‘আঠেরো বছর বয়সী সোমেন চন্দের লেখার শিল্পশৈলী ভীষণভাবে বিস্মিত করেছে’ : দিলীপ মজুমদার

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তরুণ বয়সে সক্রিয় বাম রাজনীতি করেছেন। বিস্মৃতির আড়াল থেকে সোমেন চন্দের সাহিত্যকীর্তিকে সামনে নিয়ে আসার পিছনে ছিল তাঁর নিরলস, ঐকান্তিক পরিশ্রম। এই কাজ করতে গিয়ে পেয়েছিলেন মুজফফর আহমেদের সান্নিধ্য। তিনি দিলীপ মজুমদার। সোমেন চন্দের রচনা সংকলনের প্রথম প্রকাশ তাঁরই সম্পাদনায়, ১৯৭৩ সালে। পরবর্তীকালে তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয়ও ছিল ‘প্রগতি লেখক আন্দোলনের প্রথম পর্যায় ও সোমেন চন্দের সাহিত্যচর্চা’। ২০০৯ সালে অনুরূপ বিষয়ে কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সিনিয়র ফেলোশিপ লাভ করেন। সোমেন চন্দের জন্মশতবর্ষে প্রহরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অকপট দিলীপ মজুমদার। শুনলেন সোহম দাস। আজ দ্বিতীয় পর্ব... 

‘সোমেন চন্দের সাহিত্যচর্চা’ বইতে আপনি রুশ বিপ্লব ও সাহিত্যের প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন। সোমেন চন্দের লেখা সেখানে অনেকটা স্বতন্ত্র মনে হয়েছে। রুশ প্রভাব তাঁর লেখায় কতখানি ছিল বলে আপনি মনে করেন? 

এখানে আমার একটা সীমাবদ্ধতার কথা আমি বলব। তিনি রাশিয়ার কী কী বই পড়েছিলেন, তার কোনো বিস্তৃত তালিকা তো পাই না। তবে পড়েছিলেন তো ঠিকই। কিন্তু সোমেন চন্দের যাবতীয় লেখা পড়ে আমার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় যে, এই যে আমরা বিজ্ঞানে যাকে বলি ‘অঙ্গার-আত্তিকরণ’, তিনি নিশ্চিতভাবে সেসব লেখা পড়ে সেই অঙ্গার-আত্তীকরণ করে ফেলেছিলেন। সেজন্যে, তাঁর লেখায় সেই প্রভাব খুঁজে পাওয়া খুব মুস্কিল। হয়তো, গোর্কির ‘মাদার’ তিনি পড়েছিলেন, জানি না সেটা। কিন্তু সেই প্রভাবটা অবিকলভাবে আসেনি। তিনি তাঁর নিজস্ব রসে সেটা জারিত করেছেন। ‘একটি রাত’ গল্পটি পড়লে বোঝা যাবে, তা পুরো অন্যরকম। গোর্কির মধ্যে সামান্য হলেও প্রোপাগান্ডিস্ট ব্যাপার ছিল, কিন্তু সোমেনের লেখায় অনেক বেশি উঠে আসছে শিল্পসত্তা। এটা আমাকে ভীষণ বিস্মিত করেছে যে, সোমেন চন্দের লেখায় সেভাবে কোথাও ব্যাপক প্রচার নেই। ‘কমিউনিস্ট’ এই কথাটা তাঁর কোনো গল্পেও আমি পেয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। অথচ, তার মূল ভাবধারাটা আছে। গরিবের জন্য সমবেদনা, এই ব্যাপারটা তো রয়েছে। এছাড়া, ‘মহাপ্রয়াণ’ গল্পটা যদি বলি, সেখানে চেখভের ‘দ্য ডেথ অফ আ ক্লার্ক’ গল্পটির আদল তিনি নিয়েছেন, কিন্তু গল্পটাকে গড়েছেন একেবারে অন্যরকমভাবে। সেক্ষেত্রে অন্য কারও লেখার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, একথা আমি বলতে পারি না।

মানুষের মননের সূক্ষ্ম অনুভূতিপ্রেমানুভূতি যেমন আমরা পাই তাঁর প্রথম দিকে লেখা ‘মরুদ্যান’, ‘ভাল না-লাগার শেষ’, ‘অমিল’ বা ‘শিশু তপন’-এর মতো গল্পেআবার স্বদেশ বা সমাজ-চেতনার গভীরতা রয়েছে তাঁর বিখ্যাত কিছু গল্পে যেমন ‘ইঁদুর’, ‘বনস্পতি’, ‘দাঙ্গা’, ‘প্রত্যাবর্তন একুশ বছর সাড়ে নয় মাস বয়স ছিল যাঁর আয়ুষ্কালতার উপর একজন রীতিমতো ব্যস্ত রাজনীতিক  সমাজকর্মী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে লেখায় এমন গভীর সাহিত্যিক উৎকর্ষ  পরিণতবোধ দেখিয়েছেনএই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

