‘বাবু পেলে ছবি বানাব, এখন লক্ষ্য বিজেপিকে হারানো’, বলছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্জুন

গতকালই ‘সেরা চলচ্চিত্র সম্পাদক’ হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেলেন তিনি। অর্জুন গৌরীসারিয়া। জড়িয়ে ছিলেন ‘পাতালঘর’ সিনেমার সঙ্গেও। ফোনালাপে উঠে এল সিনেমা বানানোর স্বপ্ন, আফশোস ও আরও অনেক কিছু। জানালেন সাম্প্রতিক রাজ্য-রাজনীতি নিয়ে তাঁর উদ্বিগ্নতার কথাও। প্রহরের পক্ষ থেকে কথোপকথনে শৌনক মুখোপাধ্যায়...


‘শাট-আপ সোনা’-র জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

এমনি ভালোই লাগছে। পুরস্কার পেলে যেরকম হয়।

২০১৯ সালে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। ২০২০ সালে এখানে মুক্তিও পেয়েছে। কিন্তু খুব বেশি মানুষ আমাদের দেশে এখনও দেখার সুযোগ পাননি। কেন?

আসলে আমাদের দেশে তো তথ্যচিত্র সেভাবে দেখানোর খুব একটা সুযোগ নেই। আমরাও দেখিয়ে উঠতে পারিনি। এখন দেখা যাক। পুরস্কার পেলে বা কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলে তো সুবিধা হবেই।

আপনি ফেসবুকে লিখেছেন, অভিনন্দন জানিয়ে বিব্রত না করতে। আপনার সঙ্গে কঙ্গনা রানাওয়াতও তো পুরস্কার পেয়েছেন। এটা কি নিছকই মজা করে বলছেন? নাকি সত্যি কঙ্গনা এবং আপনি একসঙ্গে জাতীয় পুরস্কারজয়ী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছেন - তা খানিক বিব্রতকর?

একটু রসিকতা, একটু সত্যিকারের বিব্রতকর। যদিও কঙ্গনা একজন ভালো অভিনেত্রী, তবু আমার বিব্রত হওয়ার কারণটা সবাই জানে। তার চেয়েও বড়ো বিব্রত হওয়ার কারণ হল বিবেক অগ্নিহোত্রী। আর যাই হোক, কঙ্গনা অন্তত প্রতিভাবান।

আরও পড়ুন
নিজেকে চিনুন, হয়ে উঠুন নিজের উপশম - দিশা দেখাবে 'নুভা' : অভীক চন্দ

সিনেমায় তো সোনা মহাপাত্রকে শুধুমাত্র শিল্পী হিসাবে দেখা হচ্ছে না। বরং বৃহত্তর সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে উনি কীভাবে এনগেজ করছেন, অথবা মহিলাদের অবস্থা আজও কীরকম হয়ে আছে, সেটা নিয়েই তৈরি। আপনি তো শিল্পজগতের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই যুক্ত। এই ব্যাপারে আপনার কী মনে হয়?

শিল্পে যে একমুখী ধারা, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে লড়তে হবে। আর এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। এর থেকে বেশি আমার আর কিছুই বলার নেই।

আপনার ‘পাতালঘর’ সিনেমা তো একটা দৃষ্টান্ত। ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক মোশন পিকচার্স’ তো আমাদের দেখিয়েছিল যে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়েও সিনেমা তৈরি সম্ভব। এই বিষয়টা নিয়ে আপনি সেদিন কী ভেবেছিলেন? বা আজও কী ভাবেন?

আমরা চেয়েছিলাম একটা ভালো কাজ করব। তার মধ্যে মজাও হবে, হয়তো রোজগারও হবে। এভাবেই বেশ কিছুদিন হল। অবশ্য রোজগার সেভাবে হয়নি। ‘পাতালঘর’-এর মতো সিনেমা থেকেও তো রোজগার তেমন কিছুই হয়নি। তার পরেও কোম্পানি কিছুদিন চলেছিল। তবে তারপর আর টেনে উঠতে পারলাম না।

