তাঁরা সবাই ‘রাতের রানী’, অবমাননাকে প্রতিবাদে বদলে নিল বাংলাদেশ

কয়েকদিন আগের ঘটনা। বাংলাদেশের খ্যাতনামা অভিনেত্রী পরীমনির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের পুলিশ। লাগু করা হয় মাদক মামলা। এরও কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরও দুই জনপ্রিয় মডেল মৌ এবং পিয়াসা। আর তারপরই তাঁদের ‘রাতের রানী’ অভিধা দেয় বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া। হ্যাঁ, এই শব্দ ব্যবহার হয়েছিল স্পষ্টত চরিত্রহীন কিংবা যৌনকর্মী বোঝাতেই। এবার এই শব্দবন্ধকেই অস্ত্র করে অন্দোলন গড়ে তুললেন বাংলাদেশের অধিকারকর্মীরা।

উল্লেখ্য, মাস দুয়েক আগে ঢাকার এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন পরীমনি। সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে, এমনই দাবি উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাদক মামলার পাশাপাশি পরীমনির দুবাই ভ্রমণ এবং রাজের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও জোরাল হয়েছিল তর্জা। যা এখনও সমানভাবে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই সূত্রেই বার বার ঘুরে ফিরে আসছিল ‘রাতের রানী’ কথাটি। মদ্যপানের অভ্যাস, পোশাক নিয়েও কটূক্তির শিকার হতে হয় তাঁকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তর্জার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন অনেকেই। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলাদেশের সমাজকর্মীদের যুব সংগঠন ‘মেয়ে নেটওয়ার্ক’। তাঁরাই প্রথম ‘রাতের রানী’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে নিজেদের ফেসবুক পেজের ডিসপ্লে পিকচারে। তৈরি করা হয় প্রোফাইল পিকচারের ফ্রেমও। যা আগুনের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট যুব সংগঠন এবং বাংলাদেশের নারী অধিকারকর্মীরা, গণহারে এই শব্দ ব্যবহার করেই নির্বিষ করতে চান তাকে। তাঁদের মতে, ‘রাতের রানী’ মূলত বৃহত্তর শব্দ রাজনীতির অংশ। বাংলা ভাষায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবমাননাকর শব্দগুলি ব্যবহার করা হয় মহিলাদের উদ্দেশ্য করেই। সেখানে দাঁড়িয়ে ‘রাতের রানী’, ‘বেশ্যা’ শব্দগুলির কোনো পুং-প্রতিশব্দ নেই। অর্থাৎ, লিঙ্গই যেন কোথাও গিয়ে নৈতিকতার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আরও পড়ুন
শুধু খেলাই নয়, বারবার রাজনৈতিক প্রতিবাদের মঞ্চও হয়ে উঠেছে অলিম্পিক

এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাই অবমাননাকর শব্দগুলিকেই হাতিয়ার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজকর্মীরা। গোটা নারী সম্প্রদায় নিজেদের এই শব্দবন্ধ দিয়ে চিহ্নিত করলে, ভবিষ্যতে অবমাননাকর চরিত্র হারাবে বলেই বিশ্বাস তাঁদের। তবে এই ডিজিটাল আন্দোলনকে ঘিরেও সমান তালে চলছে ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ’-এর মরাল পুলিশিং। এখন দেখার কত দ্রুত এই ডিজিটাল আন্দোলন গণসচেতনতা গড়ে তুলতে পারে বাংলাদেশের সমাজে, বাংলা ভাষাবৈষম্যে…

আরও পড়ুন
বন্ধ ইন্টারনেট ব্যবস্থা, প্রতিবাদ দমনে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ কিউবা সরকারের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বাঁকুড়ায় উন্নয়নের কোপে কয়েকশো তালগাছ, প্রতিবাদে একজোট গ্রামবাসীরা