আরও পড়ুন
দেশের কাজে, সমাজের কাজে সোমেন চন্দের ত্যাগ, ঐকান্তিকতা প্রশ্নাতীত : দিলীপ মজুমদার

এটা তো আমার কাছেও খুব বিস্ময়কর। তুমি ‘ইঁদুর’ গল্পটি নিশ্চয় পড়েছ। ওখানে সুকুমার নামের যে ছেলেটি, আসলে তো সোমেন নিজেই, তার বাবা-মাকে দেখা যাচ্ছে ঝগড়া করতে, কুৎসিত গালাগালি প্রয়োগ করতে, তারপরেই একটা বাক্য আসছে – ‘মধ্যরাত্রির ইতিহাস আরও বিস্ময়কর।’ মধ্যরাত্রির ইতিহাসের মতো, আঠেরো বছরের একটা ছেলে ওইরকম লিখল কীকরে, সেটাও তো বিস্ময়কর। আমি তো এরকম আর কোথাও পাইনি। এছাড়া, ধরো, সোমেন চন্দের অন্যান্য অনালোচিত গল্পগুলো, যেমন ‘মুহূর্ত’, ‘সত্যবতীর বিদায়;’, ‘গান’ এই গল্পগুলোও কী মারাত্মক। এগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা হওয়া উচিত। ‘সত্যবতীর বিদায়’-এ এরকম একটা লাইন আছে, সত্যবতীকে দেখতে কালো-কুচ্ছিত, কিন্তু তার বিশাল শরীরটা পেয়ে সে জগত ভুলে গেল। তারপরে সেটা নিয়ে বর্ণনাও আছে। সেই ১৯৩৭-৩৮ সালের ঢাকা, কলকাতার মতো বড় শহর তো ছিল না যে আরও অনেক লেখকের সান্নিধ্য বা সাহায্য পাচ্ছেন, সেখানের একটি সতেরো-আঠেরো বছরের ছেলের লেখায় এমন দেহজ বা কামজ চেতনা। এ জিনিস তো আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাতেও পাইনি। বরং ‘ইঁদুর’-এ এমন কথা আছে ‘আমি ফিরে এলাম’, ‘সাম্যবাদের গর্ব’ ইত্যাদি, তা একটু প্রচারমূলক। ‘সিগারেট’, ‘দাঙ্গা’ এগুলোতেও প্রচার অল্পবিস্তর রয়েছে। সেই তুলনায় এই ‘সত্যবতীর বিদায়’, ‘গান’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘অকল্পিত’, ‘মহাপ্রয়াণ’ এগুলো আরও সাংঘাতিক গল্প। ‘মহাপ্রয়াণ’-এর শেষে উনি লিখছেন, শোকসভা ভুলিয়া গিয়া বিপুল করতালি দিতে লাগিল। এই শিল্পশৈলী ওই সময়ে ঢাকায় বসে ওই বয়সের একটি ছেলে আয়ত্ত করছেন, এ একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। এটা খুব বড় আফসোস, এই ছেলেটির মধ্যে বিশালত্ব ছিল, কিন্তু সে শেষ হয়ে গেল খুব অল্প বয়সে।

আরও পড়ুন
‘শর্মিলার সঙ্গে ইয়ার্কির পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন মানিকদা’ – আলাপচারিতায় বরুণ চন্দ

‘বন্যা’ একটি দারুণ সময়োপযোগী উপন্যাস। সেখানে সোমেনের শব্দচয়ন, চমকের ব্যবহার, ভাবাবেগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি এক অনন্য পর্যায়ের। আঠেরো বছর বয়সের সোমেনের লেখায় পাওয়া যাচ্ছে এক গভীর শ্রেণী-চেতনা। কিন্তু এক্ষেত্রে বয়সকে মাথায় না রেখে যদি উপন্যাসটিকে আমরা দেখি, তাহলে দেখব, উপন্যাসের সমাপ্তিটি যেন খানিক ছোটগল্পপ্রতিম, যে ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। আপনি কি এ বিষয়ে একমত?

