ভক্তদের অনুপস্থিতিতেই হল পুরীর স্নানযাত্রা, বাতিল ইসকনের নগর পরিক্রমণ

'রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম'; ভাবলেই কেমন আতঙ্ক জন্মায় এই সময়ে। করোনা সংক্রমণ রুখতে এখন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়। অথচ দেখতে দেখতে এগিয়ে এল আরও একটা রথযাত্রা। বাঙালি তথা সমস্ত বৈষ্ণব ও হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। জাগতিক পৃথিবীর সমস্ত মায়া থেকে স্বর্গীয় শান্তির দেশে নিয়ে যায় জগন্নাথদেবের রথের দড়ি। কিন্তু এবার আক্ষরিক অর্থেই ভক্তদের জীবন সংকট ডেকে আনতে পারে মানুষের ভিড়। আর তাই ইতিহাসে প্রথমবার রথযাত্রার সময় জুড়ে এক অদ্ভুত নীরবতা।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশমতো, সমস্ত মন্দির এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দরজাই খুলে দেওয়া হয়েছে গত ১ জুন। ফলে রথযাত্রার নিয়মমাফিক পূজা উপাচারের ব্যবস্থা করতে আর আপত্তি নেই। কিন্তু ভক্তদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ভিড় এড়াতে চাইছেন পুরী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ। ওড়িশা সরকারও এই সিদ্ধান্তে সহমত জানিয়েছে। আর তাই শুক্রবার স্নান মন্দিরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার অনুষ্ঠান ছিল একেবারেই জনশূন্য। কোনো ভক্তকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি মন্দিরের ভিতর। কেবলমাত্র মন্দিরের সেবায়েতরাই উপাচার মেনে বিগ্রহের স্নান এবং পোশাক বদলের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

অন্যদিকে ৪৮ বছরের প্রথায় ছেদ পড়ছে ইসকন কলকাতাতেও। কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবছর রাজপথে নামবে না জগন্নাথের রথ। অনুষ্ঠানের যাবতীয় আয়োজন হবে মন্দির প্রাঙ্গণেই। সম্ভবত মায়াপুর ইসকন কর্তৃপক্ষও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। তবে এখনও তেমন কিছু জানানো হয়নি।

একদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে ঘিরে জন্ম নিচ্ছে একুশ শতকের নতুন ধরনের কুসংস্কার, আর অন্যদিকে ভক্তদের সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞানবাদী চিকিৎসকদের উপরেই ভরসা রাখছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। ধর্ম তো শুধুই মানুষকে আধ্যাত্মিক জগতে আবদ্ধ রাখে না, প্রকৃত ধর্ম মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতেও শেখায়। আর এই বিশ্বব্যাপী সংকটের মধ্যে যে সেটাই ভীষণভাবে দরকার। শুধু সেই পাশে দাঁড়ানোটা যেন হয় উপযুক্ত শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ে তবেই।

আরও পড়ুন
করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় ৩০টি মহিলা বাঁদর, উঠছে প্রশ্ন

Powered by Froala Editor

More From Author See More