একটু রোজগারের আশায় ছোটো থেকেই কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। কেউ ঘরবাড়ি তৈরির কাজ তো কেউ কারখানার কাজ, পরিবারের বড়োদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করতে করতে সেটাকেই বানিয়ে ফেলেছেন জীবিকা। অন্য কোনো কাজের কথা তাঁরা ভাবতেও পারেননি। ভাববেনই বা কী করে? জীবনে স্কুলের চৌকাঠ পেরোনো তো দূরে থাক, নিজের নাম সই করতে পারেন না কেউ কেউ। মজুরি নেওয়ার কাগজে সইয়ের বদলে দেন টিপছাপ। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে এইসব শ্রমিকদের বেঁচে থাকার কাহিনি।
করোনা ভাইরাসের জেরে সাম্প্রতিক লকডাউনের মধ্যে বারবার উঠে আসছে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। অনেকে ভিনরাজ্যে কাজের জন্য গিয়ে আটকে পড়েছেন সেখানেই, কেউ আবার রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। বহু মানুষের দাবি মেনে অবশেষে আটকে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এসবের মধ্যেও যেন সম্পূর্ণ অন্য এক গল্পের জন্ম হল রাজস্থানের একটি গ্রামে। লকডাউনের এই সময়টায় শ্রমিকদের জীবনটাই যেন বদলে গেল এক লহমায়। তাঁরা আর নিরক্ষর নন। কাজের অবকাশের মধ্যে একটু একটু করে অক্ষরপরিচয় আয়ত্ত করেছেন তাঁরা।
রাজস্থানের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম দোদিয়ানা। গ্রামের ১৯ জন শ্রমিক কাজের সন্ধানে কেউ গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশ, কেউ আবার রাজস্থানেরই অন্য জেলায়। তবে ফিরে এসে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে থাকার অনুমতি পেলেন না তাঁরা। গ্রামের একটি হাই স্কুলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তাঁদের। আর এই সময়টাই বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবন।
প্রতিদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি থেকে খানিকটা অবকাশ পেয়েছেন এই ১৯ জন শ্রমিক। অন্যদিকে লকডাউনের জেরে পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষকদেরও অন্য কোনো কাজ নেই। এই শ্রমিকদেরই ছাত্র মনে করে শিক্ষাদান করতে শুরু করলেন তাঁরা। আর একমাসের শেষে তাঁদের অনেকেই এখন নাম সই থেকে শুরু করে সংখ্যা গুনতেও শিখে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার মোবাইল ফোনে কোনো পরিচিত ব্যক্তির নম্বর সেভ করা এমনকি ডায়াল করাও শিখে গিয়েছেন।
অক্ষর পরিচয়ের অভাবে অনেক প্রয়োজনীয় কাজের জন্যই অন্য ব্যক্তির সাহায্য নিতে হত এই শ্রমিকদের। তাঁদের শিক্ষার অভাব নিয়ে হাসিঠাট্টাও করতেন অনেকে। তবে এবার থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজটুকু তাঁরা নিজেরাই করে নিতে পারবেন। সেইসঙ্গে মজুরির খাতায় সই করতে কলম ধরবেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই খুশি কোয়ারেন্টাইনে থাকা শ্রমিকরা। সেইসঙ্গে নতুন ছাত্রদের শিক্ষা দিতে পেরে খুশি শিক্ষকরাও।