মহামারী আতঙ্কেও লকডাউন নয় লেখাপড়ায় : সৌজন্যে অ্যাডামাস

করোনা সভ্যতাকে এক নতুন বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে। সংক্রমণ ও আতঙ্কের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেই হাজারো প্রশ্ন সামনে এসে ভিড় করছে। সেইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা থেকেই অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি আর প্রহরের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক কলম- 'প্রসঙ্গ করোনা'। এক-একদিন এক-একটি বিষয়ের সঙ্গে কথা চালাব আমরা। আজ লিখছেন অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির পাবলিক রিলেশন এক্সিকিউটিভ শ্রীষিতা ঘোষ।

মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। এই ভয়াবহ মহামারীর সময়ে লকডাউনের মাঝেই ডিজিটাল মাধ্যমে পঠনপাঠন জারি রাখা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। অনলাইনে পরীক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি করোনার মোকাবিলা করতে রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নানা সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ মার্চ, ২০২০ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা সরকারি নির্দেশে এখনও বন্ধ রয়েছে। তারই মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ শুরু হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। 

ক্যাম্পাসে আইসোলেশন সেন্টার :

যত দিন যাচ্ছে, করোনার মারণ থাবা বাড়ছে। চিকিৎসকরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু রোগীর তুলনায় স্থানের সংখ্যা বেশ কম। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যাও থামছে না। এমন মুহূর্তেই করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছিল অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রাণ তহবিলে দশ লক্ষ টাকা পাঠানোই শুধু নয়; ক্যাম্পাসের একটা অংশকে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসাবে গড়ে তোলার আবেদন জানানো হয়। সেই প্রস্তাব অনুমোদনের পর অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বারাসাত ক্যাম্পাসও করোনা মোকাবিলায় সমান তালে লড়ছে। 

বর্তমানে এখানে প্রায় শতাধিক মানুষ কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। তাঁদের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি স্যানিটাইজ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখভাল- সমস্তটাই বিধি মেনে হচ্ছে। ক্যাম্পাসের দুটি নন অ্যাকাডেমিক ভবনে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোয়ারেন্টাইন পর্বশেষে গোটা ক্যাম্পাস জীবাণুমুক্ত করা হবে। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অরগানাইজেশন (হু)-এর নির্দেশিকা মেনে ত্রিস্তরীয় পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া চলবে। 

পঠনপাঠনে লকডাউন-নৈব নৈব চ : 

ক্যাম্পাস বন্ধ। তাই বলে কি পঠনপাঠনেও তালা? কখনওই নয়। কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনলাইন পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ও। গুগল ক্লাস কিংবা জুম কল-সহ বিভিন্ন অত্যাাধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রতিদিন ক্লাস নিচ্ছেন অধ্যাপকরা। তবে শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, নানা অ্যাকটিভিটির মধ্যে দিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। অনলাইনেই চলছে পরীক্ষা গ্রহণও। ক্যাম্পাস চালু না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতিতেই চলবে পঠনপাঠন।

এই বিশাল ডিজিটাল কর্মকাণ্ডে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেইজন্য এগিয়ে এসেছে টিসিএস আয়ন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এপ্রিল মাস থেকে ওই সংস্থা কাজ  করছে। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী ও আধিকারিকরাও এগিয়ে এসেছেন এই করোনা যুদ্ধের লড়াইয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তাঁরা সকলে তাঁদের একদিনের বেতন দান করেছেন। এরই মধ্যে বাংলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আমফান। এখনও বিধ্বস্ত অনেক জায়গা। বিদ্যুৎ তো বটেই, নেটেরও সমস্যা। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেই চলেছে পঠনপাঠন।

টাস্ক ফোর্সের উদ্যোাগী ভূমিকা :

