ঠাঁই শিয়ালদা প্ল্যাটফর্মে, ফাঁকা ট্রেনেই সন্ধের পড়াশুনা সেরে নেয় এই কিশোর

প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্য পায় বলেই মানুষ আজও স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়নি। সে আজও বিশ্বাস করে, চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। হয়তো সুমনের ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ গানটি শোনেনি সবাই। কিন্তু নিজের মতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, আরেকটু ভালো হওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন
গায়ক হতে চান এই ডেলিভারি বয়, দেখুন ভিডিও

এমনই একজন অর্জুন দাস। ১১-১২ বছর বয়স। পড়ে ক্লাস সেভেনে। অথচ মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই কোনো। রাত কাটে শিয়ালদা স্টেশনেই, পরিবারের সঙ্গে। হয়তো দক্ষিণে কোথাও যেতে হয় জীবিকার প্রয়োজনে। হয়তো স্টেশনের ভিড় এড়াতে ফাঁকা ট্রেনেই সন্ধের পড়াশুনা সেরে নেয় সে। আমাদের তা জানা নেই।

জানতেন না প্রবীরবাবুও। প্রবীর ভট্টাচার্য। শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার একটি ট্রেনে তিনি গত বৃহস্পতিবার দেখেন অর্জুনকে। তখন রাত ন’টা। শিয়ালদার দিকে ছুটছিল ট্রেনটি। একটি স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে প্রবীরবাবু লক্ষ করেন, ফাঁকা কামরার মেঝেতে বসে একটি ছেলে বইখাতা খুলে পড়াশুনা করছে এক মনে। পাশের সিটে শুয়ে তার মা ও বোন। প্রবীরবাবু জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন ছেলেটির পরিচয়। তারপর, অর্জুনের ছবি তুলে পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেই পোস্টেই প্রবীরবাবু লেখেন অর্জুনের সম্পর্কে। জানতে পারেন, এমনটা সে করে থাকে প্রায়ই। তার পড়াশুনার নিবিষ্টতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

অবাক হয়েছি আমরাও। যেখানে হাজারো স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছ্বলতা সত্ত্বেও পড়াশুনায় অনীহা ও টোকাটুকির খবর হেডলাইন হয় মাঝেমধ্যেই, সেখানে অর্জুনের মতো ছেলে আমাদের কাছে আদর্শ। অর্জুন পড়তে চায়। বড় হয়ে, বেরিয়ে আসতে চায় অভাবের জীবন থেকে। আমাদের মধ্যবিত্ত গতানুগতিকতার মুখে সপাট চড় হয়ে আসে অর্জুনের এই পাঠ-দৃশ্য। কোনোভাবেই কি তার এই একাগ্রতাকে সম্মান জানাতে পারি না আমরা?

ছবি ঋণ - ফেসবুক