কৃষিক্ষেত্রের মাত্রাতিরিক্ত সম্প্রসারণ, ৩০ বছরে ২০ হাজার প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা

আর মাত্র তিন দশকের অপেক্ষা। তারপরই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে পারে ৯০ শতাংশ স্থলবাসী প্রাণী। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়। বিশ্বব্যাপী খাদ্যব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টই ডেকে আনবে এই চরম বিপত্তি। আর মানুষের কার্যকলাপের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যি বাসস্থান হারাবে অধিকাংশ বন্যপ্রাণীরা। 

নেচার সাসটেইনেবিলিটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। আন্তর্জাতিক এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিল লিডস এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষণায় উঠে আসে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের দ্রুত রদবদল না হলে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র। সেইসঙ্গে পরিবর্তন দরকার মানুষের খাদ্যাভ্যাসের এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ায়।

এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ডঃ ডেভিড উইলিয়ামস জানান, বিশ্বের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য চাহিদা বেড়ে চলেছে খাদ্যের। আর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের জন্য দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে কৃষির ক্ষেত্রও। অকল্পিতভাবেই হ্রাস পাচ্ছে বনভূমি। যার ফলাফল বসত প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং উভচর জীবকে মাশুল গুনতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। এখানেই শেষ নয়। এর বাইরেও প্রায় ১৩০০ প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা কমে দাঁড়াবে এক-চতুর্থাংশ। যা পারতপক্ষে তাদের বিলুপ্তির সম্ভাবনাকে আরও অনেকটা বাড়িয়ে দেবে এক ধাক্কায়।

সমীক্ষায় অনুমান করা হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে প্রাণীদের অস্তিত্বের এই সংঘাত চরমে পৌঁছাবে আফ্রিকা এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়।

কিন্তু এই পরিস্থিতির সমাধান কী? গবেষণার সহ-লেখক মাইকেল ক্লার্ক জানান, প্রথমত নিয়ম করেই প্রত্যেক দেশের প্রশাসনের প্রয়োজন সমস্ত প্রজাতির জন্যই বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। কৃষির সম্প্রসারণ যেন জীববৈচিত্রকে প্রভাবিত না করে তার জন্য প্রবর্তন করা দরকার বিশেষ কিছু আইনের। পাশাপাশি বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সমপরিমাণ জমিতেই ফলন বাড়ানোর নতুন পন্থার সন্ধান করতে হবে বিজ্ঞানীদের। তবে যে সমস্ত অঞ্চলে খাদ্যতালিকায় মাংসের ব্যবহার কম, সেখানকার পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে সকলের কাছেই। জীববৈচিত্রে প্রভাবের পাশাপাশি খাদ্যসংকট দেখা দেবে মানুষের মধ্যেও।

তবে প্রত্যেকটি দেশে আলাদা আলাদা করে ব্যক্তিগত পদক্ষেপে বদলাবে না পুরো চরিত্র। বিশ্ব মানচিত্রে সমস্ত দেশের যৌথ প্রচেষ্টা এবং দ্রুত সমন্বয়ই রেশ টানতে পারে আসন্ন এই খাদ্য সংকটের। রক্ষা করতে পারে কয়েক হাজার প্রজাতির হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু সারা বিশ্বের মধ্যে সেই সমন্বয় সাধন যেন সোনার পাথরবাটি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে সাহায্য করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে সামনে সারিতে তুলে আনাই এখন মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রথম বিশ্বের। কতটা সময় লাগবে তার জন্য, তা সকলেরই অজানা!

আরও পড়ুন
জলবায়ুর পরিবর্তনই মেরু-গণ্ডারদের অবলুপ্তির কারণ, চাঞ্চল্যকর তথ্য গবেষণায়

Powered by Froala Editor