আরও পড়ুন
বহুদিন পাশে থাকার মধ্যে যে স্বস্তি, তাই দিতেন ইরফান: নুসরাত ইমরোজ তিশা

শ্রেণী চেতনার বিষয়টি, অর্থাৎ মধ্যবিত্তের মধ্যেও যে বিভাজন থাকতে পারে, সেটা তখনকার কমিউনিস্ট পার্টিও বুঝতে পেরেছিল কিনা সন্দেহ। সেটা সোমেন চন্দ বুঝে ফেলেছিলেন। তুমি যে প্রশ্নটা করলে, সেটার উত্তরের পিছনে একটা কারণ আছে। আমি এটা নির্মলবাবু, অর্থাৎ নির্মলকুমার ঘোষের মুখে শুনেছি। তিনি তখন হাওড়ার দাশনগরে থাকতেন। তাঁর সম্পাদিত কাগজ ‘বালিগঞ্জে’ সোমেনের ‘বন্যা’ বেরিয়েছিল। এই ‘বালিগঞ্জ’ আর ‘সবুজ বাংলার কথা’, প্রধানত এই দুটো কাগজেই সোমেনের বেশিরভাগ লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। নির্মলবাবু আমাকে বলেছিলেন, সোমেন এই উপন্যাসের একটা দ্বিতীয় খণ্ড লিখেছিলেন এবং সেটা নির্মলবাবুর কাছে দিয়েছিলেন সংশোধনের জন্য। নির্মলবাবু সেটা সংশোধন করে সোমেনকে দিয়েওছিলেন। তারপরেই তো ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটে গেল, তিনি নিহত হলেন। তারপরে সেসব কোথায় হারিয়ে গেল, কেউ জানে না। সুতরাং ওটা পেলে তোমার সিদ্ধান্তটা সঠিক না বেঠিক, সেটা বোঝা যেত।

আরও পড়ুন
‘আন্টার্কটিকা থেকে ফেরার পর, দেশ পত্রিকায় অভিজ্ঞতা লিখতে বললেন সাগরময় ঘোষ’

আয়ুষ্কালের নিরিখে সোমেন চন্দের সঙ্গে আরও একজন অকালে ঝরে যাওয়া সাহিত্যিকের তুলনা যদি আমরা করি, অর্থাৎ সুকান্ত ভট্টাচার্য, তাঁর লেখাতেও সমাজ-ভাবনা ও সাম্যবাদী চেতনা প্রবল। কিন্তু সুকান্ত যে খ্যাতি পেয়েছেন মৃত্যুর পরে, সোমেন তা একেবারেই পেলেন না কেন? তার অন্যতম কারণ কি সোমেনের মাধ্যম ছিল গল্প আর সুকান্তের কবিতা?

হ্যাঁ, তা তো কিছুটা বটেই, তুমি ঠিকই ধরেছ। এটা তো ঠিক যে, কবিতার একটা শক্তি আছেই, কবিতা কোনও সীমার মধ্যে থাকে না। কবিতা অনেকটাই অসীমের দিকে চলে যায়। রবীন্দ্রনাথ যেমন ‘গদ্য ও পদ্য’ প্রবন্ধে খুব সুন্দরভাবে দুটির পার্থক্য বুঝিয়েছিলেন, এছাড়া ‘ভাষা ও ছন্দ’-এ তিনি যেমন গদ্যের ভাষার সম্পর্কে লিখছেন – ‘মানবের প্রয়োজনে প্রাণ তার হয়ে আসে ক্ষীণ।’ এটা তো একটা কারণ বটেই। কিন্তু এছাড়াও, আরও একটা বড় কথা হচ্ছে, সুকান্ত ভট্টাচার্য তো আগাগোড়া কলকাতার মানুষ। কলকাতাতেই বসবাস করেছেন এবং সেসময়ের বুদ্ধিজীবীরাও সকলেই কলকাতায়। এবং তখনকার বুদ্ধিজীবী মানে বেশিরভাগই সিপিআইয়ের রাজনীতিক। সুকান্তের প্রচারটা ওঁদের দ্বারাই বেশি হয়েছে। সুকান্তকে উদ্ধৃত করা, তাঁকে দিয়ে কবিতা বলানো, ইত্যাদি তাঁরা করেছেন। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারটা পেয়েছিলেন। তার উপর সুকান্ত ভট্টাচার্য যেহেতু আমাদের রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় ছিলেন, এই ব্যাপারটাও কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু সোমেন চন্দ যখন মারা গেলেন, তারপরে দেশভাগ ইত্যাদি হওয়ার ফলে, নতুন করে চর্চাটা আর হয়নি। এখানকার কমিউনিস্ট পার্টির মানুষরাও করেননি, এছাড়া পূর্ববঙ্গ থেকে যাঁরা এদেশে চলে এসেছিলেন, তাঁরাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, সোমেন চন্দকে হাইলাইট করার চেষ্টাটা আর করলেন না। যেকারণেই সুকান্তের পপুলারিটি অনেক বেশি হয়ে গেল সোমেন চন্দের তুলনায়।

গত কয়েকবছরে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন যুক্তিবাদী ব্লগার ও লেখককে মৌলবাদী শক্তির হাতে নিহত হতে দেখেছি আমরা। ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে’ – এই কথার সূত্র ধরে এই ঘটনাগুলির সঙ্গে সোমেন চন্দের মৃত্যুর তুলনা কি আমরা করতে পারি?

