কোভিড-১৯এর ওষুধের সন্ধানে প্রাথমিক সাফল্য, গবেষণায় যুক্ত এক বাঙালিও

আমাদের দেশ তো বটেই, সারা পৃথিবীর কাছে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনা। সংক্রমণ আটকাতে গৃহবন্দি প্রায় সকলেই। কিন্তু একবার সংক্রমণ ঘটে গেলে আর রক্ষা নেই। একটু একটু করে আমাদের শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে বংশবিস্তার করতে থাকবে করোনা ভাইরাস। এর হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়, বিজ্ঞানের পরিভাষায়, ভাইরাসের 'হোস্ট এনজাইম'কে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। কাইমোট্রিপসিন-লাইক (থ্রি-সিএল) হল সেই এনজাইম। একধরনের প্রোটিএজ অর্থাৎ প্রোটিন-সংশ্লেষক।

আরও পড়ুন
সেরে উঠেছেন লক্ষাধিক মানুষ, করোনা-আক্রমণের বিপরীতে আশার আলো

কিন্তু কীভাবে নিষ্ক্রিয় করা যায় এই এনজাইমকে? হায়দ্রাবাদে অবস্থিত টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের জীবন বিজ্ঞান গবেষণাগারে বসে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর চারজনের সেই দলে ছিলেন একজন বাঙালিও। নাম অরিজিৎ রায়। বঙ্গবাসী কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং তারপর খড়গপুর আইআইটি থেকে পড়াশুনো শেষ করে এখন আর্টিফিসিয়াল ড্রাগ মডেলিং বিষয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার কাজ করেছেন ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎ গবেষণা কেন্দ্র, স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানে। আর টিসিএসে তাঁর সঙ্গে গবেষণা করছিলেন আরও ৩ জন। নভনীত বাঙ্গ, সৌম্য রামাস্বামী এবং গোপালকৃষ্ণ বুলাসু।

আরও পড়ুন
করোনার টেস্ট কিট তৈরি করল ভারত নিজেই, মাত্র ৬ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় সাফল্য

তাঁদের গবেষণার ফল কিন্তু মানুষকে নিরাশ করল না। বরং বলা ভালো চারিদিকে নিরাশার মাঝে খানিকটা আশার আলোই দেখাল। কম্পিউটারের সামনে বসে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে তৈরি করে ফেললেন ৩১টি কাল্পনিক যৌগ। এই যৌগোগুলির যেকোনো একটি যদি ওয়েট-ল্যাবে তৈরি করে ফেলা যায়, তাহলেই সেই ওষুধ থ্রি-সিএল উৎসেচককে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারবে।

আরও পড়ুন
ইতালির মৃত্যুমিছিল রুখতে এগিয়ে এলেন কিউবার ডাক্তাররা, সার্বিয়াকে সাহায্য চিনের

সিএসআইআরের ল্যাবরেটরিগুলিতে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে জোর কদমে। খুঁজে দেখা হচ্ছে, প্রকৃতির মধ্যে থাকা কোন উপাদানের সঙ্গে এই যৌগগুলির সাদৃশ্য আছে। ইতিমধ্যে খানিকটা ইতিবাচক ফলাফলও পাওয়া গিয়েছে। অন্তত দুটি মডেলের সঙ্গে অরেন্টামাইড নামের একটি প্রাকৃতিক উৎসেচকের ভালোরকম সাদৃশ্য আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই উৎসেচকটি পাওয়া যায় পাইপার অরেন্টিকাম নামের একটি পানজাতীয় গাছ থেকে। বাংলায় যাকে 'রেণুক' বলে ডাকা হয়। তবে ওয়েট ল্যাবে হাতেকলমে কোনো একটি যৌগ প্রস্তুত করা গেলে, তবেই তৈরি হবে ওষুধ। তারপর বিভিন্ন প্রাণীদেহের উপর পরীক্ষা করে অবশেষে মিলবে ছাড়পত্র। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। অরিজিৎ রায়রা তো শুধু প্রথম পদক্ষেপটুকু এগিয়ে দিলেন। তবে এটুকুই বা কম কী? অন্তত কোভিড-১৯এর চিকিৎসা যে অসম্ভব নয়, সেই কথাই প্রমাণিত হল এই গবেষণায়।