ফিরছেন নবদ্বীপ হালদার, বর্ধমানের সোনপলাশিতে পুজোর আকর্ষণ তিনিই

১৯৫৩ সালের বিখ্যাত 'সাড়ে চুয়াত্তর' সিনেমার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই! পুরনো দিনের বাংলা সিনেমা নিয়ে একটু চর্চা থাকলে এ সিনেমার নাম আপনি শুনবেনই। বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অন্যতম বিখ্যাত সিনেমা উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত 'সাড়ে চুয়াত্তর'। সিনেমায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তীর পাশাপাশি আরও একজনের চরিত্র বোধহয় দর্শক চট করে ভুলতে পারবেন না। ওই সিনেমায় 'মদন' চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নবদ্বীপ হালদার। তবে তাঁর পরিচয় এই একটি সিনেমা দিয়েই নয়। অভিনয় করেছেন স্বর্ণযুগের অনেক সিনেমাতেই।

সেই নবদ্বীপ হালদারেরই হাস্যকৌতুকে এবার পুজোয় ভাসবে পূর্ব বর্ধমানের সোনপলাশি। ১৯১১ সালে এই গ্রামেই জন্ম হয়েছিল তাঁর। হাসির রাজা নবদ্বীপ হালদারের কমেডি অভিনয় ছিল অসাধারণ। ভাঙা গলা আর দুরন্ত টাইমিং তাঁর অভিনয়কে আরও সমৃদ্ধ করেছিল।

তাই নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এই শিল্পীর পরিচয় করাতে সোনপলাশির পাঁচটি বারোয়ারিতে মাইকে বাজবে নবদ্বীপ হালদারের হাসি-ঠাট্টা।

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল থেকে পাশ করে তিনি পরবর্তীতে পরিবারের সাথে কলকাতা পাড়ি দেন। তবু গ্রামের প্রতি তাঁর আজীবন ভালোবাসা থেকে গেছে, কিছুতেই কাটাতে পারেননি গ্রামের মায়া। তাই তিনি গ্রামের গাজন, দুর্গাপুজায় নিয়মিত আসতেন। এমনকি কলকাতা থেকে দল এনে যাত্রাপালাও করেছেন। তার বেশ কিছু হাস্যকৌতুক এখনও ইউটিউবে সার্চ করলে অনায়াসে পাওয়া যায়।

অথচ সেসব দিন আজ আর নেই, তাঁর প্রজন্মের লোকজন মনে রাখলেও নতুন প্রজন্ম তাঁকে চেনেনই না। সোনপলাশিতে তাঁর বাড়ি এখন আগাছার জঙ্গল। ভগ্নস্তূপ জুড়ে বট অশ্বত্থ। যেন মানুষটার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে গেছে তাঁর সমস্ত স্মৃতিও। তাই সোনপলাশি গ্রামের পুজোয় এবার শুধুই নবদ্বীপ হালদার। নতুন প্রজন্ম চিনুক হাসির রাজাকে। কিংবদন্তি এই অভিনেতার স্মৃতি ফিরুক তাঁর নিজের গ্রাম থেকেই।

সোনপলাশির পুজো উদ্যোক্তাদের তাই আলাদা করে সাধুবাদ জানাতেই হয়। প্রায় ভুলতে বসা এক অসাধারণ অভিনেতাকে পুজোর মধ্যে দিয়ে এভাবে স্মরণ করার দৃশ্য এই বাংলায় খুব বেশি দেখা যায় না। আপনার বাড়ির পরবর্তী প্রজন্মকে যদি একটু অন্যভাবে এই অভিনেতাকে চেনাতে চান, তাহলে দেখে আসতে পারেন সোনপলাশি গ্রাম আর সেখানকার পুজো। বলা যায় না, নতুন প্রজন্মের কাছেও এই অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেন খুব প্রিয় ও কাছের।