জলমগ্ন জমিতে ‘ভাসমান’ কৃষিকাজ, বিকল্পের খোঁজে বাংলার চাষিরা

বৃষ্টির জলে ভেসে গিয়েছে চারিদিক। কারোর কারোর ঘরে ভিতরেও জল ঢুকে পড়েছে। আর এর মধ্যেই নৌকা নিয়ে জমি দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চাষ-আবাদ ঠিকঠাক না হলে যে পেট চলবে না। কিন্তু বৃষ্টিতে সবকিছু ভেসে গেলে চাষ হবে কীভাবে? আসলে বর্ষা আর বন্যা যেখানে নিত্য জীবনের সঙ্গী, সেখানে সেই পরিবেশের মতো করেই সমাধান খুঁজে নিয়েছে মানুষ। বাংলাদেশের বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার উমারের পাড় গ্রাম। বছরের পর বছর ধরে সেখানে জলের উপরেই চলছে কৃষিকাজ। বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাসমান কৃষিকাজের পদ্ধতি।

নদী-নালার দেশ বাংলাদেশ। আর বর্ষাকালে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলই জলমগ্ন থাকে। কিন্তু কৃষিকাজ যাঁদের জীবিকা, বছরের অর্ধেক সময় কাজ না করে বসে থাকতে পারেন না তাঁরা। আর তাই খুঁজে নিয়েছেন অভিনব এই পদ্ধতি। জলের ওপর একের পর এক কচুরিপানার স্তর দিয়ে তৈরি করা হয় বেড। আর সেই বেডের ওপর গোবর, শ্যাওলা এবং অন্যান্য কিছু উপকরণ দিয়ে জমি প্রস্তুত করা হয়। এর আগে থেকেই চলতে থাকে বীজের গোলা তৈরির কাজ। শ্যাওলা এবং মস জাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হয় গোলা। তারপর সেই গোলার মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয় বীজ। জলের ওপর তৈরি বেডের ওপর বসিয়ে দেওয়া হয় সেই গোলা-বীজগুলি। অবশ্য ধান, গম বা আলুর মতো ফসল ফলানো সম্ভব হয় না এইভাবে। তবে শাকসবজির ফলন ভালোই হয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, গোটা প্রক্রিয়ায় কোথাও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না।

সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি এই বেডগুলি জলে থাকতে থাকতে ক্রমশ পচতে শুরু করে। জল নেমে গেলে সেই পচা কচুরিপানাগুলিকেই সার হিসাবে ব্যবহার করেন কৃষকরা। তখন শুরু হয় ধানচাষ জলের মধ্যে এভাবে কৃষিকাজকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতি। মহাকাশেও এইভাবে কৃষিকাজের প্রস্তুতি চলছে। তবে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের কৃষকদের এই উদ্যোগ একেবারেই তাঁদের নিজস্ব। আর তার সঙ্গে সঙ্গত দিয়ে যাচ্ছে দেশের কৃষি বিভাগও। গবেষকরাও পরামর্শ দিচ্ছেন, কীভাবে আরও বেশি ফসল উৎপাদন করা যায়। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির চেনা চক্রটাই তো উলটে গিয়েছে। কৃষিকাজের সময় অবাঞ্ছিত বৃষ্টি এসে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে প্রতি বছর। এবারে জাওয়াদের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন বিকল্প কৃষিপদ্ধতি সত্যিই আশার আলো দেখাচ্ছে।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পক্ষাঘাতে হারিয়েছে চলচ্ছক্তি, মুখ দিয়েই ছবি আঁকেন বাংলাদেশের শিল্পী