সেনাবাহিনীর আক্রমণে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ, গণমৃত্যুর প্রহর গুনছে মায়ানমার

জায়গায় জায়গায় মাটি কেটে বসিয়ে রাখা হয়েছে ল্যান্ড মাইন, বিস্ফোরক। মাঝে মাঝেই আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করছে যুদ্ধ বিমান। আর এর পিছনে রয়েছে দেশের সেনাবাহিনীই। পূর্ব মায়ানমারের কায়াহ বা কারেন্নি রাজ্যের বর্তমান ছবি এমনটাই। জুন্টা সেনাবাহিনীর নৃশংস আক্রমণে সেখানে বাস্তুচ্যুত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। প্রায় গোটা রাজ্যটাই এখন যেন মৃত্যুপুরী। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, গণমৃত্যুর সম্মুখীন হতে চলেছে মায়ানমার। সম্প্রতি এমনই সতর্কতা জারি করল জাতিসংঘ।

বুধবার জাতিসংঘের উপস্থাপক টম অ্যান্ড্রুজ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান শক্তিধর দেশগুলিকে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান শুরুর পর থেকে এত বড়ো সামরিক হামলার ঘটনা মায়ানমারে এই প্রথম। এবং তার পরিণতি হতে চলেছে ভয়ঙ্কর। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় ২১ মে। সেনাবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে। কিন্তু হঠাৎ এই আক্রমণ কেন? বিগত কয়েকমাস ধরেই স্বৈরতন্ত্রের দরুন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মায়ানমারে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গোপনে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন গেরিলা যোদ্ধারা। সেই আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেই এমন নৃশংস হয়ে উঠল জুন্টা শাসক। 

তবে শুধু গেরিলা যোদ্ধারাই শুধু লক্ষ্য নয় সেনাবাহিনীর, বরং তাঁদের এই বর্বরতার শিকার হলেন সাধারণ মানুষ। সেনাবাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে কায়াহ প্রদেশের একটি ক্যাথোলিক চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রায় ৩০০ মানুষ। তাঁদের ওপরেও চলল অকথ্য নির্যাতন। বন্দি অবস্থাতেই গুলি করে সেখানে হত্যা করা হয় এক ১৪ বছরের কিশোর-সহ ৪ ব্যক্তিকে। সেই আতঙ্কেই রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। 

আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের খবর তুলে ধরায় জেল মায়ানমারের সাংবাদিকের

জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর আক্রমণে এখনও পর্যন্ত গৃহহীনের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন জঙ্গলে, আবার কেউ লুকিয়ে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী রাজ্যে। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও যেন নিস্তার নেই। লোকালয় এবং জঙ্গল— উভয়ক্ষেত্রেই চলছে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, চিরুনি তল্লাশি। টহল দিচ্ছে সাঁজোয়া গাড়ি। এমনকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খাদ্যের সরবরাহও। 

আরও পড়ুন
আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়; হাতে বন্দুক তুলে নিলেন মায়ানমারের ‘বিউটি কুইন’

পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন না হলে, অনাহার এবং দুরারোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাবে গণমৃত্যু ঘটনা ঘটতে চলেছে বলেই আশঙ্কা জাতিসংঘের। অন্যদিকে মায়ানমারে সহিংসতা বন্ধ করার আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রদূত প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘আশিয়ান’। এখনও পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থানের কারণে মায়ানমারে বন্দি হয়েছে প্রায় ছ’ হাজার মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে আটশো জন। যার মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। তবে কায়াহ প্রদেশের সাম্প্রতিক হামলার দরুন সেই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মায়ানমারের স্বৈরশাসক আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে সরে আসেন কিনা…

আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করায় কবিকে নির্মম হত্যা মায়ানমারে

Powered by Froala Editor

Latest News See More