দ্বীপ অঞ্চলে পতঙ্গদের অদ্ভুত অভিযোজন, প্রায় দেড় শতক আগেই কারণ বলেছিলেন ডারউইন

পেরিয়ে গেছে প্রায় দেড় শতক। আবারও প্রমাণিত হল, বিবর্তনের তত্ত্বের বিষয়ে ঠিক কতটা নির্ভুল ছিলেন চার্লস ডারউইন। পতঙ্গ বলতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডানার উপস্থিতি এবং উড়ানের ক্ষমতা মাথায় আসে। তবে ডারউইনই প্রথম জানিয়েছিলেন বিশেষত দ্বীপ-অঞ্চলগুলিতে ওড়ার ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে বর্জন করে পতঙ্গরা। উপস্থাপনা করেছিলেন তার কারণও। সাম্প্রতিক গবেষণা মিলিয়ে দিল সেই তত্ত্বই।

অ্যান্টার্কটিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে অবস্থিত ছোট ছোট দ্বীপগুলিতে এক অদ্ভুত অভিযোজন লক্ষ্য করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বলাই বাহুল্য, তা পতঙ্গদের ক্ষেত্রে। নজরে এসেছিল মাছি, মথ কিংবা প্রজাপতির মতো সন্ধিপদ প্রাণীরা ওড়ে না এইসব দ্বীপগুলিতে। বরং পায়ে হেঁটে বেড়ায় গাছে গাছে। প্রায় দেড়শো বছরেরও বেশি সময় আগে ডারউইন জানিয়েছিলেন, হাওয়ার গতিবেগ বেশি থাকার কারণে পতঙ্গের উড়তে সমস্যা হয় এইসব অঞ্চলে। হাওয়ার চাপে দিকভ্রান্ত হয়ে সমুদ্র পড়ে আশঙ্কা তৈরি হয় তাদের প্রাণহানির। আর সেই কারণেই ডানার ব্যবহার ধীরে ধীরে বর্জন করেছে দ্বীপিপুঞ্জে বসবাসকারী পতঙ্গ প্রজাতিরা। তাদের ক্ষেত্রে ডানা উপস্থিত থাকলেও, তা নিষ্ক্রিয়।

ডারউইনের এই তত্ত্বকে ‘ভাঁওতা’ বলেই অস্বীকার করেছিলেন উদ্ভিদবিদ জোসেফ হুকার। পরবর্তীকালে অন্যতম প্রাণীবিজ্ঞানীরাও বেছে নিয়েছিলেন হুকারের মতামতকেই। তবে সম্প্রতি আর্কটিক সার্কেল অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জের পতঙ্গদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি বিষদ তথ্য তালিকা প্রস্তুত করেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই গবেষণাতেই দেখা যায় গর্জনশীল চল্লিশা এবং ক্রোধন্মত্ত পঞ্চাশ অঞ্চলেই এই অভিযোজন হয়েছে সর্বোচ্চ। এমনকি এই অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত দ্বীপগুলিতেই যেকোনো পতঙ্গের ওড়বার ক্ষমতা অবলুপ্ত হয়েছে।

পর্যবেক্ষণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, পৃথিবীর এই অঞ্চলে সমুদ্রবায়ুর বেগ সবথেকে বেশি হওয়ায় পতঙ্গদের এই ধরণের অভিযোজন। পাশাপাশি পতঙ্গদের চরিত্র বিশ্লেষণেও উঠে আসে বায়ুর তীব্র গতিবেগের কারণে পতঙ্গদের পেশিও অচল হয়ে যায় অনেক সময়েই। সেইসঙ্গে অধিক শক্তিক্ষয় তো হয়ই! এই সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে বাঁচাতেই অদ্ভুত পথ বেছে নিয়েছে পতঙ্গরা। 

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক রাচেল লেহির তত্ত্বাবধানেই চলে এই গবেষণা। জড়িয়ে ছিলেন অধ্যাপক স্টিভেন কাওনও। প্রায় দেড় শতক ধরে চলতে থাকা রহস্যের সমাধান করলেন তাঁরা। তবে বহু যুগ আগেই সেই সমাধান খুঁজে দিয়েছিলেন চার্লস ডারউইন। দুই গবেষকই উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র কিংবদন্তি জীববিদের দূরদর্শিতাকেই প্রমাণ করতে পেরেছেন তাঁরা। আসলে এই গবেষণা তার থেকে বেশি কিছুই না...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
নিখোঁজ ডারউইনের পাণ্ডুলিপি, ২০ বছর পর প্রকাশ্যে এল তথ্য