জলজ্যান্ত মানুষকে মেরে তার মাংস খাওয়া, সাম্প্রতিক পৃথিবীতেও রয়েছে বহু উদাহরণ

কয়েকদিন আগেই দুটো লাইন শরীর কাঁপিয়ে ছাড়ল - 

◼I have only just realized that I have been living all these years in a place where four thousand years they have been eating human flesh.

◼Perhaps there are still children who have not eaten men? Save the children...

হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, ‘HUMAN FLESH’। চাইনিজ রাইটার লু সানের গল্প ‘A Madman's Diary’-তে একটা ছোট্ট পরিবারের কথা বলা হয়েছে, যেখানে প্রতিটা ছেলেমেয়ে তাদের পূর্বসূরির মাংস খেয়ে বেড়ে উঠছে। ১৯১৮ সালে গল্পটি লেখা হয়। আর আজ ২০২০। তবে ভয়টা কোথাও একটা থেকেই গেছে, যেখানে আমাদের ভারতকে ২০১৭ সালেও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ন'বছর বয়সি নাবালককে ছ টুকরো করে কেটে ১৬ বছরের যুবক তার উদরপূর্তি করেছেন। এর আগেও ২০০৭ সালে সুরিন্দার কলি নামে এক পরিচারক কুড়ি জন মহিলা ও শিশুকে ধর্ষণ করার পর কেটে দিব্বি খেয়ে ফেলেন। ঘটনাটা ‘নয়ডা সিরিয়াল হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। 

আরও পড়ুন
২০৫ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতার সেন্ট অ্যান্ড্রু'জ চার্চের অংশ

২০০০ সালে চাইনিজ চিত্রশিল্পী ঝু ইউ সাংহাইয়ের ‘ফাক অফ’ প্রদর্শনীতে ‘শক আর্ট’ হিসেবে ‘ইটিং পিউপল্’ নামে একটি কাজ প্রদর্শন করেন। বলা হয়, মূলত নরখাদক মানবদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আনতেই তিনি ভ্রূণ সহ সত্যিকারের মানবদেহ প্রস্তুত করে রান্না করেছিলেন এবং সেটাকে খেয়েও নিয়েছিলেন। এরপর চাইনিজ মিনিস্ট্রি অফ কালচার চিনা জনগণের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের উল্লেখ করে সামাজিক সংস্কৃতি, প্রাণী নির্যাতন, লাশ এবং যৌনতা সম্পর্কিত প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি ঝু ইউকে এই কাজের জন্যে অভিযুক্তও করে। যদিও স্ন্যোপাস এবং অন্যান্য শহুরে কিংবদন্তি সাইটগুলোর মতে ঝু ইউ-এর ব্যবহৃত ভ্রূণ আসলে হাঁসের শরীর ও পুতুলের মাথা দিয়ে নির্মিত, যা শুধুমাত্র একটা ভয়ংকর প্রতিবাদী নিদর্শন।

আরও পড়ুন
পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হতে চলেছে ২০২০, ভেঙে যাবে আগেকার সব রেকর্ড!

‘ক্যানিবালিজম’ হচ্ছে একই প্রজাতির অন্য কোনও জীবকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করার প্রথা। শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ ‘ইটিং হিউম্যানস। লক্ষ করলে জানা যায়, ‘ক্যানিবালিজম’ এসেছে স্প্যানিশ শব্দ ‘ক্যারিবস’ থেকে, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি বিশেষ উপজাতি। এদের মধ্যেই নরখাদ্য প্রথার অনুশীলন ও অভ্যেস ছিল। এই কিংবদন্তির যথার্থতা নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও, সংস্কৃতিতে প্রকৃত নরমাংসবাদের বিস্তার এখান থেকেই। নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশে, মেলানেশিয়ার কিছু অংশে মাংসের বাজার রমরমিয়ে চলত। ফিজি একসময় ‘ক্যানিবাল দ্বীপপুঞ্জ’ নামে পরিচিত ছিল। আমাজন বেসিন, কঙ্গো এবং নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগণ সহ বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নরখাদকবাদের অস্তিত্ব রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, নিয়ান্ডারথালরা প্রাকৃতিকভাবে আধুনিক মানুষ খেয়েছিল। প্রাচীন মিশর, রোমান মিশর এবং মিশরে দুর্ভিক্ষের সময়(১১৯৯-১২০২) নরখাদকবাদ প্রচলিত ছিল। এমনকি চিন, কোরিয়া সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ক্যানিবালিজম এখনও বর্তমান। আর ভারতও তার থেকে বিরত নয়। 

