বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নতুন ইতিহাস গড়ার পথে মোতেরা

আর মাত্র একদিন। রাত পোহালেই খেলা শুরু পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম তথা দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রীড়া স্টেডিয়ামে। আর ইতিহাসের দলিল লিখবে ভারত। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে নবরূপে সজ্জিত আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামের ব্যাপারেই। আগামীকাল সেখানেই সামনা-সামনি লড়তে নামছে ভারত ও ইংল্যান্ড। আর যা হবে এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসাবে বিবেচিত হত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। ছিল ১ লক্ষ দর্শকাসন। তবে সেই রেকর্ডকে ছাপিয়ে আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়াম খেলা দেখার সুযোগ দিতে পারবে ১ লক্ষ ১০ হাজার ক্রিকেটপ্রেমীকে। তবে বিষয় হল, বিশ্বের অন্যতম ফুটবল ও বেসবল স্টেডিয়ামগুলির থেকে সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট স্টেডিয়াম সুযোগ-সুবিধা ও পরিকাঠামোর দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। তা পার্থ, মেলবোর্ন কিংবা লর্ড— যে কোনো জনপ্রিয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। তবে আহমেদাবাদের মোতেরা এবার পাল্লা দিতে সক্ষম সমস্তরকম পরিকাঠামোতেই।

শুধু দর্শকাসনের সংখ্যাই নয়, সব দিকেই থাকছে অভিনবত্ব এবং আধুনিকতা। স্টেডিয়ামটিতে সব মিলিয়ে রয়েছে ৭৬টি কর্পোরেট বক্স। যার প্রতিটিতে রয়েছে ২৫টি করে আসন। রয়েছে একটি গোটা ইনডোর ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। ৪০ জন অ্যাথলিটের জন্য রয়েছে ডর্মেটরি, ক্লাবহাউস এবং অলিম্পিকের মানের সুইমিং পুল। জিমনাসিয়াম হোক কিংবা রেস্তোরাঁ— সবই সরাসরি অভ্যন্তরীণভাবে যুক্ত অ্যাকাডেমি ভবনের সঙ্গে। 

অন্যদিকে বাইরের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের জন্য রয়েছে ৫৫টি ঘর। চারটি টিমের জন্য পৃথক পৃথক ড্রেসিং রুম। প্র্যাকটিসের জন্য আউটডোরের পাশাপাশি রয়েছে ছ’টি ইনডোর ক্রিকেট পিচ। তাছাড়া সর্বপ্রথম ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসাবে মোতেরাতেই ফ্লাড লাইটের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে এলইডি। ছাদও সম্পূর্ণ ভূমিকম্প প্রতিরোধক। অন্যদিকে স্টেডিয়ামের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাও নেহাত কম নয়। এক সঙ্গে ৩ হাজার বড়ো গাড়ি এবং ১০ হাজার মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের স্থান রয়েছে মোতেরায়। রয়েছে ৮টি পথ, যা সরাসরি যুক্ত আহমেদাবাদের সঙ্গে। ফলে ক্রিকেটপ্রেমীরাও সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন স্টেডিয়ামে।

আরও পড়ুন
ক্রিকেট খেলতে শিখেছেন চিনা ভাষা, অবনীন্দ্রনাথের প্রহার লজ্জা দিয়েছে বার্ধক্যেও

তবে আজ থেকে চার দশক আগেও ছবিটা ছিল একেবারে অন্যরকম। ১৯৮২ সালে যখন তৈরি হয় মোতেরা, তখন দর্শকাসন ছিল মাত্র ৪৯ হাজার। ২০১৫ সালে এই স্টেডিয়াম সংস্করণের কর্মসূচি নেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় গোটা স্টেডিয়ামটিই। তারপর সবরমতীর তীরে ৬৩ একর জমিতে গড়ে ওঠে দৈত্যাকার এই বিস্ময়। 

তবে পুরনো মোতেরা স্টেডিয়ামেও রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মোতেরাতেই ১০০০০ রানের মাইলস্টোন ছুঁয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কার। এই মাঠেই ৪৩২তম উইকেট নিয়ে তৎকালীন টেস্টক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন কপিল দেব। তাছাড়া ২০১১ সালের বিশ্বকাপে রুদ্ধশ্বাস সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ভারত হারিয়েছিল মোতেরার মাটিতেই। আগামীকাল মোতারার ‘উদ্বোধন’ যেন সেই ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দেবে আরও একবার। সেইসঙ্গে ইশান্ত শর্মাও নিজের ১০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলবেন এই স্টেডিয়ামে।

আরও পড়ুন
বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ারে ইতি, অবসর নিলেন বাংলার ‘নৈছনপুর এক্সপ্রেস’

পেশাদার ক্রিকেট খেলা হয়, এমন দেশ বিশ্বে হাতে গোনা। সেই সংখ্যা ২০-র গণ্ডিও পার করবে না। তবে তা সত্ত্বেও ক্রিকেট সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা। আর তার বড়ো কারণ হল ভারত। শুধু ভারতেই রয়েছে ক্রিকেটের ১২০ কোটি সমর্থক। ফলত ক্রিকেটকে ভারতের একটি ধর্ম বললেও ভুল হয় না খুব একটা। আর ঠিক সেই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে বিশ্বের ক্রিকেট মানচিত্রে আরও নিজের জায়গা পাকা করে নিল ভারত। ঐতিহাসিকও এই স্টেডিয়াম বুঝিয়ে দিল, ভবিষ্যতে ক্রিকেটকে নতুন অধ্যায়ের পথ চেনাবে এই তৃতীয় বিশ্বের দেশই। আগামীকাল মোতেরা ওরফে বল্লবভাই প্যাটেল স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমেই শুরু হতে চলেছে সেই পথচলা…

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ওজন ১৪০ কেজি, অজস্র ব্যঙ্গের শিকার হয়েও মাঠ কাঁপাচ্ছেন বিশ্বের স্থূলতম ক্রিকেটার