মানুষের অস্তিত্ব মুছে গেলেও তার ইতিহাস ধরে রাখবে ‘ব্ল্যাক বক্স’

ধরা যাক, পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর এখানে পা দিয়েছে কোনো ভিনগ্রহী প্রাণী। অথবা পৃথিবীর বুকেই জন্ম নিয়েছে কোনো সভ্য প্রাণী। মানুষের অস্তিত্বের কিছু চিহ্ন তারা খুঁজে পাবে ঠিকই। কিন্তু ঠিক কীভাবে বিলুপ্ত হল মানুষ, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পাওয়া যাবে কি? কীভাবে বিলুপ্ত হল ডাইনোসর, তাও তো জানি না আমরা। তবে মানুষের ধ্বংসের দিনগুলিকে ধরে রাখতে এবার তৈরি হতে চলেছে একটি ‘ব্ল্যাক বক্স’। হ্যাঁ, সমস্ত বিমানে যেমন ব্ল্যাক বক্স থাকে, ঠিক তেমন। অর্থাৎ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও শেষের দিনগুলির সমস্ত তথ্য ধরা থাকবে সেখানে।

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত সমস্যা। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে মানুষ কি আদৌ টিকে থাকতে পারবে পৃথিবীতে? বেশ কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, যদি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় তাহলে চলতি শতাব্দীতেই মানুষের অস্তিত্ব পুরোপুরি মুছে যাবে। আর এই আশঙ্কার মধ্যে দাঁড়িয়েই অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে তৈরি হতে চলেছে পৃথিবীর ব্ল্যাক বক্স। অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি ক্লিমেঞ্জার বিবিডিও-র সঙ্গে এই প্রকল্পে সহযোগিতা করবেন তাসমানিয়া ইউনভার্সিটির গবেষকরাও। আর ২০২২ সালের শুরুতেই এই ব্ল্যাক বক্স তৈরি হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

কী কী তথ্য থাকবে এই ব্ল্যাক বক্সে? এক্ষেত্রে বিষয়টা যে বিমানের ব্ল্যাক বক্সের চেয়ে অনেকটাই জটিল হবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য। বিরাট এই ডেটাবেসে ধরা থাকবে ২০২২ সাল থেকে মানব সভ্যতার শেষ লগ্ন পর্যন্ত বাতাসের অক্সিজেনের পরিমাণ, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এবং পরিবেশ সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সমস্ত সামাজিক মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, তাও ধরা থাকবে সেখানে। আর থাকবে পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া বিভিন্ন নীতির তালিকাও। মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেলেও অন্তত ৩০-৫০ বছর যন্ত্রটি নিজেই পরিবেশ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। ফলে মানুষের অস্তিত্ব মুছে গেলে প্রকৃতি ক্রমশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে কিনা, তাও জানা যাবে।

তবে এটুকুই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয়। আসলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ সমস্যাকে আরও গভীরে পর্যবেক্ষণ করতে চাইছেন গবেষকরা। সেইসঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত দেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপরে চাপ সৃষ্টি করতেও চাইছেন তাঁরা। অভিনব এই উদ্যোগ কতদূর সফল হয়, সেটা অবশ্য ভবিষ্যতেই জানা যাবে।

আরও পড়ুন
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় বাঙালি ডাক্তার উজ্জ্বল পোদ্দার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৬৪ ফোঁটা রক্ত থেকেই পাকড়াও খুনি, নেপথ্যে বাঙালি বিজ্ঞানী