ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে পৃথিবীর নবতম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র

আংশিক স্বাধীনতা নয়, এবার ব্রিটিশ রাজশাসনের হাত থেকে পূর্ণ স্বরাজ ছিনিয়ে নিল ছোট্ট ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোজ (Barbados)। প্রায় ৩০০ বছরের দাসত্ব এবং আরও ৬০ বছরের রাজনৈতিক শাসনে ইতিহাস পিছনে ফেলে বিশ্বের নবীনতম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র (Newest Republic) হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে দেশটি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজধানী ব্রিজটাউনে শুরু হবে সেই অনুষ্ঠান। মধ্যরাত পর্যন্ত মিলিটারি কুচকাওয়াজ ও অনুষ্ঠান চলার পর ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে বার্বাডোজ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও আর বার্বাডোজের মহারানি পদে থাকবেন না। তাঁর জায়গায় অভিষিক্ত হবেন দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট সান্দ্রা ম্যাসন। নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্টই একজন মহিলা। এও এক ঐতিহাসিক ঘটনা বৈকি।

ক্যারিবিয়ান সাগরের সবচেয়ে পূর্বদিকে থাকা দ্বীপটির নাম বার্বাডোজ। অনুমান করা হয়, ষোড়শ শতক থেকেই এই দ্বীপে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের পা পড়েছে। তবে কোন দেশ প্রথম বার্বাডোজ অধিকার করেছিল, তা নিয়ে সংশয় আছে। ১৬২৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা প্রথম একটি পরিকল্পিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলে। অবশ্য সে উপনিবেশ ভারতের মতো বাণিজ্যিক উপনিবেশ ছিল না। সেখানে প্রতিটা মানুষকে ক্রীতদাসের মতো রেখে দেওয়া হত। ক্রমশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন বার্বাডোজের মানুষ। অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতকে একাধিক বিদ্রোহ ঘটেছে ছোট্ট দ্বীপটিতে। এরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের পক্ষেও বার্বাডোজে নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ১৯৬১ সালে খাতায় কলমে স্বাধীনতা পায় দ্বীপটি। তবে স্বাধীন মন্ত্রিসভা তৈরি হলেও বার্বাডোজের মহারানি হিসাবে থেকে যায় ইংল্যান্ডের রানির নামই। সেই ব্যবস্থারও ইতি ঘটল ৬০ বছর পরে।

৪৩২ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপ বার্বাডোজ। সেখানকার জনসংখ্যা মাত্র ২ লক্ষ ৮৫ হাজার। এর মধ্যেই করোনা অতিমারীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে সে-দেশের অর্থনীতি। বার্বাডোজের জিডিপি সমস্ত রেকর্ড ভেঙে সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একটি নতুন রাষ্ট্রের কাজ শুরু করা সত্যিই এক বড়ো চ্যালেঞ্জ। আর এর মধ্যে বিতর্কও তো কম নেই। একদিকে দেশের বিরোধী দলগুলির অনেকেই মনে করছে, পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণার উপযুক্ত সময় এটা নয়। অন্যদিকে বার্বাডোজের স্বাধীনতা উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে নিমন্ত্রিত হয়েছেন ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স চার্লস। যে ইংল্যান্ডের শোষণের বিরুদ্ধে এত লড়াই, সেই রাজপরিবারের প্রতিনিধিকে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে মেনে নিতে পারছেন না দেশের অনেক মানুষই। তবে এইসব বিতর্কের ওপরে এখন দেশকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে স্বাবলম্বী করে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে সবাই মিলে কাজ করতে হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সকলেই। সমস্ত বিতর্কের পরেও পূর্ণ স্বরাজের চেয়ে খুশির খবর যে আর কিছু হতে পারে না।

Powered by Froala Editor