করোনা পরিস্থিতিতে সবদিক দেখভাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি ১৬ সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠন করে। শুধু পড়াশোনা বা সিলেবাস শেষ করা নয়, এই মুহূর্তে মানসিকভাবে নিজেকে খুঁজে পাওয়াটাও জরুরি। নিজের সৃষ্টিশীলতার মধ্যে দিয়ে যাতে নতুন করে নিজেদের আবিষ্কার করি, সেটাই বলছেন অনেকে। সেই জায়গা থেকেই টাস্ক ফোর্স সিদ্ধান্ত নেয়, পঠনপাঠনের পাশাপাশি পড়ুয়ারা নৃত্য, সঙ্গীত, ছবি আঁকা, পোস্টার তৈরি-সহ যে-কোনো এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে। শুধু পড়ুয়ারাই নন, সঙ্গে থাকবেন শিক্ষকরাও। অধ্যাপকরা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি-সহ যেকোনও বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের জন্য  ব্লগ লিখতে পারেন। যেগুলি তুলে ধরা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক, টুইটারেও। অধ্যাপকরা এরপর একে একে মহামারী পরিস্থিতির সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসামূলক দিকগুলো তুলে ধরে ব্লগ লেখেন। ইতিমধ্যে প্রায় একশোটিরও বেশি এরকম ব্লগ রয়েছে। বেশ কিছু ব্লগ প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমেও। বিভিন্ন জার্নাল ও নামী ম্যাগাজিনে কোভিড-১৯ নিয়ে অধ্যাাপকদের বেশ কিছু গবেষণা ও পর্যালোচনাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এরই সঙ্গে আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ওয়েবিনার।

র‍্যাপিড টেস্ট কিট :

টেস্ট কিট। এই মুহূর্তে রাজ্য, দেশ, বিশ্ব- চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে জিনিসটি সবার আগে ও সবচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা যাতে দ্রুত ও স্বল্প মূল্যে করা সম্ভব হয়, সেজন্য কিট তৈরিতে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। সেই উদ্যোগে সামিল হয়েছে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ও। যৌথভাবে অ্যাডামাসের সঙ্গে রয়েছে বায়োজেনিক লাইফ। 

গোটা মে-জুন মাস ধরে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা-র মাঝেও অ্যাডামাসের ভূমিকা নিয়ে একাধিক ওয়েবিনার আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। কীভাবে এর পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যেতে পারে, সেটাই এখানে মূল আলোচ্য বিষয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ বেসিক অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের রসায়ন বিভাগের তরফে এক ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন নোবেলজয়ী প্রফেসর জেন মারি লে। 

Each One Reach One (ইচ ওয়ান, রিচ ওয়ান) : 

১৮ থেকে ২৩ বছর বয়স। এই সময়ই গড়ে ওঠে উপযুক্ত কেরিয়ারের ভিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা থেকে কেরিয়ার বাছাই সবকিছুই প্রশ্নচিহ্নের মুখে। তাঁদের পড়াশোনা, ভবিষ্যৎ, উচ্চশিক্ষা, চাকরির বাজার- সব নিয়েই উদ্বিগ্ন ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকরা। তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই 'ইচ ওয়ান, রিচ ওয়ান' প্রকল্প। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় কেরিয়ার ও উচ্চশিক্ষার খুঁটিনাটি কেন্দ্রিক ওয়েবিনার, অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও নিয়ে পৌঁছে যাবেন অধ্যাপকরা। শুধু তাই নয়, লকডাউন পিরিয়ডে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। এবছর উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া এবং স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা, যারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ওয়েবিনার, জুম সেশনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। চলবে কাউন্সেলিং, কেরিয়ার ডেভলপমেন্ট, পার্সোনালিটি ডেভলপমেন্ট সংক্রান্ত  আলোচনাও।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে কোভিড স্কলারশিপ। এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মোট দু-কোটি টাকা। কোভিড-১৯এর কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থায় কোভিড স্কলারশিপের দরুণ বহু পড়ুয়া উপকৃত হবে।

Powered by Froala Editor