দিল্লির পথ-কুকুরদের ‘আম্মা’ তিনি, অভাবেও দায়িত্ব ছাড়েননি মেদিনীপুরের প্রৌঢ়া

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মতোই বিপর্যস্ত ওরাও। এতদিন যাদের দিন কেটেছে মানুষের সঙ্গেই। একইসঙ্গে বনবাসী জীবন ত্যাগ করেছিল। কিন্তু বিপদের সময় সেই বন্ধুর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না মানুষ। এমনকি অনেক পরিবার থেকে পোষা কুকুরদেরও রাস্তায় বের করে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকেই আবার তুলে এনে নিজের কাছে আশ্রয় দিচ্ছেন দিল্লির ‘আম্মা’ প্রতিমা দেবী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে কুকুরদের জন্যই আশ্রয় গড়ে তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ওরাই তাঁর সন্তান।

দিল্লি নিবাসী প্রতিমা দেবীর জন্ম মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। ১৯৮০-র দশকে তিনি দিল্লি শহরে যান। আর তার পরেই সেখানে রাস্তার কুকুরদের দুরাবস্থা দেখে তাঁর মন কেঁদে ওঠে। তখন থেকেই তাদের জন্য আশ্রয় তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি এই কাজ করতে গিয়ে নিজেও আশ্রয় হারিয়েছেন। ২০০৩ সালে তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু নিজের কর্তব্য থেকে পিছিয়ে আসেননি ‘আম্মা’।

এখন তাঁর আশ্রয়ে ৩০০টির বেশি কুকুর আছে। এই করোনা পরিস্থিতিতেই ২৫টি নতুন কুকুরকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি। কিন্তু যেভাবে আর্থিক দুরাবস্থা গ্রাস করেছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনিও। তাঁর হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয় তাঁর। এর জন্য অবশ্য বেশ কিছু সংস্থা থেকে এবং কিছু মানুষের থেকেও আর্থিক সাহায্য পান তিনি। কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে সেসবও প্রায় বন্ধ। এর মধ্যেই শীতকাল এসে পড়ল। পোষ্যদের জন্য নতুন বাসস্থান দরকার। নাহলে তারা ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে না। অথচ রোজ নিয়মিত খেতে দেওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই প্রতিমা দেবীর। স্থানীয় পৌর সংস্থার কাছে গেলে তাঁরা সাহায্য তো করেননি, উপরন্তু নানাভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হয়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

তবে হতাশ হতে রাজি নন প্রতিমা দেবী। তিনি মনে করছেন, এই সময়টাই তো যুদ্ধের সময়। তাঁকেও যুদ্ধ করতে হবে। অবশেষে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় আসবে মিলিতভাবেই। ততদিন প্রতিমা দেবী শুধু অপেক্ষা করে আছেন, কেউ নিশ্চই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

Powered by Froala Editor