খাদ্য উৎপাদনে সংকট রুখতে 'বীজ ব্যাঙ্ক' নেপালে

বোরো এবং আমন— বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই দুই ধরনের ধানেরই চাষ হয়। তাছাড়াও বর্তমানে বারোমাস্যা ধানের বীজও এসেছে বাজারে। তবে নেপালের পার্বত্য অঞ্চলে বিষয়টা একটি অন্যরকম। জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ধান রোপণ করা হয় সেখানে। এই ধানই সংরক্ষিত হয় সারা বছরের জন্য। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) জেরে ধীরে ধীরে অনিয়মিত হয়ে উঠছে বর্ষা। প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। খাদ্যের সরবরাহ বজায় রাখতে তাই স্থানীয় বীজ (Native Seeds) সংরক্ষণের পথে হাঁটল নেপাল। 

হ্যাঁ, আজ থেকে তিন-চার দশক আগে নেপালে যে ধান রোপণ করা হত, তা হল স্থানীয় প্রজাতি। তাতে উৎপাদনের মাত্রা কম হলেও, সেই গাছের সহনশীলতা ছিল অনেক বেশি। নেপালের হিমশীতল আবহাওয়া কিংবা চরম বর্ষার মধ্যেও বেঁচে থাকত সেই গাছ। তবে লাভের জন্য পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকরা বেছে নেন বিদেশি ও ল্যাবরেটরি তৈরি ধানের প্রজাতিকে। মূলত ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকেই ধানের বীজ আমদানি করে থাকেন নেপালের কৃষকরা। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই যেন বদলেছে পরিস্থিতি। আর তার জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। হ্যাঁ, আমদানি করা বীজে উৎপাদন বেশি হলেও, সেই গাছ বদলে যাওয়া পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। বর্ষা আসতেই যে দেরি হচ্ছে অনেকটা। ধান রোপণ করতে না করতেই আবার এসে পড়ছে শীত। ফসল কাটার আগেই নষ্ট হচ্ছে গাছ। 

বছর তিনেক আগে এই সমস্যার সমাধান করতেই ফের সময়ের ঘড়ি ধরে পিছনের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলেন নেপালে মারামচের স্থানীয় কৃষকরা। হ্যাঁ, স্থানীয় প্রজাতির প্রাচীন ধান প্রজাতিগুলির সংরক্ষণের মাধ্যমেই উৎপাদনের হার বজায় রাখার পথে এগোচ্ছেন তাঁরা। তৈরি হয়েছে স্থানীয় ধান প্রজাতির বীজব্যাঙ্ক (Seed Bank)। নেপথ্যে স্থানীয় কৃষক কৃষ্ণ প্রসাদ অধিকারী। 

আরও পড়ুন
বছরভর জলের তলায় কৃষিজমি, চাষাবাদ ছাড়ছেন হরিয়ানার অধিকাংশ কৃষক!

বছর তিনেক আগের কথা। ধান উৎপাদনে ঘাটতির কারণ খুঁজতেই তিনি হাজির হয়েছিলেন কাঠমাণ্ডুতে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক কৃষি সম্মেলনে। সেই আলোচনা থেকেই তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় স্থানীয় বীজ বা প্রজাতির গুরুত্ব। মারামচেতে ফিরে তাই প্রাচীন ধান্য প্রজাতির সংরক্ষণে নামেন কৃষ্ণ প্রসাদ। তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। নেপালের প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষকই ব্যবহার করে থাকেন আমদানিকৃত বীজ। ফলে, স্থানীয় প্রজাতির বীজের অনুসন্ধানে তাঁকে ঘুরতে হয়েছিল গোটা নেপাল। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছে তাঁর এই একক প্রচেষ্টা। আজ মারামচের কৃষকদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে নেপালের প্রান্তিক এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শুধু ধানই নয়, শসা, ভুট্টা-সহ মোট ১২টি স্থানীয় ফসলের বীজের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন তিনি। 

আরও পড়ুন
কৃষিক্ষেত্রে প্যাথোজেনের আক্রমণ ঠেকাবে ন্যানোপার্টিকল, অভিনব আবিষ্কার কানপুর আইআইটির

তবে এমন একটি বীজভাণ্ডার রক্ষণাবেক্ষণ করতেও খরচ লাগে বৈকি। সেখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন কৃষ্ণ প্রসাদ। অবশ্য এখনও পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি প্রশাসন। তবে খাদ্য উৎপাদন বজায় রাখতে ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়তে এটিই আগামীদিনের একমাত্র পথ, তা একপ্রকার নিশ্চিতই…

আরও পড়ুন
জলমগ্ন জমিতে ‘ভাসমান’ কৃষিকাজ, বিকল্পের খোঁজে বাংলার চাষিরা

Powered by Froala Editor