৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পুরস্কার বঙ্গতনয়ার

মানুষের নানা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার ক্ষেত্রেই অন্যতম নিয়ামকের কাজ করে আলো। কখনও কখনও তাকে নিয়ন্ত্রণ করাও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রোদের মধ্যে বাইরে যাওয়ার আগে একটু সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেওয়া তো রীতিমতো দস্তুর। কিন্তু বাজারচলতি অনেক সানস্ক্রিনই ঠিকঠাক কাজ করে না। আসলে বিভিন্ন জৈব অণুর সঙ্গে সূর্যরশ্মি বা আলোর সম্পর্কের ধারণাটাই এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এই বিষয়টিতেই যুগান্তকারী গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রীরামপুর শহরের দেবশ্রী ঘোষ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের স্কুল অফ কেমিক্যাল সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক দেবশ্রী ঘোষ তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেতে চলেছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। মার্কিন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ কোয়ান্টাম মলিকিউলার সায়েন্স-এর পক্ষ থেকে এই প্রথম পুরস্কৃত হবেন কোনো ভারতীয়।

১৯৬৭ সালে ২৫ জন বিজ্ঞানীর উদ্যোগে তৈরি হয় ইন্টারন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ কোয়ান্টাম মলিকিউলার সায়েন্স। সেই থেকে প্রতি বছর কোয়ান্টাম গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসাবে একজন বিজ্ঞানীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রাপকদের তালিকায় আছেন বহু নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীও। কিন্তু এই ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোনো ভারতীয় বিজ্ঞানীর নাম উঠে আসেনি। দেবশ্রীর হাত ধরে এই ঐতিহ্যশালী পুরস্কার এবার আসতে চলেছে বাংলার মাটিতেই। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে স্নাতোকত্তরের পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দেন দেবশ্রী। সেখানে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি এবং সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন ২০১২ সালে। প্রথমে পুনে শহরে সিএসআইআর-এর পরীক্ষাগারে কাজে যোগ দেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি যুক্ত আছেন যাদবপুরের আইএসিএস-এর সঙ্গে। আর এখানেই শুরু হয় তাঁর জৈব অণু বিষয়ক গবেষণা।

আলো এবং বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে সম্পর্কের জায়গাটি নিয়ে দেবশ্রীর আগ্রহ ছিল ছোটো থেকেই। গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি বেছে নিয়েছেন শরীরের বিভিন্ন প্রোটিন এবং মেলানিনের মতো জৈব অণুর উপর আলোর প্রভাবের বিষয়টি। সূর্যের রশ্মি মানুষের শরীরে প্রবেশ করার পর কী ধরণের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটায়, সে-বিষয়ে একটি মডেল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর এই গবেষণায় তিনি কাজে লাগিয়েছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। কাজটা হয়তো একা শেষ করতে পারবেন না তিনি। এই মডেল তৈরি করতে বিশ্বের নানা প্রান্তের অন্যান্য বিজ্ঞানীদেরও যুক্ত হতে হবে। তেমনটাই মনে করছেন দেবশ্রীর সহকর্মী গবেষক তাপস চক্রবর্তী। তাছাড়া, দেবশ্রী ঘোষের কাজ মূলত তাত্বিক মডেল তৈরির। একে বাস্তবে প্রয়োগ করার কাজটাও করতে হবে তারপর। তবে তাঁর এই গবেষণা সম্পূর্ণ হলে যে বিজ্ঞানের জগতে এক বিরাট সাফল্য ঘটে যাবে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রিন্স ডায়নার নামাঙ্কিত পুরস্কার পাচ্ছেন কলকাতার তরুণী

More From Author See More

Latest News See More