দীর্ঘ আন্দোলনেই সাফল্য – কৃষি আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

বিগত আড়াই বছর ধরে বহু লড়াই-আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে ভারত। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো আন্দোলনটি ছিল তিনটি প্রস্তাবিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে। অবশেষে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেন, তিনটি আইনই বাতিল (Withdrawn) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই এই খবরে খুশি হয়েছেন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অসংখ্য মানুষ। কৃষি আইনের (Farm Law) বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড়ো প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন পাঞ্জাব-হরিয়ানার শিখ ধর্মাবলম্বী কৃষকরা। আর আজ গুরু নানক জয়ন্তীর সকালেই এই ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।

যদিও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষি আইন কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছিল। তবে, তাঁর ‘তপস্যায়’ কোথাও খামতি থেকে গিয়েছে বলেই কৃষকদের এই আইনের গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামীদিনে কৃষকদের এই আইনের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করবে কেন্দ্র। তবে প্রস্তাবিত তিনটি আইন বিল আকারে লোকসভায় পেশ করার সময় থেকেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। কৃষিপণ্য থেকে কৃষকদের সমস্ত অধিকার তুলে দিয়ে কর্পোরেটের হাতে কৃষিব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেছিলেন অনেকেই। এমনকি কৃষি আইনের বিরোধিতা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বা জঁ দ্রেজের মতো ব্যক্তিরাও।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কৃষকদের লাগাতার আন্দোলনে যথেষ্ট চাপে ছিল কেন্দ্র। করোনা অতিমারীর মধ্যেও একাধিকবার দিল্লি সীমান্ত অচল করে দিয়েছেন কৃষকরা। এমনকি আধা-সামরিক বাহিনী দিয়েও তাঁদের আন্দোলন দমানো যায়নি। কৃষি আইনের বিষয়ে কেন্দ্রের অনড় অবস্থানকে প্রশ্ন করেছিল সুপ্রিম কোর্টও। আর এই সমস্তকিছুর প্রেক্ষাপটেই ২ সপ্তাহ আগে কৃষি আইন পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় আলোচনা শুরু হয়। অবশ্য এর মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করেও অর্থনীতিবিদরা প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, দেশের কৃষিব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের মতো দেশে কৃষিই অর্থনীতির মূল ভিত্তি। অথচ বছরের পর বছর কৃষকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়েই চলেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা গত ২০ বছর ধরে উর্ধ্বমুখী। প্রধানমন্ত্রীর আজকের ঘোষণা কৃষকদের সাময়িক স্বস্তি দিলেও আগামীদিনে এই ব্যবস্থার পরিবর্তনেরও প্রয়োজন থেকেই যায়।

আরও পড়ুন
তারকাখচিত জীবন ছেড়ে কৃষিকাজ, অনাহারের বিরুদ্ধে লড়ছেন এই ফুটবলার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কৃষিকাজে সাশ্রয় ঘটাতে বিস্ময়কর আবিষ্কার ৭১ বছরের কৃষকের