বন্ধ ইন্টারনেট ব্যবস্থা, প্রতিবাদ দমনে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ কিউবা সরকারের

বিগত ৫ দিন ধরে উত্তপ্ত কিউবার পরিস্থিতি। আবারও আন্তর্জাতিক শিরোনামে মধ্য-আমেরিকার এই দেশটি। তবে এবারের কারণ কিছুটা আলাদা। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তার নজির কিউবার বিগত ৩ দশকের ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। আর এর মধ্যেই কিউবা সরকারের বিরুদ্ধে উঠে এল আরও একটি অভিযোগ। প্রতিবাদী স্বর দমন করতে এবার সামাজিক মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে সরকার। বেশ কয়েকজন নাগরিকের মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংস্থা ‘নেটব্লক’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, হঠাৎ করে কিউবা থেকে ট্রাফিক কমে গিয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলির ব্যবহার কমেছে। এমনকি বেশ কিছু মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেস থেকে কোনোরকম সিগ্ন্যাল আসছে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, রবিবার সারাদিন ধরে রাজধানী হাভানা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ চলেছে। এই সংঘর্ষে এক প্রতিবাদীর মৃত্যুও ঘটেছে। অন্তত ১৪০ জন প্রতিবাদীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। অবশেষে রবিবার বিকালে প্রতিবাদী জমায়েত ভেঙে দিয়ে কিউবাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু সত্যিই কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে? নাকি বাস্তব চিত্রকে আড়াল করতেই মানুষের গণতান্ত্রিক স্বরকে স্তব্ধ করে রাখতে চাইছে সরকার?

করোনা অতিমারীর প্রথমদিকে কিউবা সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল। এমনকি অন্যান্য দেশের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই অতিমারীর প্রভাব পড়তে শুরু করে অর্থনীতিতে। বিশেষ করে দেশের আয়ের সবচেয়ে বড়ো উৎস পর্যটনশিল্পই বন্ধ। ক্রমশ মূল্যবৃদ্ধি চরমে ওঠে। এই অবস্থায় কিউবার কমিউনিস্ট সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বলেই অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবাদীরা। পাশাপাশি এক-পার্টি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। অন্তত ২০ লক্ষ মানুষ শুধু সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবাদী মঞ্চ। অবশ্য দেশের জনগণের একাংশ এগিয়ে এসেছে সরকারের সমর্থনেও।

কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল অর্থনৈতিক মন্দার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। সেইসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। অবশ্য প্রতিবাদীদের পিছনে মার্কিন ইন্ধনের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। কিউবা সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, আমেরিকার ট্রাম্প সরকার কিউবার বিরুদ্ধে যে সাংকসন জারি করে, তার ফলেই দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কার্যত আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে কিউবার। বাইডেন সরকারও সেই সাংকসন প্রত্যাহারের কোনো গরজ দেখায়নি। বরং কিউবার ভিতরে বিক্ষোভ সংগঠিত করার বিষয়ে আমেরিকা বছরে ২০ লক্ষ ডলার খরচ করে বলেও অভিযোগ তুলেছে কিউবার বিদেশ মন্ত্রক।

আরও পড়ুন
বাদ পড়েছে WHO-এর প্রকল্প থেকে, অবশেষে নিজের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির পথে কিউবা

১৯৯৪ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময় শেষ এমন বড়ো ধরণের প্রতিবাদের সাক্ষী ছিল কিউবা। আবারও সেই দিনগুলিই ফিরে আসছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সেবারে কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিবাদের আগুন নিভে এসেছিল। বরং তাঁরাই হাত লাগিয়েছিলেন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার কাজে। আর কয়েক বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল কিউবা। এবারেও অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলতে সমস্ত মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। কিন্তু মানুষের গণতান্ত্রিক স্বরকে দমন করে কি আদৌ সবার সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হবে? এই প্রশ্ন থেকেই যায়।

আরও পড়ুন
কিউবা-রাজনীতিতে ‘ঐতিহাসিক প্রজন্মে’র ইতি, পদত্যাগ করলেন রাউল কাস্ত্রো

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গানের সূত্রে ঢুকে পড়বে পশ্চিমি পুঁজিবাদ; কিউবায় লেননকে নিষিদ্ধ করলেন ফিদেল কাস্ত্রো