সদ্যোজাত যিশুকে দেখতে বেথেলহেমে হাজির এক ভারতীয়?

আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেকার কথা। জেরুসালেমের একটি ছোট্ট ঘরে জন্ম নিয়েছিল ফুটফুটে এক শিশু। কালে কালে সে বড়ো হল; একসময় ওর কথা, নাম ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বের সর্বত্র। মানুষকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি দিতে এসেছে ও। সমস্ত খারাপ জিনিসগুলো নিজের কাঁধে নিয়ে, নিজে অত্যাচার সহ্য করল। তারপর গোটা জগতে শুরু হল একটি নতুন ধারার। শুরু হল খ্রিস্ট ধর্মের। আর মানুষটি কে, সেটা আর বলার দরকার নেই।

যিশুখ্রিস্ট, তাঁর জীবন, কাজ ও খ্রিস্ট ধর্মের কথা সবাই কমবেশি জানেন। কিন্তু, যিশুর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা? খানিক অবাক লাগতেই পারে। এর জন্য একটি ঘটনা বলা দরকার। বাইবেলে বর্ণিত এই ঘটনাটি অত্যন্ত বিখ্যাত। যিশুর জন্ম-মুহূর্তে একটি তারা আকাশে জ্বলজ্বল করছিল। নতুন একটি তারা! সবাই রীতিমতো অবাক। এই ছেলেটি জন্মের পরই এমন ঘটনা ঘটল! কী ইঙ্গিত দিচ্ছে? এত কিছু ভাবতে ভাবতে বেথেলহেমে চলে এলেন তিনজন ব্যক্তি। পরিচয় জিজ্ঞেস করতে বললেন, তাঁরা প্রাচ্যের দেশ থেকে এসেছেন। আকাশের এই উজ্জ্বল তারা তাঁদের পথ দেখিয়েছে। তাঁরা দেখতে এসেছেন এই সদ্যোজাত শিশুটিকে, যে পরে ইহুদিদের রাজা হবে! 

চেনা লাগছে না ঘটনাটা? ছোটো থেকে অনেকবারই শোনা হয়েছে এটি। কিন্তু প্রশ্ন হল, ওই তিনজন ব্যক্তি কে ছিলেন? নিউ টেস্টামেন্টে এঁদের সম্পর্কে সেরকম কিছু বলা হয়নি। তবে অনেকের ধারণা, এই তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন ভারতের! পুরনো গ্রিক লেখায় যাকে বর্ণিত করা হয়েছে ‘ক্যাসপার’ মতান্তরে ‘গ্যাসপার’ হিসেবে। তিনি ভারতের এক রাজা ছিলেন। সত্যিই কেউ গিয়েছিলেন কিনা, ভালোমতো জানা যায়নি। কিন্তু ঐতিহাসিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আরেকটি দিকে। যিশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন সেন্ট থমাস। তিনি ভারতে এসেছিলেন এক রাজার দরবারে। ইতিহাস যাকে চেনে ‘গণ্ডোফেরাস’ নামে। 

এখান থেকে চলে আসা যাক প্রাচীন ভারতে। শকরা যখন ভারতে রাজপাট চালাচ্ছিল, তখন আরও একটি সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছিল দেশের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে। হ্যাঁ, পল্লব বংশ। মূলত ইরানের একাংশ, আফগানিস্তান ও ভারতের এই বিশেষ অঞ্চলেই ছিল এঁদের মূল প্রভাব। এঁদেরই প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম গণ্ডোফেরাস। শকদের যুদ্ধেও পরাজিত করেন তিনি। ভারতের সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তাঁর নাম ও অবদান অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু সেসব অন্য প্রসঙ্গ। গোটা বিশ্বের সামনে আসল প্রশ্ন একটাই, এই গণ্ডোফেরাসই কি যিশুর জন্মের সময় বেথেলহেমে গিয়েছিলেন? 

সঠিক বা যাকে বলে অকাট্য প্রমাণ, সেসব এখনও পাওয়া যায়নি। কতগুলি ধারণার ওপর ভিত্তি করে এটি বলা হয়। আগেই গ্রিক পুরাণ ও বিভিন্ন পুঁথির কথা বলা হয়েছে। সেখানে যে নাম পাওয়া গেছে সেটি ক্যাসপার বা গ্যাসপার। তৃতীয় শতকে লেখা সিরিয়ার একটি গ্রন্থে লেখা হয়েছিল, যিশুর কাছের শিষ্য সেন্ট থমাস যে রাজার সভায় এসেছিলেন, তাঁর নাম ‘গুডনাফার’। এখান থেকে ঐতিহাসিকদের ধারণা, এই গুডনাফারেরই গ্রিক অপভ্রংশ হল গণ্ডোফেরাস। যেখান থেকে এসেছে গ্যাসটাফার, পরে ক্যাসপার বা গ্যাসপার। এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় রাজা ‘ক্যাসপার’-এর রাজ্যের নাম বলা হয়েছে ‘এগরিসিল্লা’ হিসেবে। এখান থেকেও গবেষকদের প্রশ্ন, এই ‘এগরিসিল্লা’ কি তক্ষশিলা’র অপভ্রংশ? যে তক্ষশিলা রাজা প্রথম গণ্ডোফেরাসের রাজধানী ছিল? 

এখনও অবধি সবই ভাবনার পর্যায়। সবই তথ্য ও তত্ত্বের মিশ্রণ। এখান থেকেই হয়ত সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। বা নতুন কোনো কিছু অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য। ভারত আর যীশুর এই রহস্য হয়তো তাতে পূর্ণতা পাবে। 

আরও পড়ুন
যিশুর জন্মস্থানের কাছেই উদ্ধার অসংখ্য শিশুর কঙ্কাল, বাইবেলেই আছে গোপন রহস্যের ইঙ্গিত

Powered by Froala Editor

More From Author See More