কতটা লবণ সইতে পারে ম্যানগ্রোভ? রহস্যভেদ ভারতীয় বিজ্ঞানীদের

সুন্দরবন তো বটেই, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক-সহ ভারতের সমগ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলেই বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম ধারক ম্যানগ্রোভ অরণ্য। কিন্তু সামুদ্রিক লবণাক্ত পরিবেশে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ কীভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে— তা আশ্চর্যকরই বটে। এবার সেই রহস্যেরই সমাধান দিলেন ভারতীয় গবেষকরা। তৈরি হল বিশ্বের সর্বপ্রথম ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের জিনোম সিকোয়েন্স। যা পরবর্তীতে বিপ্লব আনতে চলেছে কৃষিক্ষেত্রে।

ভুবনেশ্বরের ইনস্টিটিউট অফ লাইফ সায়েন্স এবং তামিলনাড়ুর এসআরএম ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির দুটি পৃথক গবেষক-দল জড়িত ছিলেন এই অধ্যায়নের সঙ্গে। মূল লক্ষ্য ছিল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির লবণ সহনশীলতার কারণ অনুসন্ধান। আর তা খুঁজে পেতেই জিন টেকনোলজির শরণাপন্ন হন তাঁরা। গবেষণার সাবজেক্ট হিসাবে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন ‘এভিসেনিয়া মেরিনা’ বা ধূসর ম্যানগ্রোভকে। ভারতীয় ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রায় ৭৫ শতাংশ অঞ্চলেই দেখা মেলে এই প্রজাতির।

ম্যানগ্রোভের এই প্রজাতির কার্যকারিতা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় গবেষকরা। সমুদ্রের জলের থেকেও আড়াইগুণ লবণাক্ত জলেও দিব্যি টিকে থাকতে পারে এই উদ্ভিদ। শুধু শ্বাসমূল নয়, বরং এই বিশেষ প্রজাতির পাতার মধ্যেও রয়েছে লবণ পৃথকীকরণের জন্য বিশেষ গ্রন্থি। 

এই বিশেষ প্রজাতির জিনের প্রায় ৯৯ শতাংশই ডিকোড করেন গবেষকরা। পৃথকীকরণ করা হয় ৩১টি লবণ সহনশীল ক্রোমোজোমকে। তাছাড়াও ৩১ হাজার ৪৭৭টি প্রোটিন-কোডিং জিন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে তাঁরা। এই বিশেষ জিনগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্যালিনোম’। চরিত্র এবং লবণ সহনশীলতার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে মোট ৬১৪টি পৃথক বিভাগে ভাগ করা হয়েছে এই জিনগুলিকে।

আরও পড়ুন
জ্যান্ত বিড়াল দিয়ে তৈরি টেলিফোন! চমকে দিয়েছিলেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী

সম্প্রতি ‘নেচার’ গ্রুপের কমিউনিকেশনস বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাটি। ম্যানগ্রোভের ওপর এই ধরনের গবেষণা গোটা পৃথিবীতে এই প্রথম। পাশাপাশি পরবর্তীকালে এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই আমূল বদল আসতে পারে কৃষিক্ষেত্রেও। লবণাক্ত অঞ্চলে কৃষিকাজ যে একেবারেই সম্ভব নয়, তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ সুন্দরবন। ইয়াসের ফলে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে বিঘার পর বিঘা জমি। একই সমস্যা গোটা ভারত জুড়েই। আসলে সাধারণ কৃষিফসলের লবণ সহনশীলতা কম হওয়ায়, তা এই জমিতে বাঁচতে পারে না। গবেষকরা জানাচ্ছেন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে কৃষিফসলের জিনের সঙ্গে ম্যানগ্রোভের স্যালিনোম-এর সংকরায়ন সম্ভব হলেই এই সমস্যার মিটবে চিরতরে। যার ফলে গোটা বিশ্বে এড়ানো যাবে বার্ষিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কৃষিক্ষতি। বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছেন ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর গবেষকরা…

আরও পড়ুন
দক্ষিণ এশিয়ায় মুছে যাচ্ছে পার্বত্য বনভূমির অস্তিত্ব, আতঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পুরস্কার বঙ্গতনয়ার

More From Author See More