কোনো ক্রিকেটার নন, সেবার মাঠকর্মীরাই পেয়েছিলেন ‘ম্যান অব দ্য মাচ’ পুরস্কার

২০০০ সালের ডিসেম্বর মাস। সদ্য পেরিয়েছে একটা দশক। একবিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিক, ক্রিকেট বিশ্ব ততদিনে চিনেছে বহু তাবড় তাবড় প্লেয়ারদের। এমনই এক সকালে নিউ ওয়ান্ডারার্স মাঠে শুরু হতে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডের মধ্যে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ। ইতিমধ্যে দাপুটে বোলিং ও ব্যাটিং করে সিরিজ ছিনিয়ে নিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। তাই ওয়ান্ডারার্সের এই টেস্ট ছিল কেবলই নিয়মরক্ষার ম্যাচ।

জ্যাক কালিসের দূরন্ত ১৬০ রানের ইনিংস আর মাখায়া এনটিনির ৬ উইকেট নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেই জয় এনে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পরের ম্যাচ সেন্ট জর্জ পার্কে, কিন্তু প্রতিপক্ষের দুর্বল ব্যাটিং এর কারণে সাত উইকেটে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

কিন্তু তৃতীয় টেস্ট শুরু হতে না হতেই উত্তাল বৃষ্টিতে ভেসে যায় ওয়ান্ডারার্সের মাঠ। মাঠে জল জমে যাওয়ায় প্রথম দিন একটিও বল খেলা হয়নি। তবুও পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলার আশা ছাড়েনি কেউ-ই। গ্রাউন্ডসম্যানদের অনবদ্য কাজে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে খেলা সম্ভব হয়। নিউজিল্যান্ড ১১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও কোনোক্রমে ২০০ রানে তাদের প্রথম ইনিংস শেষ করে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ রানে এক উইকেট হারিয়ে দিনের খেলা শেষ করে।

হাতে আরও দু-দিন, ফলাফলের আশায় দুদলই। দর্শকরাও অপেক্ষা করছে লড়াই সমাপ্ত হওয়ার। কিন্তু প্রকৃতি শেষমেশ বাধ সাধল। ম্যাচের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। প্রবল বৃষ্টির পর পঞ্চম দিনের খেলার কোনো আশাই থাকত না, যদি না ক্রিস স্কট ও তাঁর দল বিপুল পরিশ্রম করে মাঠ থেকে জল সরাতেন। তাঁদের অসীম কর্মদক্ষতার ফলে, সেবার পঞ্চম দিনের খেলা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু জাক কালিসের সেঞ্চুরি গোটা ম্যাচের ফলাফলে জল ঢেলে যায়। ম্যাচটি ড্র হওয়ায় ক্রিসের সমস্ত কাজ যেন জলে যায়।

কিন্তু খেলার শেষের চমকটিই এই ম্যাচকে বিখ্যাত করে তুলেছিল। প্রবল বৃষ্টিতেও একমাত্র ক্রিসের সহযোগিতায় এই ম্যাচটি শেষ দিন পর্যন্ত খেলানো সম্ভব হয়েছিল। তাই ম্যাচের শেষে 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' পুরস্কার দেওয়া হয় ক্রিস ও তাঁর টিমকে। মাঠকর্মীদের 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' দেওয়ার এমন ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে সেবার প্রথম ঘটে যা আজও মনে রেখেছেন অনেকেই।