লকডাউন ফুরিয়ে এল, পরিযায়ী শ্রমিকরা কি আদৌ ফিরবেন কাজে?

করোনার থাবা এখনও সরেনি ভারতের ওপর থেকে। তার মধ্যেই স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। অফিস কাছারিও খুলছে। এমনই পরিস্থিতিতে আবারও কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন কিছু মানুষ। এই ‘কিছু’র সংখ্যাটা যে একদমই সামান্য নয়, সেটা লকডাউনের সময় জুড়ে দেখেছে গোটা দেশ। আজও দেখে চলেছে সেই ভয়াবহ অবস্থা। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েই। এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে তাঁরা গিয়েছিলেন কিছু পয়সা রোজগারের আশায়। করোনা সেখানে থাবা বসিয়েছে। এখন সমস্ত কারখানা, অফিসগুলো সেই কর্মীদের ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই মনোবল কি তাঁদের আছে এই মুহূর্তে?

মার্চের শেষের দিক থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে গোটা দেশে। এখনও যে সম্পূর্ণ উঠে গেছে, তা নয়। কিন্তু পরিস্থিতি আগের মতো নেই। সেই শুরুর দিন থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। ভিনরাজ্যে সংসার নিয়ে চলে গিয়েছিলেন কেবল একটু বেশি রোজগারের জন্য। যাতে পেটে একটু ভাত জোটে সবার। করোনা ভাইরাস এবং লকডাউন সেই পেটেই আঘাত দিল। এরই মধ্যে নির্দেশ এল বাড়ি ফিরে যাওয়ার। তারপর দেশ দেখেছে একের পর এক মর্মান্তিক দৃশ্যের। কোথাও ছোটো ছোটো সন্তানদের নিয়ে অসহায় পরিবারের রাস্তায় বসে থাকা, কখনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলার বাড়ি ফেরা। লেখায় হয়ত বর্ণনা করা যাবে না সেই দৃশ্যগুলোকে। তার মধ্যে ঘটে গেছে একের পর এক মৃত্যু। অন্য রাজ্যের তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেরও বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের অসহায় মৃত্যু দেখেছি আমরা। আর দেখেছি তাঁদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের।

আজ সমস্ত কোম্পানি তাঁদের অধীনে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। কেন? যদি না যায়, তাহলে কাজ থমকে থাকবে। সেইজন্য বাস, ট্রেন এমনকি প্লেনে করেও ফিরিয়ে আনতে রাজি তাঁরা। এখানেই প্রশ্ন তুলছেন একাংশ। এই মানুষগুলো তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিছু টাকা রোজগার করে। নিজের ঘর, গ্রাম ছেড়ে এসে তাঁরা যোগ দিয়েছিলেন। যখন বিপদ এল, তখন পাশে দাঁড়ানো যায়নি? আর্থিক দিক থেকে তো বটেই, মানসিকভাবেও কি পাশে থেকেছেন কেউ? কাজ বন্ধ হয়ে আছে, তাই এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অক্লান্ত চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে পরিযায়ী শ্রমিকরাও অপারগ। তাঁদের কাছে টাকা নেই, চাকরি নেই, খাবার নেই; বাধ্য হয়েই তাঁরা হয়ত ফিরে যাবেন কাজের জায়গায়। আবার সেই ভিন রাজ্যে যাওয়া। প্রশাসন কি নিজের রাজ্যে তাঁদের কাজ দিতে পারছে না? এমন পরিস্থিতিতে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল ভারতের আর্থিক ও কাজের চরিত্র নিয়ে। আর দোলাচলেই রয়ে গেল পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন।

আরও পড়ুন
একপ্রকার বাধ্য হয়েই ২০১৯-এ ঘর ছেড়েছেন প্রায় ৮ কোটি মানুষ, জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৮০ শতাংশ কর্মরত ভারতীয়ই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, জানাল গবেষণা