৯৬ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের জোটেনি রেশন, সমীক্ষায় উঠে এল করুণ ছবি

লকডাউনের শুরু থেকেই বিপদের মুখে পড়েছিলেন তাঁরা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রোজগারের রাস্তা। তার ওপরে পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছিল। হ্যাঁ, তাঁরা এই দেশের অভিবাসী শ্রমিক। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়েই কেউ কেউ পৌঁছাতে পেরেছিছেন বাড়িতে। অনেকে ভিন রাজ্যেই দিন কাটাচ্ছেন জীবনের অনিশ্চয়তা নিয়ে। কিন্তু কেমন করে দিন কাটছে তাঁদের? একটি সমীক্ষায় উঠে এল পরিযায়ী শ্রমিকদের করুণাবস্থার ছবি।

সম্প্রতি প্রায় ১১ হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের উপরে এই সমীক্ষাটি করেছিল ‘দ্য হিন্দু’। সমীক্ষায় উঠে আসে, লকডাউন ঘোষণার পরেই তাঁদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল কর্মসংস্থাগুলি থেকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের বকেয়া মেটায়নি মালিকপক্ষ। এছাড়া ৮ থেকে ১৩ই এপ্রিলের মধ্যে, ৯৬ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকের কাছেই পৌঁছায়নি রেশন। ফলে সামান্য অর্থ নিয়েই অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন এখনও।

তবে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল খাদ্যদ্রব্য এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার। অর্থ সাহায্য পাওয়ারও কথা ছিল এই সকল শ্রমিকের। কিন্তু বেশিরভাগ শ্রমিকই বঞ্চিত হয়েছেন এই সুবিধা থেকে। এমনটাই স্পষ্ট উঠে আসে সমীক্ষায়।

এই সমীক্ষা অনুযায়ী, সবথেকে করুণ অবস্থা উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের। সমীক্ষার নিরিখে বলা হয় কেবলমাত্র উত্তরপ্রদেশেই রেশন পাননি ১১ হাজার শ্রমিক। ইউপির পাশাপাশি রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক। এই দুই রাজ্যে রেশন না পাওয়া শ্রমিকের হার যথাক্রমে ৯৯ এবং ৯৩ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে কম হলেও দুরাবস্থা রাজধানীতেও। দিল্লি এবং হরিয়ানায় এই হার যথাক্রমে ৫৮ এবং ৬৬ শতাংশ।

দেশের শতকরা ৭০ শতাংশ শ্রমিকই জানান, সরকার আশ্বাস দিলেও জোটেনি খাবার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির বণ্টন করা খাবার যথেষ্ট ছিল না সকলের জন্য। অনেক জায়গায় যেটুকু খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, তা দু-এক দিনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই লকডাউনের হিসাবে তার পরিমাণ যৎসামান্য।

অন্যদিকে কাজ না থাকায় তাঁদের হাতেও রয়েছে অল্প অর্থ। উত্তরপ্রদেশে গড়ে মাথাপিছু শ্রমিকের কাছে রয়েছে ২০০ টাকা। হরিয়ানায় সেই অঙ্ক ৩০০। এই সামান্য অর্থ খরচ করে ফেললে ভিনরাজ্যে থাকাটাই যে দুষ্কর হয়ে উঠবে তাঁদের কাছে। তাই অনেকেরই হাঁড়ি চড়ছে না উনুনে।

অভিবাসী শ্রমিকদের এই শোচনীয় অবস্থার কথা প্রকাশ্যে আশার পরেও কি পাল্টাবে সামগ্রিক ছবি? সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছেন অসহায় এই মানুষেরা। প্রতিনিয়ত দিন কাটাচ্ছেন দুশ্চিন্তায়।