হ্যারি পটারের ২০ বছরে ‘নতুন সিনেমা’ লাহোরের বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রস্তুতি ছিল আগে থেকেই। সেই অনুযায়ী গোটা ক্যাম্পাস সেজে উঠেছে। হলের সামনে এসে জড়ো হয়েছেন বর্তমান পড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রাক্তনী সকলেই। মঞ্চে, আলোর নিচে এসে থামে একটি চেয়ার। তাতে বিরাট রোব গায়ে জড়িয়ে বসে আছেন প্রিন্সিপাল। আর তাঁকে ঘিরে আছেন গ্রিফিন্ডোরের পড়ুয়ারা। না, এই গ্রিফিন্ডোর হগওয়ার্টসের সেই বিখ্যাত হাউসটি নয়, যার সদস্য ছিলেন হ্যারি পটার। অথবা সেই হাউসটিই।

দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে সেই হগওয়ার্টস হাজির হয়েছে লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজ ইউনিভার্সিটির (Lahore Government College University) প্রাঙ্গনে। এমন একটা বছরে, যে বছর হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম সিনেমার ২০ বছর এবং শেষ সিনেমার ১০ বছর। সারা পৃথিবীব্যাপী হ্যারি পটার ভক্তরা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এই বছর। আর এর মধ্যেই পাকিস্তানের লাহোরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আয়োজন করে ফেলেছেন সপ্তাহব্যাপী হ্যারি পটার উৎসবের (Harry Potter Festival)।

গতকাল উদ্বোধন হয়ে গেল হ্যারি পটার উৎসবের। চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর এই উৎসবের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ হ্যারি পটারের থিমের ওপর আধারিত নতুন সিনেমা (Fan-Made Movie) ‘দ্য লাস্ট ফলোয়ার অ্যান্ড দ্য রেজারেকশন অফ ভলডেমর্ট’। লাহোর জিসি ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা মিলেই বানিয়েছেন এই নতুন ছবি। হ্যারি পটার সিরিজের শেষে হ্যারি এবং তাঁর বন্ধুরা মিলে অন্ধকারের ঈশ্বর ভলডেমর্টকে হত্যা করে। কিন্তু সেখানেই কি সব শেষ হয়ে যায়? শয়তানরা যে নানা সময় নতুন করে জেগে ওঠে। সেখান থেকেই শুরু এই কাহিনির। হ্যারি পটারের মূল কাহিনির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কাহিনির গঠনে সাদৃশ্য আছে। এখানেও শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বন্ধুত্বই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার। আর সাদৃশ্য আছে হগওয়ার্টসের চেহারায়।

উপন্যাসের হগওয়ার্টসকে ফুটিয়ে তুলতে ইংল্যান্ডের নানা জায়গা মিলে হ্যারি পটারের শুটিং হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত আলনুইক দুর্গটিও। কিন্তু হগওয়ার্টসের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি মিল রয়েছে লাহোর জিসি ইউনিভার্সিটির গঠনের। ১৮৬৪ সালে তৈরি অট্টালিকাটিই যেন হুবহু হগওয়ার্টস বহু পড়ুয়াই এই সাদৃশ্যের কথা ভেবেছেন নানা সময়। আর ২০১৮ সালে তাঁরাই পরিকল্পনা করলেন, হ্যারি পটারের থিমের ওপর যদি আরেকটি সিনেমার শুটিং করা যায় এখানে? যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। এর মাঝে এসে পড়ল করোনা অতিমারী। তবে সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে মুক্তি পেল সেই সিনেমা। আপাতত জিসি কলেজের প্রেক্ষাগৃহেই সিনেমাটি দেখা যাবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তারপর অন্য মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন
পশ্চিমবঙ্গের রেশম দিয়ে তৈরি হয়েছিল হ্যারি পটারের টাই!

পাকিস্তানের মাটিতেও হ্যারি পটার ভক্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে সেখানে এমন উৎসবের আয়োজন এই প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই জিসি ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া এবং প্রাক্তনী ছাড়া বাকিরাও যথেষ্ট উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে কিছু মুসলিম মৌলবাদী এমন উৎসবের নিন্দাও করেছেন। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু কথাবার্তা ছাড়া এখনও কোনো বড়ো ধরনের বাধা পাননি উদ্যোক্তারা। বরং বহু মানুষ প্রশংসাই জানিয়েছেন। শুধু হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাওলিং-এর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি উদ্যোক্তারা। তবে এমন একটা আয়োজনের কথা শুনলে তিনিও খুশি হবেন বলেই বিশ্বাস সকলের।

আরও পড়ুন
হ্যারি পটার উপন্যাসের রহস্যময় সাপ খুঁজে পাওয়া গেল অরুণাচলের জঙ্গলে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
হ্যারি পটারের মতো বিশ্বজয় করতে পারে 'ঠাকুরমার ঝুলি'-ও, কিন্তু কীভাবে?