চোট-আঘাতে জর্জরিত, তবু অদম্য লড়াই : ক্রিকেট মাঠে ভারতের মহাকাব্য

/৮

তখন ভারতের প্রথম ইনিংস চলছে। অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৩৮ রানের মার্ক ধাওয়া করতে নেমে চার উইকেট হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। আর তার মধ্যেই আরও এক বিপত্তি ঘটে যায়। টাইমিংয়ে সামান্য ভুল করে বসেন ক্রিজে থাকা ঋষভ পান্থ। কামিন্সের বল সোজা এসে আঘাত করে কনুইয়ে। যন্ত্রণায় প্রায় ছটফট করতে থাকেন পান্থ। তবুও ফিজিও-র সাহায্য আর পেনকিলার নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৬৭ বল খেলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ রান ভারতের স্কোরবোর্ডে সংযুক্ত করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে কিপিং করতে নামতে পারেননি তিনি।

/৮

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে আবার দেখা যায় পান্থকে। অস্ট্রেলিয়ার দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের সামনে নতজানু না থেকেও বিধ্বংসী ফর্মে জ্বলে ওঠেন পান্থ। চোট নিয়েও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে চালিয়ে যান ব্যাটিং। শতক থেকে মাত্র ৩ রান দূরেই শেষ অবধি থামতে হয় ভারতীয় উইকেটকিপারকে। তবে ১৮টি বাউন্ডারি এবং ৩টি ওভার-বাউন্ডারি মিলিয়ে ঝকঝকে ইনিংস চমকে দেয় দর্শকদের। চোট সত্ত্বেও এই লড়াকু মানসিকতাও জিতে নেয় সমর্থকদের হৃদয়।

/৮

তবে শুধু পান্থই নন। প্রথম ইনিংসে স্টার্কের বলে বুড়ো আঙুলে ভয়ঙ্কর রকম চোট পান রবীন্দ্র জাদেজা। ৩৭ বলে তখনও জাদেজার সংগ্রহ ২৮ রান। চোটের কারণে ক্রিজ ছাড়তে হয় জাদেজাকে। করানো হয় হাতের স্ক্যানিং-ও। প্রথম ইনিংসে একাই ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি দুরন্ত থ্রোয়িংয়ে ছিটকে দেন ফর্মে থাকা স্মিথের স্টাম্প। তাঁকে ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে নামাও প্রায় অভাবনীয় ছিল ভারতের কাছে।

/৮

দ্বিতীয় ইনিংসে জাদেজার বদলে পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নামেন ময়ঙ্ক আগরওয়াল। তবে ব্যাটিংয়ের সময়ে চোট নিয়েও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। হনুমা বিহারী এবং অশ্বিনের মধ্যে কারোর উইকেট পড়লেই হয়তো মাঠে নামতে দেখতে পাওয়া যেত আহত যোদ্ধাকে। প্যাভিলিয়নে বসে সেই অপেক্ষারই যেন প্রহর গুনছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।

/৮

এছাড়াও আর যে দু’জনের কথা উল্লেখ না করলে চলে না, তাঁরা হলেন— অশ্বিন এবং হনুমা বিহারী। পঞ্চমদিনের শুরুতেই প্যাভেলিয়নের ফিরে যান রাহানে। ঝড়ো ৯৭ রানের ইনিংস খেলার পর পান্থও আউট হয়ে যাওয়ার পর যেন ধুঁকছিল টিম ইন্ডিয়া। তখনও ম্যাচের হাল ধরলেই এই দুই তারকা। দু’জনেই চোটে জর্জরিত। তবুও শেষ অবধি ক্রিজে টিকে থাকলেন অজিদের বিরুদ্ধে। দেখিয়ে দিলেন অদম্য স্পোর্টিং স্পিরিট।

/৮

দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে থাকার সময়ই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান হনুমা বিহারী। সিঙ্গেলসের জন্য দৌড়ে ২২ গজ অতিক্রম করাও যে কতটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল তাঁর জন্য, তা যাঁরা খেলা দেখেছেন সকলেই জানেন। তবুও দাঁতে দাঁত চেপেই লড়ে গেলেন তিনি। সংগ্রহ মাত্র ২৮ রান। তবে দ্রাবিড়ের জন্মদিনে ১৬১ বল ঠায় খেলে গিয়ে যেন ‘দ্য ওয়াল’-এর কথাই মনে করিয়ে দিলেন হনুমা। তার মধ্যে একাধিক বল সোজা এসে আঘাত করেছে গায়ে। তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি তিনি।

/৮

মাঠে চোট নিয়েও তাঁর উপস্থিতি চোখে জল এনে দিয়েছে সকলেরই। রবিচন্দ্রন অশ্বিন। হনুমার সহযোদ্ধা হিসাবে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যিনি নায়ক হলেন ভারতের। পঞ্চম দিন মাঠে নামার আগে পর্যন্তও পিঠের যন্ত্রণায় কাতরেছেন তিনি। এমনকি বুটের জুতো বাঁধার জন্য নিচু পর্যন্ত হতে পারছিলেন না অশ্বিন। তা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অনবদ্য ফর্মে ম্যাচ ধরে রাখলেন তিনি। ১২৮ বলে ৩৯ রান করে বুক চিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন ভারতীয় স্পিনার। এমন ডিফেন্ডিং ব্যাটিং না হলে হয়তো তাসের ঘরের মতোই ধসে পড়ত ভারতীয় ইনিংস।

/৮

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের এই লড়াই দেখে টুইট করেন তাঁর স্ত্রীও। তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, কীভাবে চোটের মধ্যেও দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁর প্রিয় মানুষটা। আবেগপ্রবণ প্রীতি অশ্বিন লেখেন, “এই লড়াইকে কীভাবে দেখব? একজন ভক্ত হিসাবে নাকি ওঁর স্ত্রী হিসাবে?” গত চার বছরে এই প্রথম কোনো টেস্ট ম্যাচে ১০০-র বেশি বল খেললেন অশ্বিন। তাও চোট নিয়ে ভারতের সংকটজনক পরিস্থিতিতে। শুধু ম্যাচের নায়ক তো ননই, এই ‘জয়’ যেন মনে বুঝিয়ে দিল ভারতীয় দলে অশ্বিন-পান্থ-বিহারীর গুরুত্ব ঠিক কতটা? এই লড়াইয়ে মুগ্ধ মাস্টার ব্লাস্টার থেকে শুরু করে সহবাগ, দ্রাবিড় সকলেই...

Powered by Froala Editor