বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুখে। শেষ অবধি কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার রাজিন্দার গোয়েল। রঞ্জি ট্রফিতে এখনও অবধি সর্বাধিক উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতেই।
প্রথম সারির ক্রিকেটে ১৯৫৮ সালে প্রথম অভিষেক হয় তাঁর। ঘরোয়া ট্যুর্নামেন্টের বোলিংয়ে তাঁর বিকল্প ভাবা প্রায় অসম্ভবই ছিল। বাইশ গজে রাজত্ব করেছেন ৪৪ বছর পর্যন্ত। আর এই দীর্ঘ ২৬ বছরের ক্যারিয়ারে বজায় ছিল ধারাবাহিক ফর্ম। ১৫৭টি প্রথম সারির ম্যাচে রয়েছে তাঁর ৭৫০টি উইকেট। যার মধ্যে ১৭ বার ১০টি উইকেট নিয়েছেন হরিয়ানার এই বাঁ-হাতি স্পিনার। শুধুমাত্র রঞ্জি ট্রফিতেই রয়েছে ৬৩৭টি। উইকেটের নিরিখে তাঁর পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী ভেঙ্কট রাঘবনের উইকেটের সংখ্যা ৫২০।
তবে তাঁর ধারাবাহিকতার দিক থেকে দেখতে গেলে, সাফল্য তাঁর থেকে দূরে সরে গেছে প্রতি পদে। নিজের সেরা উজাড় করে দিয়েও সুযোগ আসেনি রঞ্জি ট্রফি ছুঁয়ে দেখার। পূর্ণ হয়নি ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বপ্নও। কারণ ১৯৬০ সাল থেকে ভারতীয় দলে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিলেন বিষণ সিং বেদী। নানা স্তরে প্রশ্ন উঠেছিল গোয়েলকে জাতীয়দলে সুযোগ না-দেওয়া নিয়ে। অবশেষে এসেছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি আন-অফিশিয়াল টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না তাঁর। প্রথম একাদশের বাইরেই থাকতে হয় তাঁকে। ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে নিজেও দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘আমি ভুল সময়ে এসে পড়েছি।”
তবে কেরিয়ার শেষ হলেও তাঁর সঙ্গে মাঠের সম্পর্ক ছিল বহুদিন। খেলোয়াড় জীবনের পর আম্পেয়ারিং করেছেন বেশ কিছু ম্যাচ। পুরুষ ও মহিলা দুই বিভাগেই। নিজে রঞ্জি না পেলেও, হরিয়ানার সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে ঘরে এনেছিলেন ট্রফি। ১৯৯১ সালে, সেবার কপিল দেবের হাত ধরে রঞ্জি জিতেছিল হরিয়ানা। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অনস্বীকার্য অবদানের জন্য ২০১৭ সালে বিসিসিআই আজীবন সি.কে. নাইডু পুরষ্কারে ভূষিত করে তাঁকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে। দুঃখ প্রকাশ করেছেন বীরেন্দ্র সহবাগ, সুরেশ রায়না থেকে বিষণ সিং বেদীও। ঘরোয়া টুর্নামেন্টের বাইরে খেলতে না পারায় যেমন নিশ্চুপ ছিলেন চিরকাল, তেমনই নিভৃতে চলে গেলেন ভারতের সর্বকালীন অন্যতম স্পিনার...
Powered by Froala Editor