স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় কবিকে নির্মম হত্যা মায়ানমারে

ভালোবাসার জন্য কত কিছুই না করা যায়! বছর আষ্টেক আগের কথা। শুধুমাত্র কবিতাকে ভালোবেসেই মোটা মাইনের চাকরি ছেড়েছিলেন বার্মিজ যুবক খেত থি। ইঞ্জানিয়ারিং জীবন ছেড়ে সোজা ঢুকে পড়েছিলেন সাহিত্যজগতে। তবে কবিতা লিখে তো সংসার চলে না। তাই বিকল্প হিসাবে বেকারির কাজকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কে-ই বা জানত সেই কবিতাই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে একদিন? হ্যাঁ, এমনটাই হল সম্প্রতি। মায়ানমারের খ্যাতনামা এই কবিই প্রাণ হারালেন কবিতায় স্বৈরাচারী শাসকের বিরোধিতা করার জন্য।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই মায়ানমারে চলছে নৃশংসতার খেলা। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আগুন জ্বলছে সে দেশে। সেনা অথবা পুলিশের হাতে প্রাণ গেছে ৭৮০ জন মানুষের। বন্দি কয়েক হাজার। কিন্তু তারপরেও দমিয়ে ফেলা যাচ্ছে না মানুষের সঙ্গবদ্ধ প্রতিবাদকে। চলতে ধর্মঘট, অবস্থান। সেই আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন তারকা ব্যক্তিত্বরাও। অন্যথা হয়নি খেত থি’র ক্ষেত্রেও। অভ্যুত্থানেই শুরু থেকেই প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

গত মাসেই প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করতেই বুদ্ধিজীবীদের নিশানা করেছিল মায়ানমার সরকার। প্রস্তুত করেছিল প্রায় ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের ‘হিটলিস্ট’। তার মধ্যে নাম ছিল খেত থি-এরও। শুধু উপযুক্ত মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল প্রশাসন। 

“ওরা মাথায় গুলি করলেও জানে না বিপ্লব স্পন্দিত বুকে…”

আরও পড়ুন
মায়ানমার ‘গণহত্যাকারী’, অলিম্পিকে বহিষ্কারের দাবি সে-দেশেরই সাঁতারুর

সপ্তাহ খানেক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরোধিতা করে এমনই একটি কবিতা লেখেন তিনি। আর তারপরেই শনিবার তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় সশস্ত্র বাহিনী। জেরার জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়েছিল তাঁর স্ত্রীকেও। শুয়েবো শহরের একটি ক্যাম্পে পৃথকভাবে রাখা হয়েছিল কবি ও কবিপত্নীকে। গতকাল তাঁর স্ত্রী চাও সু ছাড়া পেলেও, বাড়িতে ফিরলেন না তিনি। বরং ফিরল তাঁর নিথর দেহ।

আরও পড়ুন
আশিয়ানের বৈঠকেও অনুচ্চারিত রাজবন্দিদের মুক্তি-প্রসঙ্গ, ক্ষুব্ধ মায়ানমারের নাগরিকরা

যদিও মৃত স্বামীর দেহ পেতেও রীতিমতো হয়রানি হতে হয়েছে চাও সু-কে। সেনা হাসপাতাল থেকে গতকাল জানানো হয়েছিল, হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে স্বামীর মৃতদেহ দেখেই চমকে ওঠেন চাও। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁর হাত-পা। শরীর থেকে বার করে নেওয়া হয়েছে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও। নৃশংস সেই দৃশ্য দেখার পরে, আর মৃত্যুসনদ পড়ে দেখেননি চাও সু। সে-রিপোর্টের তথ্য যে সবটাই সরকারের মনগড়া— তাতে নতুন করে বলার নেই কিছুই।

আরও পড়ুন
গণতন্ত্রের সমর্থনে গান গেয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা মায়ানমারের কিশোরী

তবে শুধু খেত থি নন, এই নিয়ে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলেন মায়ানমারের তিন জন বিশিষ্ট কবি। মার্চেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তাঁর বন্ধু ক’ জা উইন। এবার স্বৈরাচারের শিকার হলেন তিনিও। এই নৃশংসতার শেষ কোথায়, জানা নেই কারোর…

Powered by Froala Editor

More From Author See More