মৃত্যুর ১৪০ বছর পর প্রমাণিত ডারউইনের তত্ত্ব, পথ দেখাচ্ছে প্রাণী সংরক্ষণেও

একসময় মনে করা হত, ইউরোপীয়রা নাকি মানুষের উন্নততর প্রজাতি। আর আফ্রিকার মানুষরা হল সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রজাতি। এই বক্তব্যের পিছনে অনেক বৈজ্ঞানিক যুক্তিও দেওয়া হত। আর তাই আফ্রিকা থেকে মানুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রীতদাস করে রাখা হত। হবে নাই বা কেন! মানুষ তো ঘোড়া-বলদকে গাড়ি টানার কাজে ব্যবহার করে, গাধার পিঠে চাপিয়ে মাল বয়ে নিয়ে যায়; সে তো কেবল প্রজাতি হিসাবে মানুষ এগিয়ে আছে বলেই। আর এই যুক্তিটাই পছন্দ হয়নি তাঁর। তাই বেরিয়ে পড়লেন বৈজ্ঞানিক সত্যের সন্ধানে। তারপর তো বিখ্যাত হয়ে গেল সেই গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ আর সেই জাহাজ এইচ. এম. এস. বিগল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশের পরই সাড়া ফেলে দিল তাঁর বই, 'অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস'।

আরও পড়ুন
দ্রুতহারে কমছে পাখিদের সংখ্যা, সংরক্ষণ প্রয়োজন শতাধিক প্রজাতির

হ্যাঁ, কথা হচ্ছে চার্লস ডারউইনকে নিয়ে। জিন বা বংশগতির কোনো ধারণা ব্যতিরেকেই বিবর্তনের ধারা বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। যদিও সেইসময় প্রায় কেউই বিশ্বাস করেনি তাঁর কথায়। এমনকি আজও তাঁর অনেক বক্তব্যই প্রমাণিত হয়নি। তাই ডারউইনের মতামতকে এখনও তত্ত্ব বলা হয়।

আরও পড়ুন
বিরল প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণই লক্ষ্য বিচিত্রানন্দের

তারপর বহু বছর কেটে গিয়েছে। ডারউইন মারা গিয়েছেন, তাও প্রায় ১৪০ বছর হল। তবে তাঁর বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক মেটেনি এখনও। 'প্রকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতি' বলে তিনি যে পদ্ধতিটির কথা বলেছেন তার অনেকটাই প্রমাণিত হয়েছে। আর বাকিটা নিয়েও গবেষণা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যেই প্রকাশ পেল আর একটি গবেষণাপত্র। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির 'প্রসিডিংস' পত্রিকায় প্রকাশিত সেই গবেষণাপত্রে ডারউইনের বেশ বিতর্কিত একটি মতকে স্বীকৃতি দিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লোরা ভান হলস্টাইন। ডারউইন মনে করতেন স্থলভাগের দুর্গম ভূপ্রকৃতির জন্যই এখানে প্রজাতির সংখ্যা অনেক বেশি। আর একটি প্রজাতির মধ্যে উপপ্রজাতির সংখ্যাও কম। তবে একটি প্রজাতি থেকে দুটি পৃথক প্রজাতির উৎপত্তির প্রসঙ্গে ভূপ্রকৃতির কোনো ভূমিকা থাকে কিনা, তা এতদিন প্রমাণ করা যায়নি। আর সেই কাজটাই করে দেখালেন ভান হলস্টাইন।

আরও পড়ুন
জলজ প্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বিয়াস নদীতে, ভারতে প্রথম

হলস্টাইনের এই গবেষণা যে শুধু ডারউইনকে স্বীকৃতি দিল, তাই নয়। সেইসঙ্গে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত বেশ কিছু সূত্রও উঠে এসেছে তাঁর গবেষণায়। তাঁর মতে, একটি প্রজাতির মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপপ্রজাতির মধ্যে প্রজনন সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে প্রজাতিটির বেঁচে থাকার সম্ভবনা অনেক বাড়বে। তবে তাদের বাসস্থান নিরাপদ করতে না পারলে যদিও কিছুই সম্ভব নয়, সেকথা বলতে ভোলেননি হলস্টাইন। অতএব সবার আগে প্রয়োজন বনভূমি সংরক্ষণ। তবে এই কয়েক বছরের মধ্যেই যেভাবে একের পর এক প্রাণী সংকটের কথা উঠছে, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে একে একে; তখন হলস্টাইনের এই গবেষণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে ডারউইনের তত্ত্বের একটি বিতর্কিত দিক প্রমাণিত হওয়াই উচ্ছসিত বিজ্ঞানীরাও।