সবসময়ই আমি ভালো ছবি করতে চাই। ভালো কাজ করার ইচ্ছা থাকে। এই মুহূর্তে আমরা নিজেদের পয়সা থেকেই কিছু ছবি বানাচ্ছি। আর ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক মোশন পিকচার্স’-এর যে বিষয়টা ছিল, আমরা তো মূলত বিজ্ঞাপনী ছবি থেকে রোজগার করতাম। আর সেই টাকায় পছন্দের সিনেমা বানাতাম। এখন আর বিজ্ঞাপনী ছবি বানানোর মতো গায়ের জোর এখন আর নেই। তেল-সাবানের ছবি বানাতে রীতিমতো গায়ের জোর লাগে। কাজেই এখন ছবি বানানোর জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হবে। প্রোডিউসার খুঁজতে হবে। বাবু খোঁজা যাকে বলে। মনের মতো ছবি হলে নিশ্চই করব। বাবু যে একদম নেই তা তো নয়। সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক, প্রত্যেকেই তো বাবু ধরেই সিনেমা করেছেন।

আরও পড়ুন
‘বীরেনবাবুকে মানুষ যতদিন মনে রাখবে, ততদিন আমিও বেঁচে থাকব’ : শুভাশিস মুখোপাধ্যায়

আচ্ছা এই সময়ে দাঁড়িয়ে যে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান উঠে আসছে, এই শব্দবন্ধটিও তো বোধহয় আপনিই তুলে এনেছিলেন?

না একদমই তা নয়। এই শব্দবন্ধ কার তৈরি তাও আমি জানি না। তবে ভালো শব্দবন্ধ। আমি এটার প্রচার করেছি।

‘নো ভোট টু বিজেপি’ যখন আত্মপ্রকাশ করেছিল তখন অনেকেই বলেছিলেন এই বার্তা অসম্পূর্ণ। বলেছিলেন এটা শুধু শহরের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু আজ তো তার প্রচার গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। এই বিষয়টা নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা বা বক্তব্য ঠিক কীরকম?

আমাদের বক্তব্য এটাই যে আর যাকেই ভোট দিন, বিজেপিকে ভোট দেবেন না। কেননা এটা একটা ক্যানসার। বাকিগুলো কেউই সুস্থ নয়। কোনোটা টাইফয়েড হতে পারে, কোনোটা করোনাও হতে পারে। কিন্তু সবকিছু থেকেই মানুষ বেঁচে উঠতে পারে। ক্যানসার থেকে খুব কম মানুষ বেঁচে ওঠেন। বিজেপি যেন নির্বাচনে কোনো স্থানেই না আসে। ওরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও কী ঘটবে, সেটা আমরা দেখিনি তাই বুঝতে পারছি না। বাইরের রাজ্য থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

আরও পড়ুন
‘এই সময়ে দাঁড়িয়ে সকলের মধ্যে প্রেম বিলানো একটা বড়ো কাজ’: ইমন

গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সবসময়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। সেই জায়গাটা অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছিল। এখন আপনারা প্রচারের মধ্যে দিয়ে এবং তরুণ সমাজকে জড়িয়ে নিয়ে আরও নানাভাবে কর্মসূচি নিচ্ছেন, এটা কি সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে নতুন করে তুলে ধরার একটা জায়গা তৈরি করতে পারে?

আমাদের ইচ্ছে সেটা করার। কিন্তু কতটা হবে, না হবে সেটা আমরা জানি না। তবে আমাদের ইচ্ছে আছে সেটা করার। ২ মে আমরা নির্বাচনের ফলাফল জেনে যাব। নির্বাচনে যাই ঘটুক, আমাদের এই গণ-আন্দোলন কি তাহলে শেষ হয়ে যাবে? একদমই নয়। কেননা প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এখনও অনেকটা লড়াই বাকি। অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবদিকে অনেক লড়াই বাকি। সব প্রশ্নকে মাথায় রেখে একটা গণ-আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারলেই তো ভালো হয়।

আজকের সামাজিক পরিস্থিতিতে তরুণ-তরুণীরা শৈল্পিক দিক থেকে হোক বা সামাজিক-রাজনৈতিক দিক থেকে অনেককিছু করতে চায়। কিন্তু প্রত্যেকেই একটা দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। তাদের প্রতি আপনি একজন প্রথিতযশা শিল্পী এবং একজন জাতীয় পুরস্কারজয়ী চিত্র সম্পাদক হিসাবে আপনি কিছু বার্তা দিতে চাইবেন?

বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। এই মুহূর্তে এই একটি প্রশ্নে রাতে ঘুম হয় না। বাকি কথা পরে হবে।

Powered by Froala Editor