্সন, দার্জিলিং-এর চিকিৎসা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজপুরুষ। তিনি পাঙ্খাবাড়িতে দীর্ঘসময় ডেরা বেঁধেছিলেন, পাহাড়ে থাকবার উপযুক্ত ব্যবস্থাদি ও ওপরে ওঠার ঠিকঠাক রাস্তা ছিলো না বলে সপরিবার তিনি নিচেই ছিলেন। পিয়ার্সন লয়েডের সুহৃদ ছিলেন, ফলে 'ভ্রামণিকের' চিঠির তুলনায় অব্যবস্থা ও অসুবিধার উল্লেখ তাঁর লেখায় কম ছিলো। পিয়ার্সনের 'নোটে' আদি সায়েবি দার্জিলিং ও বৃক্ষচ্ছেদন-প্রক্রিয়ার বর্ণনা আছে:

“আপনার ডাইনে দার্জিলিং পাহাড় মাথা তুলেছে। পাহাড়ের ঢালে একটাও গাছ নেই, কিন্তু সুগন্ধি লতাপাতা, মির্টল ঝোপ আর ফুল আছে….গিরিশিরাটা শেষ হচ্ছে যে টিলায়, সেখানে ড: চ্যাপম্যানের পুরোনো কুঁড়ে...ঢাল ধরে রাস্তা যাচ্ছে, বাঁয়ে সেনাদের থাকবার জায়গা, আরো কিছুটা এগুলে কর্নেল লয়েডের বাসগৃহ; সামনের খালি উঁচু জায়গাটায় গীর্জা তৈরি হবে, পথশেষের ছোট্ট পাহাড়টার মালিক মি. ডিকেন্স। এরও পর, বনে-ঢাকা গিরিশিরা চলে যাচ্ছে বরফের পাহাড়ের দিকে। দার্জিলিং এইরকমই মোটের ওপর...আমার তো প্রথমটায় মনে হলো গাছ যেন একটু বেশিই কাটা হয়ে গিয়েছে। পরে, কর্নেল লয়েডের ব্যাখ্যা শুনে মত বদলালাম। বনের মধ্যে যে সব গাছ ঘন হয়ে জন্মায়, সেগুলো এমনিতেই খানিক বেখাপ্পা গোছের, একা দাঁড়িয়ে থাকলে দেখতে ভালো লাগে না। বেশি গাছ থাকলে আবার অন্য মুশকিল, একজনের জায়গায় যা নয়নশোভন, তা  অন্যজনের দৃষ্টি রোধ করে। সে কারণে ঠিক হলো এক আধটা সুন্দরমতো গাছ ছাড়া বাকি সব গাছই কেটে ফেলা হবে।”

আরও পড়ুন
দার্জিলিংপত্তন : লয়েডের বিদায় ও ক্যাম্পবেলের অভ্যুদয়

লয়েড যত গাছই কাটুন, শহর পত্তনের পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল না। গারস্টিন রিপোর্টে পরিষ্কার বলা ছিলো, জঙ্গল কাটার কাজ দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে না, বাজারের জায়গায় মসে আর মেঘকুয়াশায় ছাওয়া গাছ, রাস্তাও বনে ভর্তি। 'ভ্রামণিকে'র চিঠিতে সে বনের(এবং বনকাটার ও নিসর্গবদলের) বর্ণনা:

“(কার্শিয়াং থেকে)...ক্লান্তিকর ভেজা পদযাত্রা শুরু হল। বৃষ্টি পড়ল না বটে, কিন্তু পুরো পথটাই আমাদের ঢেকে রেখেছিলো যে মেঘগুলো, তারা মস-ঢাকা গাছে তাদের বাষ্প জমা করতে থাকল, সেই বাষ্প হাতফেরতা বৃষ্টির মতো করে নিচে আমাদের গায়ে পড়ছিল। রাস্তার এই অংশটা যে কতটা আর্দ্র, তা বোঝা যায় প্রত্যেকটা গাছের গায়ে নানান রকমের মসের পুরু আস্তরণ দেখে...মন খারাপ হয়ে যায়। ...সরু বাঁশের দীর্ঘ সারি, গোড়া থেকে দশ ফুট ওপরে ভাঙা, ছোঁয়া লাগলেই ভেঙে যায়। মস নিয়ে একটা গল্প আছে। ।নেটিভরা বিশ্বাস করে যে এখানকার গাছগুলো তাদের দেবতাদের কাছে আবেদন করেছিল, হে দেবকূল, এখানে এত ভেজা আর ঠান্ডা, থাকা যাচ্ছে না, আমরা পাহাড় ছেড়ে নিচে নেমে যাই। দয়াপরবশ হয়ে দেবতারা তাদের গরম জামা পাঠিয়ে দিলেন।

