পশ্চিম ভারত মহাসাগরে আবিষ্কৃত নীল তিমির বাসস্থান, উচ্ছ্বসিত গবেষকরা

ভারত মহাসাগরের পশ্চিম অঞ্চলে মাঝে-মধ্যেই দেখা মেলে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণী নীল তিমির। তবে ওই অঞ্চলে নীল তিমির স্থায়ী বসতি রয়েছে কিনা তা এতদিন অধরাই ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলের সমুদ্রিক শব্দতরঙ্গের রেকর্ডের বিশ্লেষণ করে সেই তথ্যই সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা। জানা গেল ভারত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নীল তিমির জনসংখ্যা নেহাত কম নয়।

অবলুপ্তপ্রায় এই দৈত্যাকার প্রাণীর বিশ্বব্যাপী সংখ্যা ক্রমশ কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে বর্তমানে। তবে তা সত্ত্বেও অল্পবিস্তর পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তেই দেখা মেলে এই সামুদ্রিক জীবের। নীল তিমির এই নতুন বাসস্থান আবিষ্কার বৈশ্বিক মানচিত্রে তাদের জনসংখ্যা বণ্টনকে বুঝতে আরও সাহায্য করবে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি বেশ বড়ো সংখ্যার নীল তিমির জনবসতি আবিষ্কার করতে পেরে উচ্ছ্বসিত গবেষকরা।

তবে এখানেই শেষ নয় চমকের। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত নিউ ইংল্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামের একদল গবেষক তিমির তৈরি শব্দতরঙ্গের বিশ্লেষণে কিছুদিন আগেই দিয়েছিলেন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী একই প্রজাতির তিমির তৈরি শব্দের মধ্যেও থাকে নিজস্বতা। মূলত একটি নির্দিষ্ট শব্দতরঙ্গের সুরে গান করে নীল তিমি। তবে ক্ষেত্র বিশেষে বদল হয় সেই সুরের। 

নতুন খুঁজে পাওয়া এই নীল তিমিগুলির আবাসস্থল মূলত ওমানের নিকটবর্তী আরব সাগর এবং মাদাগাস্কারের আরও দক্ষিণের অঞ্চলে। সদ্য প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন এই জনবসতির তৈরি শব্দতরঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন পৃথিবীর অন্যান্য নীল তিমিদের থেকে। পূর্বে ধরে নেওয়া হত শ্রীলঙ্কার নিকটবর্তী ভারত মহাসাগরে বসবাসকারী নীল তিমিদের বৃহত্তর পরিবারের অংশ এগুলি। সেই ধারণাই ভেঙে গেল সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারে।  

গবেষণার প্রধান গবেষক অ্যান্ড্রু উইলসন জানান, এই অঞ্চলের তিমিদের সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের সুর, হয়তো তাদের অভিনব জীবনযাপনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিংবা এও হতে পারে ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক শিল্পের কারণে তাদের অস্তিত্বের সংকটের কথা জানান দিচ্ছে তিমিগুলি। তবে সবটাই এখনও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। এই শব্দ তরঙ্গের আরও গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের অজানা যাপনের আভাস পাওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন তিনি। সব মিলিয়ে এই নতুন আবিষ্কার যেন বিজ্ঞানীদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক অজানা রহস্যের সামনে। যে রহস্য উন্মোচনে হয়তো লেগে যেতে পারে আরও কয়েক দশক। কিন্তু ততদিন কি টিকে থাকবে পৃথিবীর এই বৃহত্তম প্রাণীদের অস্তিত্ব? এই আশঙ্কাই দেখছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ... 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
একইসঙ্গে ৯০টি তিমির মৃত্যু তাসমানিয়ায়, বিস্মিত বিশেষজ্ঞরাও

More From Author See More