পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ! দুর্ভিক্ষে নাজেহাল মাদাগাস্কার

সারাদিনের সংগ্রহ বলতে কতগুলো পোকা। পরিষ্কার করার মতো জল নেই। তাই পাথরে ঘষে ঘষেই পরিষ্কার করছেন মা। ক্ষুধার্থ ছেলেমেয়েদের মুখে এটুকু তুলে দিতে হবে যে। অনাবৃষ্টির কারণে কৃষিকাজ হয়নি। সঞ্চিত খাবারও সব শেষ। এই পরিস্থিতিতে কিছু জংলি ক্যাকটাস আর পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে রয়েছেন মাদাগাস্কারের মানুষ। সকলেই বেঁচে রয়েছেন, এমনটাও নয়। অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। আর বাকিরা লড়াই করে চলেছেন প্রকৃতির সঙ্গে। যে প্রকৃতিকেও আজ বিপন্ন করে তুলেছে মানুষই। মাদাগাস্কারের এই দুর্ভিক্ষের পিছনেও জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর পৃথিবীর ইতিহাসে সম্ভবত এটাই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্ভিক্ষ।

বিগত ৪ দশকে পৃথিবীর কোথাও এমন ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সমগ্র মাদাগাস্কার দ্বীপজুড়ে খাদ্যের জন্য হাহাকার। এর মধ্যে কিছু কিছু অংশ দুর্ভিক্ষের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিপুঞ্জ। অর্থাৎ সেখানে মানুষের খিদে মেটানোর জন্য গবাদি পশু এমনকি বুনো ফলও নেই। তাই বাধ্য হয়ে পোকামাকড় বা ক্যাকটাসের মতো খাওয়ার অযোগ্য জিনিস মুখে তুলছেন তাঁরা। প্রাণে বাঁচার শেষ চেষ্টা যে মানুষ কখনোই ছাড়ে না। আর এই পর্যায়ের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সংখ্যাও ৩০ হাজারের কম নয়। তবে চাষ-আবাদ না হলে যে পোকামাকড়ও আসে না। বয়স্ক মানুষরা তাই সেই আশাটুকুও ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন প্রাণপণে।

পরিস্থিতি বর্ণনার বাইরে তো বটেই, তার চেয়েও বড়ো কথা এর সমাধানও কেউ জানেন না। বিশেষজ্ঞদের কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের কারণটি হল, মাদাগাস্কার দ্বীপে গ্রিনহাউস এফেক্টের কারণ তেমন নেই। এখানে খুব বেশি জীবাশ্ম জ্বালানিও ব্যবহার করা হয় না। ফলে ধরে নিতে অসুবিধা নেই, পৃথিবীর অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশগুলি থেকেই দূষণ ছড়িয়েছে এখানে। আর ভাগ্যের পরিহাসে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রথম শিকার মাদাগাস্কার। তবে এখনও আশার আলো আছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। মাদাগাস্কার সরকার এবং অন্যান্য দেশগুলি সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমেই আবার কৃষিকাজ শুরু করা সম্ভব। কিছুটা সময় অবশ্য লাগবে। ততদিন ত্রাণের উপরেই নির্ভর করতে হবে মাদাগাস্কারের মানুষদের। কিন্তু আশঙ্কা তবুও থেকেই যায়। আজ মাদাগাস্কারের মতো একটা দ্বীপ শুধু আক্রান্ত। আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই এই মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা পৃথিবীতে। তখন মানুষকে রক্ষা করতে পারবে আধুনিক প্রযুক্তি?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চরম দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্গোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, রিপোর্ট প্রকাশ জাতিসংঘের