আরও পড়ুন
সময়ভ্রমণ ২৫: লয়েড, সিকিমপতি রাজা ও কোম্পানির দার্জিলিংলাভ (দুই)

“…(মাহালদিরাম পৌঁছে)পরের দিন তুমুল বৃষ্টি।...চারদিকে মসে ঢাকা, শোকাচ্ছন্ন, দীর্ঘ গাছের দল, কিচ্ছু দেখা যায় না। মিছেই আমরা চেষ্টা করলাম ফাঁক খুঁজে বার করতে...খুঁজতে খুঁজতে একটা মৃতদেহ পাওয়া গেল…

“ফেরার পথে দেখি মি. হেপার একটা টিলামতো জায়গায় নতুন বাংলো বানাচ্ছেন। তার সামনের খাদের ধার অবধি পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে, সমতলের অতি মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। তিনটে নদীর গতিপথ দেখা যায়, বালাসন, তিস্তা, মহানন্দা…প্রথম যখন দেখি মনে হল এর চাইতে সুন্দর কিছু কখনো দেখিনি। দুটো নদী পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, খাদের মাঝামাঝি একটা মেঘ ঢুকে আসায় তৃতীয়টা খানিক ঝাপসা, সেই মেঘে রোদ প্রতিফলিত হয়ে সোনালি রং ধরেছে। জায়গাটা পরিষ্কার করতে মি. হেপারকে কি পরিশ্রমটাই না করতে হয়েছে! শ' শ' বছরের পুরোনো ওকগাছের জঙ্গল সাফ করতে হয়েছে। একটা মেপে দেখলাম শিকড়ের ওপর থেকে ১৭ ফুট মোটা, নয় নয় করেও দেড়-দুশো ফুটের নিরেট কাঠ। এরকম গোটা কুড়ি কাটা হয়েছে দেখলাম। এর সঙ্গে জুড়ুন, পাহাড়ের মাথায় অন্তত বারো ফুট অবধি কেটে ফেলতে হয়েছে, বড় বড় সব পাথর। হেপারের ইচ্ছা এখানে একটা বাগান করেন, তাতে জায়গাটার সৌন্দর্য আরো বাড়বে...ভারতে পাওয়া যায় না এমন সব যুরোপীয় ফল আর সব্জি সেখানে লাগানো হবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই...”

আরও পড়ুন
লয়েড, সিকিমপতি রাজা ও কোম্পানির দার্জিলিংলাভ – ১

শুধু কৌন্সিলকর্তারা নন, লয়েডের পিছনে আরো নানাবিধ লোকজন লেগে গিয়েছিলো, লয়েডবিদায়ে সামগ্রিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল। এতে ক্যাম্পবেল সাহেবের হাত ছিল কিনা জানা যায় না, কিন্তু কারুর না কারুর হাত তো ছিলই। ১৮ই মার্চের ইংলিশম্যানে জনৈক 'সত্যপ্রেমী'র লেখা একটা চিঠি বেরুল, তার ছত্রে ছত্রে লয়েডের অপদার্থতা সম্পর্কে নানান মন্তব্য:

“দার্জিলিং থেকে হাড় হিম করা বেত্তান্ত আসছে...কলকাতার সুধীজন কি বলবেন...যখন তাঁরা শুনবেন লয়েডের নিজস্ব বাজার ছাড়া কোন সাধারণ বাজার এতদিনে তৈরি হয়নি...রাস্তার(যদি অবশ্য ওটাকে রাস্তা বলা যায়) হাল অবর্ণনীয়, পাঙ্খাবাড়ির পরের দু মাইল বাদ দিলে মাহালদিরাম অবধি কোন কাজ হয়নি...১৩০-৪০ জন সেপাই আছে বটে, কিন্তু তারা গাছ কাটার ব্যাপারে কিচ্ছু করেনা।...রাস্তার ধারে ধারে যে কোন ভ্রমণকারী ভদ্রলোক ছ-আটটা লাশ তো দেখবেনই। বাকিগুলোকে গোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের পা মাটির ওপরে বেরিয়ে আছে। খবর নিয়ে দেখলাম প্রায় সবাই না খেতে পেয়ে মরেছে, নাহলে খাদে পড়ে। (শেষোক্তদের মধ্যে)... দুজন য়ুরোপীয় সার্জেন্ট, পর পর দুদিন দুজন মারা গেছে...বাংলো বলতে কিছু নেই...উইলসন সায়েবকে তো স্রেফ ঠকানো হয়েছে...     

