মহামারীর প্রভাবে বদলাচ্ছে সাংবাদিকতার পেশাও, প্রশস্ত হচ্ছে ওয়েব মিডিয়ার পথ

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে গোটা বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বদলাচ্ছে অভ্যাস। একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি নিয়ে রীতিমতো চিন্তার সম্মুখীন প্রশাসক-পরিচালকরা। কোথাও একের পর এক মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন। ব্যবসায় মন্দা। সর্বত্র চলছে হাহাকার। আর সমস্ত ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়েছে সাংবাদিকতা, গণ-জ্ঞাপন পেশার ওপরেও। ফলে সংবাদপত্রের কর্মী, সাংবাদিকরা প্রচুর সংখ্যায় চাকরি হারিয়েছেন এবং হারাচ্ছেন। মানুষ সংক্রমণের আতঙ্কে খবরের কাগজ কিনতে ভয় পাচ্ছেন। আর এই পরিস্থিতিতেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মিডিয়া, টেলিভিশন চ্যানেল ও নিউজ পোর্টালগুলি। আবার এই নতুন ধারার মিডিয়া যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তাতে প্রতিযোগিতায় বেশ খানিকটা পিছু হটতে শুরু করেছে সংবাদপত্রের ব্যবসা। যা অধিক ব্যয়বহুল প্রিন্ট মিডিয়ার পতনেরই ইঙ্গিত দেয়।

অন্যদিকে এই ভয়াবহ রোগের সংক্রমণ রুখতে শারীরিক দূরত্বের নিয়মাবলি এবং লকডাউন ভাটা নিয়ে এসেছে চলচ্চিত্র জগতেও। বন্ধ করা হয়েছে সিনেমা হল, মাল্টিপ্লেক্সগুলি। হয়তো ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার অবকাশ পাবেন না সাধারণ মানুষ। ভাইরাসের সংক্রামক প্রকৃতির কারণে কোনোরকম সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কারণে এই শিল্পেও মন্দার আঁচ লেগেছে। স্থগিত রয়েছে একগুচ্ছ সিনেমার রিলিজ। টলিউড থেকে হলিউড সর্বত্রই চিত্রটা এক।

তবে এই সমস্যাবহুল পরিস্থিতিতেই বিনোদন জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত আসতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উনবিংশ শতাব্দীর প্রিন্ট নির্ভর নিউজ মিডিয়া থেকে বিংশ শতাব্দীতে ভারত ভারত ঢুকে পড়েছে টেলিভিশন নির্ভর সংবাদ মাধ্যমে। আর এই রূপান্তরের ভিতকে শক্তি জুগিয়েছে ভারতে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুরু এবং নতুন নতুন ধারার রাজনীতিবিদদের উত্থান। তবে মহামারীটি দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে থাকায় সংবাদ পরিবেশনে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল। ওয়েব-নেতৃত্বাধীন মোবাইল-সাংবাদিকতার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন সকলে। খবরের কাগজ কেনার প্রয়োজন নেই। দরকার হচ্ছে না টিভির সামনে বসারও। মোবাইলের একটা বাটন টিপতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠছে দেশ বিদেশের একের পর এক খবর।

আরও পড়ুন
করোনা রুখতে রাজ্য সরকারের পাশে অ্যাডামাস, প্রশংসা দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের

নিউজ মিডিয়াগুলি এখন নতুন রূপে কাজ করছে। যেখানে দ্রুতগতিতে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে ওয়েব পোর্টালগুলি, টেলিভিশন চ্যানেলগুলি সেই ঘটনাগুলি দৃশ্যত পরিবেশন করছে, আলোচনাসভা আয়োজন করছে এবং একই বিষয়ে বিস্তারিত খবর পাঠকদের সামনে তুলে ধরছে সংবাদপত্রগুলি। আর এটা আরও বেশি কার্যকর হওয়ার কারণ মোবাইল, ক্যামেরা এবং ল্যাপটপে সাংবাদিকরা সমানভাবে স্বচ্ছন্দ থাকার কারণে।

