পশ্চিমবঙ্গের রেশম দিয়ে তৈরি হয়েছিল হ্যারি পটারের টাই!

/১২

২০০১ সাল। আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগের কথা। স্টিভেন স্পিলবার্গ তখন নতুন একটি সিনেমার দায়িত্ব পেয়েছেন। বেশ কয়েকটা সিনের চূড়ান্ত খসড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কলা-কুশলী নির্বাচনও প্রায় সম্পূর্ণ। তবে হঠাৎই সেই সিনেমার কাজ ছেড়ে দিলেন তিনি। পরে অবশ্য সেই সিনেমা তৈরি হয়েছিল। সম্পূর্ণ সিরিজ তৈরি হয়েছিল। আর জনপ্রিয়তায় স্পিলবার্গের সিনেমাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে সেই সিরিজ। আর কিছু নয়, সিরিজটির নাম ‘হ্যারি পটার’ (Harry Potter)। শিশুতোষ সিনেমা বানাতে চাননি স্পিলবার্গ। যদিও হ্যারি পটার সিরিজ ৮ থেকে ৮০ সকলেরই মন জয় করে নিয়েছ।

/১২

গতকাল ‘হ্যারি পটার’ ফিল্ম সিরিজ ২০ বছর পূর্ণ করল। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোজফার্স স্টোন’। সিরিজের শেষ সিনেমাটিও মুক্তি পেয়েছে ১০ বছর আগে। তবু হ্যারি পটারকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে উন্মাদনার শেষ নেই। গতকাল হ্যারি পটারের ২০ বছরের কথা মাথায় রেখে অনেক শহরে উৎসবেরও আয়োজন করেছিলেন ভক্তরা।

/১২

সিরিজের প্রথম সিনেমা থেকেই তারকার সম্মান পেতে শুরু করেন ড্যানিয়েল র‍্যাডক্লিফ, রুপার্ট গ্রিন্ট এবং এমা ওয়াটসন। র‍্যাডক্লিফকে ছাড়া হ্যারি পটার ভাবাই যায় না, এমনটাও মনে করেন অনেকেই। তবে র‍্যাডক্লিফের আগেও একজন হ্যারি পটারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। না, দর্শকরা তাঁকে পর্দায় দেখার সুযোগ পাননি। কারণ মাত্র ৬টি সিনের পরেই বন্ধ হয়ে যায় প্রথম হ্যারি পটারের শুটিং। চুক্তি ছেড়ে দেন পরিচালক স্পিলবার্গ। স্পিলবার্গের পরিচালনায় হ্যারি পটার ছিলেন ‘সিক্সথ সেন্স’ খ্যাত হ্যালে জোয়েল অসমেন্ট।

/১২

হ্যারি পটারের নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা গল্পও। কাল্পনিক বাস্তবতার উপর নির্মিত সিনেমাটির প্রতিটা সাজপোশাক দর্শকদের মন কেড়েছিল। তবে এই সেটের সবচেয়ে দামি পোশাকটাকে আলাদা করে খেয়াল করেননি কেউই। কারণ সেটি হল হগওয়ার্টসের স্কুলড্রেস। হ্যাঁ, টাই-সোয়েটার আর সাধারণ প্যান্ট-শার্ট। তবে তার পিছনেই কম খরচ করতে হয়নি। টাইটি ছিল সিল্কের। আর তার রেশম আমদানি করা হয়েছিল খোদ পশ্চিমবঙ্গ থেকে। সোয়াটারের উল আমদানি করা হয়েছিল নরওয়ে থেকে।

/১২

তেমনই অ্যানিমেশনে তৈরি অসংখ্য কাল্পনিক জীবজন্তুর মধ্যে খাঁটি বাস্তব থেকে উঠে আসা প্রাণীদেরও আলাদা করে খেয়াল করেন না অনেকেই। অথচ হ্যারির ৪টি পেঁচার বাহিনী বা রনের ইঁদুরের বাহিনীকে বাদ দিলে কাহিনিই সম্পূর্ণ হয় না। এইসমস্ত বাস্তব প্রাণীদেরও যেতে হয়েছিল কাস্টিং ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে। ইউনিটের বিশেষ অ্যানিম্যাল প্রোডাকশন টিম অনেক আগে থেকেই নানা রকম জিনের সংমিশ্রন ঘটিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন। তারপর সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ‘কলাকুশলী’-দের।

