কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে নয়া প্রযুক্তি, জড়িয়ে দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

কার্বন-ডাই-অক্সাইড – বর্তমান পৃথিবীতে এক আতঙ্কের নাম। কীভাবে বাতাসে কার্ব-ডাই-অক্সাইডের (Carbon Di-Oxide) পরিমাণ কমানো যায়, তাই নিয়ে বিস্তর ভাবনাচিন্তা চলছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কপ-২৬ সম্মেলন। তবে এই গ্যাসীয় শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি আজও এক বড়ো সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধানেই এবার বিশেষ নজির গড়লেন বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) জওহরলাল নেহেরু সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক রিসার্চের বিজ্ঞানীরা। আর তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী (Bengali Scientist)। সহযোগী তিনজনের মধ্যে রয়েছেন আরও এক বাঙালি। কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে মিথেন গ্যাস তৈরির এক অভিনব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। এর ফলে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ যেমন কমবে, তেমনই জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যাবে মিথেনকে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকেও স্বাগত জানানো হয়েছে এই গবেষণাকে।

‘জার্নাল অফ আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’-র সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে প্রফেসর তাপস কুমার মাঝির নেতৃত্বাধীন এই দলটির গবেষণাপত্র। গবেষক দলটির বাকি তিন সদস্য হলেন ডঃ সৌমিত্র বর্মন, ডঃ আশিস সিং এবং ফারুক আহমেদ রহিমী। মূলত সৌর-রাসায়নিক পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রক্রিয়াকরণের ভাবনা থেকেই এই প্রযুক্তির আবিষ্কার করে ফেলেছেন তাঁরা। এই পদ্ধতিতে বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাইরে থেকে তাপ বা বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটাই পরিবেশবান্ধব। তবে সৌর-রাসায়নিক পদ্ধতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রক্রিয়াকরণের পুরনো পদ্ধতিগুলিতে বেশ কিছু সমস্যা থেকেই গিয়েছিল। প্রথমত, সেখানে অনুঘটক হিসাবে অত্যন্ত দামি কিছু ধাতু ব্যবহার করা হত। ফলে এই বিক্রিয়া ছিল বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তাছাড়া, বিক্রিয়া পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব ছিল না। কারণ সেক্ষেত্রে বিক্রিয়াজাত পদার্থ হিসাবে বেশ কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস তৈরি হত।

এই দুই সমস্যারই সমাধান করতে পেরেছেন অধ্যাপক তাপস মাঝি ও তাঁর সহকর্মীরা। কনজুগেটেড মাইক্রোপোরাস পলিমার বা সিএমপি নামে এক বিশেষ ধরনের পলিমার তৈরি করেছেন তাঁরা। এর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সরল। পলিমারটা নিজেই বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে আলাদা করে নিতে পারবে। এরপর সূর্যের আলোর প্রভাবে দুটি কার্বন-ডাই-অক্সাইড অনুকে জুড়ে দিয়ে তৈরি করবে মিথেন। আর অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে পলিমারটিই। ফলে আর কোনো উপাদানের প্রয়োজন পড়বে না। আর এই পলিমার তৈরির পদ্ধতিটিও বেশ সহজ বলেই দাবি করেছেন তাঁরা। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটিই কম খরচে সম্পন্ন করা যাবে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই প্রযুক্তিকে ঠিক কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়নি। তবে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই আবিষ্কার যে গেম-চেঞ্জারের ভূমিকা নিতে পারে, সেটা বলাই যায়।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে ‘ব্লু কার্বন সিঙ্ক’

More From Author See More

Latest News See More