৯০ বছর আগেই খোঁজ মিলেছিল করোনার, প্রথম আক্রমণ ১৯৬৫ সালে

করোনা ভাইরাস। নতুন করে আর পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। এই বছরের শুরু থেকেই গোটা পৃথিবী এর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। একের পর এক মৃত্যুর কারণ হয়েছে এই ‘ছোট্ট’ জীবটি। এর আগে এই ভাইরাসের নামও শোনেনি যে কেউ; এরকমভাবে প্রভাব বিস্তারও হয়নি। তাই আপাতত এর ওষুধও নেই। দাঁড়ান! এখানে ছোট্ট একটা ভুল হয়ে গেছে। একটু শুধরে দেওয়া যাক। ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে সেটা ঠিক; করোনার এরকম অতিমাত্রায় সংক্রমণ আগে হয়নি এটাও ঠিক। কিন্তু, নাম শোনেনি কেউ— এটা কি ঠিক? অন্তত বিজ্ঞানীরা সেটা বলছেন না। করোনা আগেই ছিল, এবার শুধু রূপ বদলে আরও শক্তিশালী হয়ে আমাদের সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন
করোনা থেকে বাঁচতে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন, কিন্তু সকলের জন্য এক্ষুনি নয়

১৯৩১ সাল। ডাঃ অস্কার শেফ্রায়েড নামের এক পশু চিকিৎসক তাঁর গবেষণায় প্রথম একটি ভাইরাসের উল্লেখ করেন। সেখানে এই নতুন ভাইরাসকে ‘ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস ভাইরাস’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। অর্থাৎ, সরাসরি ফুসফুসে এটি আঘাত হানে; ফলস্বরূপ শ্বাসকষ্ট ও নানাবিধ অসুখ। সেই প্রথম বিশ্ব শুনল করোনা ভাইরাসের নাম। অবশ্য তখনও অবধি এটি ছিল মূলত প্রাণীদের রোগ। প্রাণী বলতে অবশ্যই মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীব। বছর তিরিশেক পর, ষাটের দশকে মানুষের শরীরেও বাসা বাঁধল এই ভাইরাস। ১৯৬৫-তে আবিষ্কৃত এই ভাইরাসের নাম প্রথমে রাখা হয় ‘বি-৮১৪’। পরে চরিত্র ও জিন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটিও করোনা ভাইরাস; কিন্তু অন্য প্রকারের। যা মূলত মানুষের শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। যেখান থেকে সাধারণ সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। এর মারণ ক্ষমতা তখনও প্রকাশ পায়নি। অন্যান্য জ্বরের মতো এটাও ছিল সাধারণ।

আরও পড়ুন
মহামারীতে ছারখার বাংলা, মৃত ৫০ হাজারেরও বেশি, বাদ গেল না সাহেবরাও

অবস্থা এখানেই থেমে থাকলে হয়ত ভালোই হত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জল গড়িয়েছে আরও বহুদূর। যত দিন এগোতে থাকে, করোনার চরিত্র বদলাতে থাকে। শুধু তাই নয়, সামনে আসতে থাকে আরও নতুন নতুন প্রকারের। শুরুটা হয় ২০০২-০৩ সাল নাগাদ। দক্ষিণ চিনে অনেকের মধ্যে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাক্তাররা নামও দিলেন, ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’; সংক্ষেপে সার্স। ওই সময় শুধু চিনে নয়, দুই আমেরিকা-সহ ইউরোপ, এশিয়ার অনেক জায়গাই এই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমবার করোনার দাপট সামনে এল। আগের থেকে যেন আলাদা, শক্তিশালী।

আরও পড়ুন
সমুদ্রে দাঁড়িয়ে সংক্রমিত জাহাজ, মৃত অধিকাংশ যাত্রী, কোয়ারেন্টাইনের শুরু সেখানেই

সাম্প্রতিক সময় আরও পাঁচ রকমের করোনার প্রকারভেদ পাওয়া গেছে। এখনকার ভাইরাসটির নাম ‘সার্স-কোভ-২’। এটি প্রধানত বিটা-করোনা ভাইরাস প্রজাতির অন্তর্গত। মূল জেনেটিক উপাদান হল আরএনএ। শুধু শ্বাসকষ্ট নয়, এবার অন্যান্য আরও উপসর্গ নিয়ে হাজির হল এই ভাইরাস। প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার পর যেন চরিত্র বদলে গেছে বেশ কিছুটা। যা ২০২০-এর শুরু থেকে বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞানী, ডাক্তার, গবেষক— সবাই চেষ্টায় আছেন প্রতিষেধক খোঁজার। আবারও ভোল বদলানোর আগে যাতে কবজা করা যায় একে, তারই চেষ্টা চলছে।