ক্রাউড ফান্ডিং থেকে তৈরি সিনেমা – এতে আশ্চর্য হওয়ার তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু ‘দুধ পিঠের গাছ’ (Doodh Pither Gach) আমাদের সত্যিই আশ্চর্য করেছিল। একটি সিনেমা তৈরির জন্য এগিয়ে এসেছিলেন গোটা একটি গ্রামের মানুষ। প্রত্যেকে নিজেদের সাধ্যমতো অর্থ তুলে দিয়েছিলেন পরিচালক উজ্জ্বল বসুর হাতে। তিলে তিলে সংগ্রহ করা ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে শুরু হয়েছিল সিনেমার কাজ। তারপর একাধিক প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রেক্ষাগৃহের মুখ দেখেছে সিনেমাটি। মুগ্ধ করেছে দর্শকদেরও। আর এবার ‘তেলাঙ্গানা বেঙ্গলি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ (Telangana Bengali Film Festival) থেকে পুরস্কার জিতে নিল ‘দুধ পিঠের গাছ’। একটি নয়, একসঙ্গে ৬টি পুরস্কার জিতে নিল সিনেমাটি।
“এর থেকে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে? যেভাবে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে, তাতে প্রত্যাশা জমেছিল অনেকটাই।” বলছিলেন ছবির সম্পাদক অনির্বান মাইতি। আর সেই প্রত্যাশা যেন অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। একটি প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র উৎসবের স্বীকৃতি ছাড়া আর কীই বা চাহিদা থাকতে পারে? পরিচালক উজ্জ্বল বসুর কথায়, "সারা দেশেই তো বাঙালিরা ছড়িয়ে রয়েছেন। আমরা সমস্ত বাংলা সিনেমা তাঁদের কাছে হাজির করতে পারি না। সেখানে এই ধরনের চলচ্চিত্র উৎসবগুলি এগিয়ে আসছে, এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।" ২০১৭ সাল থেকে তেলাঙ্গানা সরকারের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের সহায়তায় আয়োজিত হয়ে আসছে বাংলা ভাষার সিনেমার এই উৎসব ‘আয়না’। মাঝে ২০২০ সালে অতিমারীর কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ-বছর বিগত দুই বছরের সিনেমাগুলি একসঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে আয়না। আর সেখানেই সেরা নবাগত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন উজ্জ্বল বসু। সেরা সিনেমাটোগ্রাফারের স্বীকৃতি পেয়েছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেরা সুরকার জয় সরকার। এছাড়াও সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন কৌশিক রায় এবং বেণী বসু। সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেলেন হরশিল দাস।
“আয়না-র কাজ আমি আগেও দেখেছি। ওঁরা যেভাবে যত্ন নিয়ে প্রতিটি ছবির প্রদর্শনী করেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।” বলছিলেন অনির্বান। সেখানেই গত কাল এবং পরশু প্রদর্শিত হল ‘দুধ পিঠের গাছ’। উজ্জ্বল নিজে দেখে এলেন সেই আয়োজন। হায়দ্রাবাদ শহরে বসেও তাঁর একবারের জন্য মনে হয়নি তিনি বাংলার বাইরে আছেন। "সম্পূর্ণ আয়োজনের মধ্যে একটা বাঙালিয়ানার ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে," বলছিলেন তিনি। আড়ংঘাটার নিজের গল্প নিয়ে তৈরি এই সিনেমা এবার পৌঁছে গেল ভিনরাজ্যেও। ‘দুধ পিঠের গাছ’ তো আসলে এক স্বপ্নের কথা বলে। সিনেমার সেই স্বপ্নের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে গ্রামবাসীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা এক স্বপ্নও। সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছতে পারার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?
Powered by Froala Editor