আরও পড়ুন
পাহাড়ে ওঠা, থাকা : লয়েড, দার্জেলিং ও ফ্রেড পিনের দার্জিলিং লেটার্স

স্যামুয়েল স্মিথ হুরকারুতে চিঠি লিখে সরাসরি কোম্পানিসরকারকে দায়ী করলেন। তাঁর বক্তব্য ছিলো, লয়েড ও গিলমোর যথাসাধ্য করছেন, কিন্তু সরকার তার কর্তব্য করছে না। রাস্তা বানানোর জন্য দু হাজার টাকা ধার্য হয়েছে, তাতে কি হয়? কুড়ি হাজার হলেও না হয় হত। অন্যদিকে, লয়েড কুলি যোগাড় করবেন কোত্থেকে? তাঁকে পাঙ্খাবাড়ি থেকে ১০০ মাইল অবধি সমতলের সর্বত্র হেকিমি ক্ষমতা দেওয়া হোক, কুলি যোগাড় হয়ে যাবেই। অতঃপর গিলমোর নিজে চিঠি লিখে লয়েডের পক্ষ নেন। 'সত্যপ্রেমী'কে তীব্র আক্রমণ করে গিলমোর লেখেন:

“এই স্বঘোষিত 'সত্যপ্রেমী', এই জ্ঞানান্বেষী ব্যক্তি বলছেন…'অন্যরা' খাদে পড়ে মারা গেছে কিম্বা 'খাদ চাপা পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে'।(মাননীয় সম্পাদকবর্গ, আপনারা বা অন্য কেউ কি ইতিপূর্বে খাদের 'ওপর' লাশ পড়ে থাকার বা লাশের ওপর 'খাদ' পড়ার কথা শুনেছেন?)...এই 'সত্যপ্রেমী'র আসলে নিজেকে 'মিথ্যাপ্রেমী' বলে অভিহিত করাটা ঠিক হতো। ...যে যুরোপীয় সার্জেন্টদের এক সত্যপ্রেমী দুদিনের মধ্যে নৃশংস ভাবে খুন করেছে, তাঁদের মধ্যে একজন দুদিন বাদে ফিরে আসে ও... দ্বিতীয়জন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর জীবনাশঙ্কা ছিলো না।... খাদে পড়ে একজনই মাত্র কুলি মারা গেছে।...কর্ণেল লয়েডের কোন 'নিজস্ব' বাজার ছিলো না, এখনো নেই।...সিপাইরা বিস্তর গাছ কেটেছে, তারপর তারা কুচকাওয়াজ ইত্যাদিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখন তারা রাস্তার কাজ করছে।…কাজে বিলম্ব হবার মূল কারণ কাজের লোক না পাওয়া।”

আত্মপক্ষ সমর্থনে লয়েড কৌন্সিলকর্তাদের শেষ চিঠি লিখছেন ১৮৩৯-এর ৫ জুন। ক্যাম্পবেল তখনো লয়েডের জায়গায় বসেননি, কৌন্সিলের তরফে লয়েডকে কিছু জানানোও হয়নি। কর্তারা তাঁকে সরাতে চাইছেন সে খবর অবশ্য লয়েডের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় কৌন্সিলে তাঁর একজন বন্ধু অন্তত ছিল, পিন বলছেন। 

সে বন্ধু লয়েডকে দার্জিলিংয়ে বাহাল রাখতে পারেননি, ৫ই জুনের আগেই তাঁর বিষয়ে কর্তারা মনস্থির করে ফেলেছিলেন। দার্জিলিংয়ে সায়েবরাজ কায়েম করার জন্য পাঁচ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল, গৌরবহীন নিঃশব্দ অপসারণ, ইতিহাসের স্রষ্টার আসন থেকে ইতিহাসের পাদটীকায় চলে যাওয়া, বিস্মৃত হয়ে যাওয়া। লয়েডের তুলনায় ক্যাম্পবেল অনেক চৌকশ, তৎপর, বুদ্ধিদীপ্ত, তাঁর বহুস্তরীয় বহুবিধ কাজের আড়ালে লয়েডের অগৌরবের জীবন ঢাকা পড়ে গেল। তাঁর শেষ চিঠির পুরোটাই তুলে দেওয়া যায়। সে চিঠি ও ক্যাম্পবেলপর্বের সূচনা নিয়ে কথাবার্তা চলতে থাকবে।

Powered by Froala Editor