উচ্চতা পাঁচ ফুট, গায়ের রং শ্যামলা - এমনই ছিলেন যিশু, প্রমাণ বিজ্ঞানীদের

পাশ্চাত্য চিত্রশিল্পে বারবার ফিরে এসেছেন তিনি। সেখানেই দেখেছি তাঁর স্বর্গীয় রূপ। আর হবে নাই বা কেন! তিনি তো যে সে মানুষ নন। তিনি যে ঈশ্বরের সন্তান! গোটা পৃথিবীবাসীকে মুক্তির বার্তা দিতে এসেছিলেন; বদলে নিজে যন্ত্রণা পেয়ে গেলেন। হ্যাঁ, সেই যিশুর কথাই হচ্ছে। কিন্তু আমরা যেভাবে তাঁকে দেখে এসেছি, তাঁর রূপ কি আদতে সেরকমই? এই প্রশ্নটাই উঠিয়ে দিল আধুনিক প্রযুক্তি। ঐতিহাসিকদের গবেষণার ভিত্তিতে সেখানে ফুটে উঠল যিশুর ভার্চুয়াল মুখ; যা আমাদের চিরাচরিত ধারণার সঙ্গে একেবারেই মেলে না!

আরও পড়ুন
‘২৫ ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন নয়’, ক্রিসমাস উদযাপনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন খোদ খ্রিস্টানরাই

ঘন নীল চোখ। লম্বা বাদামি চুল এলিয়ে পড়েছে ঘাড়ের ওপর। ফর্সা, যেন গোটা শরীরেই নেমে এসেছে স্বর্গীয় দ্যুতি। হাতে পেরেকের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আশ্বাস দিচ্ছেন যিশু। রেনেসাঁ’র সময় ইউরোপের অনেক শিল্পীর আঁকাতে এই রূপই দেখে এসেছি সবাই। গির্জার ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তিতেও সেই একই আভা। কিন্তু জেরুসালেমের একটি দরিদ্র ঘরে জন্মানো ছেলের মূর্তি এত নায়কোচিত হবে? অনেকটা ইউরোপীয় ছাপ এসে যাচ্ছে না? কিন্তু ভ্যাটিকান-সহ সমস্ত জায়গায় যে যিশুকে ওই রূপেই দেখা হচ্ছে!

আরও পড়ুন
মিউজিয়ামে রাখা ডেড সী স্ক্রোলের প্রতিটি খণ্ডই নকল, গবেষণায় চাঞ্চল্য

এরই মধ্যে আরও একটি জিনিস সামনে এল। ‘শ্রাউড অফ তুরিন’। একটি লম্বা মসলিনের খণ্ড। দেখে বেশ প্রাচীন বলেই মনে হয়। কিন্তু মামুলি জিনিস নয়। সেখানে যেন কীসের একটা ছাপ আছে! ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে, একটি মানুষের। যেন এই লম্বা মসলিন দিয়ে কাউকে জড়ানো হয়েছিল। মাথায় সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবে একটি ঘটনা। ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মরদেহ যখন নামানো হয়েছিল, তখন সেই রক্তমাখা দেহটা একটি মসলিনে জড়িয়ে গুহার ভেতর রেখে আসা হয়েছিল। এটা কি সেই মসলিন? যে অবয়বটা দেখা যাচ্ছে, তাঁর যে মুখ, সেটাকে যিশু বলেই তো মনে হচ্ছে! সেই লম্বা চুল, দাড়ি! কিন্তু বিজ্ঞানী, ঐতিহাসিক গবেষকরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। এটি ভুয়ো, এমনও প্রমাণ করার দিকে ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু খোদ ভ্যাটিকান যে এটাকে পবিত্র ও ‘আসল’ বলে মনে করে! কাজেই, এখানেও বাধা…

আরও পড়ুন
ছবির নির্দেশ দিচ্ছেন পোপ, বিরক্ত মিকেলেঞ্জেলো ‘শায়েস্তা’ করলেন হাতুড়ি দিয়ে

এরপরই এল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফেস রেকগনিশনের সিস্টেম আমরা প্রত্যেকেই শুনেছি। সেই সঙ্গে যুক্ত হল সিজিআই টেকনিক। ঐতিহাসিকদের গবেষণা, প্রত্ন প্রমাণ সমস্ত কিছু মিলিয়ে সেখানে তুলে ধরা হল সেই সময়ের জেরুসালেমের ছেলেটির মুখ। সমস্ত ধারণার উল্টোদিকে তৈরি হল সেটা। সেই গবেষণা অনুযায়ী, যিশুর উচ্চতা পাঁচ ফুটের কাছাকাছি। ফর্সা তো নয়, বরং খানিক শ্যামলা। চুলও লম্বা নয়; ছোটো, কালো। যিশুর এমন ছবি কি কল্পনায় এসেছিল? কিন্তু চোখে যেন সেই অদ্ভুত দ্যুতি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই সময়ের কাছাকাছি যে সমস্ত খুলি বা হাড় পাওয়া গেছে; সেই নিয়েই গবেষণা করেছেন তাঁরা। তারপরই এমন একটি জায়গায় এসে পৌঁছেছেন।

আরও পড়ুন
ক্রিসমাসের দিন, বন্দুক নামিয়ে বিশ্বযুদ্ধের ময়দানেই আলিঙ্গন দুই প্রতিপক্ষের

সে তো পৌঁছেছেন। অনেকে চমৎকৃতও হয়েছেন। কিন্তু বৃহত্তর মঞ্চে কি এমন ‘কালো যিশু’কে গ্রহণ করা হবে? ভ্যাটিকান কী বলবে? ‘শ্রাউড অফ তুরিন’-এর অস্তিত্বই বা কোথায় যাবে? প্রশ্ন, দোলাচল সমস্ত কিছুর কেন্দ্রে আবারও দাঁড়িয়ে যিশু। তার মধ্যেই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সবাইকে…