আরও পড়ুন
৫,৭০০ বছর আগেকার চুইং গাম থেকে পাওয়া গেল একটি মেয়ের ইতিহাস

জিসুযো কুয়াবারার মতে, চাইনিজরা চারটি প্রক্রিয়ায় মানুষের মাংস রেঁধে থাকেন:

আরও পড়ুন
নালা থেকে উদ্ধার শতাব্দীপ্রাচীন কামান, কলকাতার অজানা ইতিহাস পড়ে ছিল পথেই

 ফু- কেটে শুকানো

আরও পড়ুন
ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার ম্যাচের মধ্যেই আহত স্মিথের ‘কনকাশন রিপ্লেসমেন্ট’ পেল অস্ট্রেলিয়া

 জেন্জ- সুপের সাথে সিদ্ধ 

 হাই- পচিয়ে কুচিকুচি করে কাটা

 লুয়ান- কাঁচা অবস্থায় কুচানো

২০১২ সালে বলা হয়, চিনে নরখাদকবাদ খুব সাধারণ একটি ঘটনা। সারা পৃথিবীর মানচিত্রে তাকালে বর্তমানে যেসব ঘটনাগুলো সামনে আসছে সেগুলো হল,

 ১। মার্চ ২০১৭, নর্থ বেয়েতে সাতচল্লিশ বছরের এক ভদ্রলোক সাতাত্তর বছর বয়সি এক ভদ্রমহিলাকে ধর্ষণ করার পর টুকরো টুকরো করে খেয়ে নেন। 

২। মে ২০১৩, সিরিয়ান সিভিল ওয়ারে একজন সৈনিকের শরীর মাঝখান থেকে চিরে তার মাংস খাওয়া হয়।

৩। জুলাই ২০১৩, লিনো রেঞ্জি নামে এক ভদ্রমহিলা তার ৭৩ বছর বয়সী মাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে প্রায় এক মাস ধরে রান্না করে খেয়েছিলেন।

৪। অক্টোবর ২০১৮, ইউক্রেনে একজন বাবা ও তার ছেলে পঁয়তাল্লিশটা লাশকে কেটে খেয়েছিলেন। 

৫। ফেব্রুয়ারি ২০১৯, স্পেনের অ্যালবারটো স্যানচজ গোমজ নামে একজন নিজের ছেষট্টি বছরের মাকে টুকরো টুকরো করে কেটে তেলে ভেজে খান।

৬। ডিসেম্বর ২০১৯, ক্রিকের একজন হেয়ারস্টাইলিস্টকে সিলিং-এ ঝুলিয়ে গ্রিল করে খাওয়া হয়।

এরপরেও কি বলবেন, ২০২০ সালে প্রকৃতি হঠাৎ মানবজাতির সঙ্গে নিষ্ঠুরতা করছে? বেড়ালের বাচ্চাকে বাবা হুলো খেয়ে নিলে আঃ উঃ করি আমরা। এদিকে সারা পৃথিবীব্যাপী এই হিউম্যান ক্যানিবালিজমের বিচরণ আমরা দিব্বি মেনে নিচ্ছি এবং ভারতবর্ষও এ বিষয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

তথ্যসূত্র: 

▪Selected Stories of Lu Hsun

▪https://en.m.wikipedia.org/wiki/Human_cannibalism

▪Reports from Times of India

▪https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_incidents_of_cannibalism

Powered by Froala Editor

More From Author See More