কেন ‘অ্যাবোমিনেল মিস্ট্রি’ গোপন করেছিলেন ডারউইন? প্রকাশ্যে এল কারণ

বিবর্তনবাদে প্রবক্তা তিনি। তবে শেষ বয়সে নিজেই সংশয়ে ছিলেন ডারউইন। তাঁকে চিন্তায় রেখেছিল গাছের বিবর্তনের এক সমাধান না হওয়া রহস্য। ঘনিষ্ঠদের চিঠি লেখার সময় সেই সমস্যাকে ‘অ্যাবমিনেবল মিস্ট্রি’ বা অনির্বচনীয় রহস্য হিসাবেই বর্ণনা করেছিলেন। যদিও সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে চাননি তিনি। কিন্তু কেন সমস্যা বিজ্ঞানীমহলের থেকে গোপন করতে চেয়েছিলেন স্বয়ং ডারউইন? সম্প্রতি উত্তর মিলল সেই প্রশ্নের।

জবা, গাঁদা কিংবা রজনীগন্ধা থেকে শুরু করে ওক, ফার এমনকি ওয়াটার লিলির মতো গাছও বংশবৃদ্ধি করে মূলত ফুলের ওপর নির্ভর করেই। যাদের বলা হয় অ্যাঞ্জিওস্পার্ম। জীবাশ্মের নিরিখে দেখতে গেলে ১০ কোটি বছর আগে ক্রেটাসিয়াস যুগে হঠাৎ করেই জন্ম নিয়েছিল এই প্রজাতির উদ্ভিদ। তার আগে এই ধরণের গাছের কোনো উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যায়নি কোনোভাবে। 

এই ঘটনাই ভাবিয়ে তুলেছিল ডারউইনকে। কারণ বিবর্তনবাদের নিরিখে এর মধ্যবর্তী কোনো অবস্থা পাওয়া আবশ্যিক। ১৮৮১ সালের আগস্ট মাসে মৃত্যুর ঠিক এক মাস আগে সেই চিঠিতে বন্ধুস্থানীয় উদ্ভিদবিদ জোসেফ হুকারকে ডারউইন লিখেছিলেন প্রাণী নয়, বরং উদ্ভিদ জগতই অদ্ভুত রহস্যময়। সেই ধাঁধাঁ সমাধানে ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করে নেন ডারউইন। 

সম্প্রতি রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনের লাইব্রেরিতে ১৮৭৭ সালের লেখা একটি ডায়েরি উদ্ধার করেন গবেষকরা। যেটি স্কটিশ উদ্ভিদবিদ প্রফেসর উইলিয়াম ক্যারুথার্সের। যিনি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে চর্চা করতেন প্যালিওবোটানির। তিনি ফুলের এই হঠাৎ আবির্ভাবের কারণ হিসাবে বর্ণনা করেন ঈশ্বরের সৃষ্টিকে। যা তৎকালীন বৈজ্ঞানিক প্রেসে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে। বলাই বাহুল্য এই তত্ত্ব একেবারেই অযৌক্তিক বিজ্ঞানমহলে। তবে ক্যারুথার্সের বৃহত্তর পরিকল্পনা ছিল ডারউইনের বিবর্তনবাদকে ভুল প্রমাণ করা। যা লিপিবদ্ধ রয়েছে তাঁর ডায়েরিতে। 

এই পরিকল্পনা এবং সম্ভাবনার কথা নিজেও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ডারউইন। সমাধান না করতে পারার দুঃখ এবং বিবর্তন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হওয়ার আশঙ্কা— এই দুই কারণে উদ্ভিদ জগতের এই রহস্যকে প্রকাশ করেননি ডারউইন। তবে বন্ধুকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ তিনি করেছিলেন এমন কোনো অজানা দ্বীপের সন্ধান নিশ্চয়ই মিলবে যেখানে উদ্ভিদ ফুলের বদলে আয়ত্ত করেছে বংশবিস্তারের নতুন পথ। 

ডারউইনের রহস্য গোপনের কারণ এতদিন পর প্রকাশ্যে আসলেও আজও অন্ধকারে সেই রহস্যের কারণ। যার উত্তর দিতে পারেনি বিজ্ঞান। এমন কোনো উদাহরণ বা জীবাশ্মের নমুনাও খুঁজে পাননি গবেষকরা আজ পর্যন্ত। হয়তো তার যবনিকা পতনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক শতক...

আরও পড়ুন
দ্বীপ অঞ্চলে পতঙ্গদের অদ্ভুত অভিযোজন, প্রায় দেড় শতক আগেই কারণ বলেছিলেন ডারউইন

Powered by Froala Editor