না, একেবারেই দুটোকে মেলানো যাবে না। ব্লগারদের যে মৃত্যু, সেখানে তো অনেক বেশি ধর্মান্ধতার বিষয়। সোমেন চন্দের ক্ষেত্রে তো ধর্মান্ধতা ছিল না। অন্ধত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এঁরা সকলে শহীদ, একথা বলতে পার। কারণ, অন্ধত্ব তো ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সংকীর্ণ রাজনীতি, উভয় দিক থেকেই উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিনের একটি লেখার কথা বলি। কিছুদিন আগেই পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা ধর্মান্ধ মুসলমানদের হাতে অত্যাচারিত তো হয়ই, কিন্তু আমিও যদি সেখানে যাই, আমাকেও তারা মেরে দেবে।

সোমেনের জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু কাজ হচ্ছে। তাঁর কিছু অপ্রকাশিত গল্প প্রকাশ করা হয়েছেএছাড়াতাঁকে নিয়ে নানা উদ্যোগ  অনুষ্ঠান বিগত অনেক বছর ধরেই হয়ে আসছে এই বাংলায় সোমেনকে নিয়ে সেভাবে কতটা কাজ হয়েছে এবং আরও কীরকম কাজ হওয়া উচিত বলে আপনার মনে হয়?

এই বাংলায় কী কী কাজ হয়েছে, সেটা আমি আমার সম্পাদিত ‘সোমেন চন্দ রচনাসংগ্রহ’, যেটার অখণ্ড সংস্করণ এবছর বইমেলায় নবজাতক থেকে প্রকাশিত হয়েছে, সেই বইয়ের শেষে গ্রুপ করে করে দিয়েছি। তাঁর রচনাবলি কারা কারা প্রকাশ করেছে, তাঁর গল্প সংকলন কারা কারা প্রকাশ করেছে, তাঁর জীবনী এবং জীবনোপন্যাস কারা লিখেছেন, সেগুলো উল্লেখ করেছি। সেলিনা হোসেন লিখেছিলেন ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’, আমি ২০০০ সালে ‘শিল্পী আক্রান্ত’ বলে একটি জীবনী লিখেছিলাম, যেটার ভূমিকা লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। হায়াৎ মাহমুদ, বিশ্বজিৎ ঘোষ, আমিনুর রহমান সুলতান এমন অনেকেই লিখেছেন, তাঁদের কথা আমি উল্লেখ করে দিয়েছি। এছাড়া, অন্যান্য বই এবং অন্যান্য লেখায় তাঁর প্রসঙ্গ কীভাবে এসেছে, তার একটা তালিকা দিয়েছি। এবং, সর্বশেষ তালিকাটি যেটি দিয়েছি, সেটি হল, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে কবিতা, গল্প, আলোচনা যা যা হয়েছে, সেগুলির তথ্য। গতবছর কলকাতার একটি পত্রিকা ‘ক্র্যাকার’ এবং ত্রিপুরার একটি পত্রিকা ‘পূর্বমেঘ’ সোমেন চন্দ বিশেষ সংখ্যা করেছিল। ‘ঐকতান’ বলে একটি পত্রিকাও তাঁকে নিয়ে কাজ করেছে। তাদের কাজ আমার ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ হয়নি, কিন্তু কাজটাকে তো অস্বীকার করতে পারি না। যাইহোক, এই যা কাজ এখনও অবধি হয়েছে, তার মধ্যে একটা জায়গায় ঘাটতি আছে। তাঁর যে শিল্পসত্তা, অর্থাৎ, তাঁর লেখার যে শিল্পমূল্য, সেগুলো কিন্তু হয়নি। সেগুলো কিন্তু যথোচিতভাবে হওয়া প্রয়োজনীয়। একথা জান, এখন সাহিত্যে একটা স্ট্রাকচারাল অ্যানালিসিস চালু হয়েছে, অর্থাৎ শব্দ, বাক্যবন্ধ এগুলোকে ধরে ধরে বিশ্লেষণ করে লেখকের মনের ভিতর পৌঁছনো। সোমেন চন্দের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটাই হয়নি। আমার মতে, এই স্ট্রাকচারাল অ্যানালিসিসটাই ভীষণভাবে জরুরি।

Powered by Froala Editor