বোর্ড পরীক্ষায় তামিলনাড়ুর স্কুলে প্রথম স্থান নোমাডিক জনগোষ্ঠীর ছাত্রীর

নোমাডিক জনগোষ্ঠী। আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসা এক উপজাতি। তামিলনাড়ুর এই উপজাতির মূল উপার্জনের পথ ভাগ্যগণনা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ভাগ্যগণনা করেই দিন চলে তাঁদের। মেলায় বা উৎসবে সামান্য আয় হলেও সাধারণত দারিদ্র্যই তাঁদের নিত্যসঙ্গী। পিছিয়ে পড়া এই জনজাতির মেয়ে দেবযানীই এবার আনল সর্বোচ্চ নম্বর। তিরুপারানকুনদ্রাম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এই সপ্তাদশী দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৫০০। 

দেবযানীর ফলাফলে উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষ এবং তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলের মেধাবী ছাত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিল দেবযানী। তবে তার লড়াইটা সহজ ছিল না খুব একটা। বরং তার পরিবেশটাই ছিল একেবারে ভিন্ন। বাড়ি নেই কোনো এই সপ্তাদশীর। ছোট্ট তাঁবুর মধ্যেই তার বসবাস। নেই ইলেকট্রিসিটিও। তাও পড়াশোনাতে কোনো রকম আপোসকরেনি দেবযানী। এসবের মধ্যেই তাঁকে পরিবারের সঙ্গে মাঝেমাঝেই ঘুরে বেড়াতে হত সারা কুদুকুদুপ্পু শহরে। জীবিকার জন্যই। কখনো আয় হত ৩০০টাকা। কখনো খালি হাতেই ফিরতে হত তার পরিবারকে। সামান্য এক কাপ চা খেয়েই নিরন্ন থেকেই দিন কেটেছে তার বাবা-মার। সে কথাও জানায় দেবযানী। আর এই পরিস্থিতিই যেন তার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিল অদম্য এক জেদ।

পড়াশোনা এবং পারিবারিক সংস্কৃতির পাশাপাশিই বাধ্য হয়ে উপার্জনের অন্য উপায় খুঁজেছিল দেবযানী। পড়াশোনার পাশে বাড়িতে অবসর সময়ে বেতের নকসা করা ঝুড়ি বানাত দেবযানী। মাত্র ২৫০ টাকায় সেই ঝুড়ি বিক্রির ওপরেও ভরসা রাখতে হত দরিদ্র পরিবারকে।

তবে এই দারিদ্র্য, অভাবের মধ্যে যেন কোনোভাবে দেবযানীর পড়াশোনা আটকে না যায় তাতেই এগিয়ে এসেছেন অঞ্চলের অন্যেরা। নোমাডিক জনগোষ্ঠীর টেন্ট সমিতির সভাপতি জানিয়েছেন, আর্থিকভাবে সমস্তরকম সাহায্য করবেন তিনি দেবযানীর পড়াশোনায়। নিজে লেখা-পড়া না জানলেও, শহরের ভালো কলেজে ভর্তি করবেন দেবযানীকে। পাশাপাশি আদি জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার পরেও দেবযানীদের পরিবারের নেই কোনো সরকারি সার্টিফিকেট। কিছু পরিবার স্বীকৃতি পেয়েছে সরকারের থেকে। কিন্তু এখনও প্রায় ১৫টি পরিবার বঞ্চিত এই স্বীকৃতি থেকে, সুযোগ-সুবিধা থেকে। দেবযানীর পরিবারের সরকারি সার্টিফিকেটের জন্যেও লড়বেন বলে জানান টেন্ট সমিতির সভাপতি।

আরও পড়ুন
পরীক্ষা আসছে, পরীক্ষা যাচ্ছে; ‘শিক্ষিত’ হচ্ছি কি?

দেবযানীর এখন একমাত্র লক্ষ্য উচ্চশিক্ষায় ভাল পড়াশোনা করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। তাঁর স্বপ্ন সে একদিন কাজ করবে কোনো ব্যাঙ্কে। সামলাবে বাণিজ্যিক হিসাব। সেই দক্ষতা অর্জন করাই এখন পাখির চোখ তার। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই দেবযানী কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করবে বলে জানিয়েছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
উচ্চমাধ্যমিকের পর, এবার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষাও স্থগিত রাজ্যে