আমেরিকার স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়েছুড়ে দেশে ফেরা; নীরবেই ‘কৃষিবিপ্লব’ ঘটাচ্ছেন বাঙালি দম্পতি

আমাদের অনেকের জীবনেই একটা বিশেষ ইচ্ছা থাকে। বড়ো হয়ে বিদেশে যাওয়ার। অনেকের স্বপ্ন পূরণ হয়, অনেকের হয় না। বিশেষ করে সেই দেশটি যদি আমেরিকা হয় তাহলে তো কথাই নেই। সেই আমেরিকার টান সরিয়ে রেখে, স্রেফ দেশের মাটির কাছে ফিরে আসা; আর ফিরে এসে কৃষিকাজে যুক্ত হয়ে যাওয়া— ‘স্বদেশ’-এর গল্পের মতো লাগছে না? তবে বাস্তবের ‘স্বদেশ’-এর নায়ক নায়িকা কিন্তু খাঁটি বাঙালি! দেবল মজুমদার এবং অপরাজিতা সেনগুপ্ত। আমেরিকার আরামের জীবন ছেড়ে সোজা চলে এসেছেন বাংলায়। একটি ছোট্ট গ্রামে তৈরি করছেন নিজেদের স্বপ্ন। কৃষির সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন আধুনিকতা। প্রায় চুপিসারেই ঘটে চলেছে নতুন একটি অধ্যায়…

১১ বছর ধরে আমেরিকায় একটি সফটওয়ার কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করছিলেন দেবল। উঁচু পদ, মাইনেও অনেক। স্ত্রী অপরাজিতাও নিজের পিএইচডি সম্পূর্ণ করছিলেন। আম বাঙালির কাছে এটাই তো সুখী পরিবারের চিত্র। এই ‘সরল, স্বাভাবিক’ সমীকরণই মানতে পারছিলেন না তাঁরা। রোজের একঘেয়ে কাজ বিরক্ত করে দিচ্ছিল তাঁদের। সেইসঙ্গে পরিবেশের কথাও মাথায় ঘুরছিল। চারিদিকে এত দূষণ; এমনকি চাষ করতে গেলেও সেই একই কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের প্রয়োগ। কিছুই ভালো লাগছিল না দেবল-অপরাজিতার। আর এই চিন্তাই বের করে আনল নতুন একটি উপায়ের, যা তাঁদের টেনে আনল পশ্চিমবঙ্গে। 

অরগ্যানিক খাবারের কথা তো শুনেছি আমরা। অরগ্যানিক পদ্ধতিতে চাষের প্রচলনও বাড়ছে। তাতে সময় বেশি লাগে বটে; কিন্তু যে জিনিসটা তৈরি হয় তাতে কোনো ভেজাল থাকে না। কথায় বলে না, ‘সবুরে মেওয়া ফলে’! এই পদ্ধতিটাই ছিল দেবল-অপরাজিতার মাস্টার প্ল্যান। কেনটাকির বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে ২০১১ সালে তাঁরা চলে আসেন বাংলায়। তারপর ২০১৪ সালে বীরভূমের রুপুরে নিজেদের দোতলা মাটির বাড়ি তৈরি করে সেখানে চলে যান। সঙ্গে থাকে দুই একর ক্ষেত; বলা ভালো অরগ্যানিক ক্ষেত। কোনোরকম বিষাক্ত রাসায়নিক সার নয়, হাইব্রিড বীজ নয়। শুদ্ধভাবে চাষ করতে থাকলেন তাঁরা। তখন থেকে আজও দেবল আর অপরাজিতা পুরোদস্তুর চাষের কাজই করছেন। 

শুধু করছেনই না, আশেপাশের মানুষদের শেখাচ্ছেনও। গম, মিলেট, বিভিন্ন প্রজাতির ডাল, সবজি— সবকিছু নিয়ে তাজা একটা হাওয়া ঘুরে বেড়ায় তাঁদের চারিদিকে। সেখানে কংক্রিটের আধুনিকতা নেই, আছে পবিত্রতা। নিজেরা তো ভালো আছেনই, সঙ্গে ভালো রেখেছেন প্রকৃতিকে। তাঁদের পরিশ্রমের ফসল পৌঁছে যাচ্ছে বাকি মানুষদের কাছেও। সেইসঙ্গে ন্যাচারাল বা অরগ্যানিক চাষের পদ্ধতিও শেখাচ্ছেন সবাইকে। এভাবেই বেড়ে উঠছে একটা সভ্যতা। সত্যিকারের সভ্যতা…

আরও পড়ুন
চাষের জমি থেকে উদ্ধার জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি, গবেষণায় ঐতিহাসিকেরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রেহাই নেই বাংলাদেশেরও; আমফানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষজমি, বিদ্যুৎহীন বিস্তীর্ণ এলাকা