/১২

হ্যারি পটারের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য অবশ্যই কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের মেলবন্ধন। কখনও হগওয়ার্টসের বর্ণনায় উঠে এসেছে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরের দৃশ্য। আবার কখনও বাস্তব ইতিহাসের চরিত্রই এসে পড়েছেন হগওয়ার্টসে। হ্যাঁ, তাঁর নাম নিকোলাস ফ্ল্যামেল। সিরিজের প্রথম গল্পেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় দর্শকদের। ১৪ শতকের ফ্রান্সে সত্যিই ফ্ল্যামেল নামে একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। এমনকি গল্পের ফ্ল্যামেলের সঙ্গে তাঁর মিল, দুজনের অ্যালকেমির চর্চা। ফরাসি ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর জানা গিয়েছিল সেই ইতিহাস।

/১২

ল্যাটিন ভাষা সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান জে. কে. রাওলিং-এর। হ্যারি পটার সিরিজের মন্ত্রগুলি তাই সেই ভাষাতেই লেখা। তবে শুধুই মন্ত্রগুলি নয়, হগওয়ার্টসের সমগ্র ব্যবস্থাপনার মধ্যে ল্যাটিন সংস্কৃতির ছবিই ফুটে ওঠে। এভাবেই ইতিহাসকে তুলে এনেছেন তিনি। আবার তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে ভারতবর্ষও। শুধুই পদ্মা এবং প্রভাতী পাতিল চরিত্রদুটির উপস্থিতির জন্যই নয়। বরং তাদের মাধ্যমেই ভারতের তন্ত্র চর্চার কথাও তুলে ধরেছেন রাওলিং।

/১২

হ্যারি পটার সিরিজ নিয়ে কিন্তু সবাই প্রশংসা করেছেন, এমন নয়। বরং মূল উপন্যাসগুলির সঙ্গে সিনেমার বেশ কিছু পার্থক্য হ্যারি পটার ভক্তদের পছন্দ হয়নি। তেমনই একটি বিষয় হল সিনেমায় পিভস নামক ভূতেদের অনুপস্থিতি। তবে এই চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য আজও অর্থ পান রিক মায়েল। হ্যাঁ, পর্দায় তাঁকে দেখা না গেলেও অভিনয়টা তিনি করেছিলেন। পরে ক্রিস কলম্বাসের খামখেয়ালিতে বাদ পড়ে সেই দৃশ্যগুলি।

/১২

আবার এখানে এমন একটি চরিত্র রয়েছে, যে চরিত্রে কেউ অভিনয় করেননি। অনেক দর্শকই খেয়াল করেননি, সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বারবার দেখা গিয়েছে ‘জিঞ্জার উইচকে’। পরে ‘ফ্যান্টাস্টিক বিসট’ সিনেমায় তাঁকে দেখা গেলেও হ্যারি পটার সিরিজে তিনি থেকে গিয়েছেন শুধুই সংবাদের পাতায়। আর এই সংবাদপত্রগুলির রূপ দিয়েছেন ‘মিনালিমা’ সংস্থার শিল্পীরা।

১০/১২

তবে হ্যারি পটার শুধু পর্দায় বা কাহিনিতেই অবাক করেনি। জানেন কি, ইংল্যান্ডের মহারানির চেয়েও জে. কে. রাওলিং-এর সম্পত্তির পরিমাণ বেশি! আর তার সবচেয়ে বড়ো কারণ অবশ্যই হ্যারি পটার। সব মিলিয়ে ৮০টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে হ্যারি পটারের ৭টি উপন্যাস। সঙ্গে ৮টি সিনেমা তো রয়েছেই। আজও তার চাহিদা কমেনি এতটুকু।

১১/১২

তবে ১০ বছর ধরে হ্যারির অনুপস্থিতি পছন্দ হচ্ছে না অনেকেরই। আবার কি ফিরে আসবে হ্যারি? ২০১৮ সালে এই প্রশ্নের উত্তরে রাওলিং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, না। হ্যারি পটারের কাহিনি সত্যিই শেষ হয়েছে। হ্যারি ভক্তরা তখন রীতিমতো খেপে উঠেছিলেন লেখিকার ওপর। তবে কোথাও তো সত্যিই শেষ করতে হয়।

১২/১২

শেষ করার আগে আরেকটি কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। হ্যারির ২০ বছরে এই স্মৃতিগুলোই তো সম্পদ। কিন্তু জানেন কি, হ্যারির ঠাকুরদার বাবার নাম কী? তিনিও হ্যারি পটার। এই ৮টি সিনেমার সিরিজে তাঁকে দেখা না গেলেও ‘ফ্যান্টাস্টিক বিসট’-এ তাঁর প্রসঙ্গ আছে। তাহলে হ্যারি পটারের কাহিনি শেষ হলেও আবার নতুন কোনো হ্যারি পটার কি আসতে পারেন না? সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না অবশ্য।

Powered by Froala Editor

More From Author See More