আরও পড়ুন
মহামারী আতঙ্কেও লকডাউন নয় লেখাপড়ায় : সৌজন্যে অ্যাডামাস

ঠিক একইভাবে আমূল পরিবর্তন এসেছে বিনোদন জগতেও। পুরনো ফর্ম্যাটগুলি ক্রমশ অপ্রচলিত হয়ে উঠছে। বিনোদন জগতে এখন সাড়া ফেলছে ওয়েব। ১০ থেকে ২০ মিনিটের ছোট গল্প, ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের দীর্ঘ ছবি এবং ৭০ মিনিটের বেশি সময়ের ফিচার ফিল্মগুলিই এখন ওয়েব জগতের মূল আকর্ষণ। বিশ্বজুড়ে লকডাউন চলার কারণে বলিউডের প্রায় আটটি এবং হলিউডের কমপক্ষে ছয়টি চলচ্চিত্র ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মারফত দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
অস্থায়ী হাসপাতালের পরিকল্পনা, অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি ব্যবহারের প্রস্তাব সরকারকে

টেলিভিশন জগতেও এসেছে বদল। পুরনো গল্পগুলির পুনর্নবীকরণ, নতুন বিষয়বস্তুকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা, কম সংখ্যক চরিত্র দিয়ে অভিনয় করানোর পাশাপাশি অভিনেতার বদলে গল্পগুলিতে মনোনিবেশ করার মতো বিষয় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নবজন্ম গ্রহণ করেছে বেতারমাধ্যমও। সংগীত, বিনোদন ছাড়াও রেডিওর জন্যও তৈরি হচ্ছে সংবাদ এবং কল্পকাহিনির নিত্যনতুন বিষয়।

ভবিষ্যৎ মিডিয়াটির আরও আকর্ষণীয় অংশ হ'ল ব্র্যান্ড এবং বিপণনের যোগাযোগ যা আরও ব্র্যান্ডযুক্ত বিষয়-সহ ওয়েব মাধ্যমে প্রবেশ করবে। ফলে সুদূরপ্রসারী ভাবনাচিন্তার উপর আরও বেশি জোর দেওয়া হবে, আরও বেশি ই-ইভেন্ট এবং সাংবাদিক সম্মেলন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা সম্ভব হবে।

ব্র্যান্ড এবং বিপণনের কেন্দ্রবিন্দু হল মূল্যবোধ। আর তাই আগ্রাসী বিক্রয় পদ্ধতির তুলনায় স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহ এবং সুবিধার দিকে নজর রাখা আবশ্যক।

আর তাই এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই প্রয়োজন বর্তমান যুগের মিডিয়া পেশাদারদের।

(ক) মিডিয়া টেকনোলজির পেশাদারদের ওয়েব মাধ্যযমে শ্যুট অ্যান্ড এডিট, সাউন্ড অ্যান্ড গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন অ্যান্ড গেমিং, ভিস্যুয়াল অ্যান্ড স্পেশাল এফেক্টস সহ ভার্চুয়াল অ্যান্ড অগমেন্টেড রিয়েলিটি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় হল এমন একটি অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে বিএসসি মিডিয়া টেকনোলজি বিষয়টি পড়ানো হয়। যারা লেখালেখি কিংবা গবেষণামূলক কাজের পরিবর্তে প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য  এই কোর্সটি বিশেষ উপযোগী। একইভাবে স্নাতকোত্তর স্তরে রয়েছে এমএসসি মিডিয়া টেকনোলজিও।

(খ) মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের পেশাদাররা বিভিন্ন ইভেন্ট কৌশলগতভাবে সম্পাদনা এবং পরিচালনা করার দক্ষতা রাখেন। মিডিয়া জগতে আয়বৃদ্ধি, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন বা ওয়েব মাধ্যমে বিনোদনের পদ্ধতি নিশ্চিত করেন তাঁরা। এগুলি সবই মিডিয়ার সঠিক ব্র্যান্ডিং এবং বিপণনে সহায়তা করে। এ-প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় এমনই পেশাদার গড়ে তুলতে চায়। আর তাই এমবিএ কমিউনিকেশন ম্যানেজমেন্ট এবং এমবিএ ইভেন্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট ম্যানেজমেন্টের মতো অভিনব বিষয়ে পঠনপাঠন চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

(গ) রয়েছেন নিউজ মিডিয়া পেশাদাররাও, যাঁরা ওয়েব, টেলিভিশন, রেডিও এবং প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য সৃজনশীলতার সঙ্গে কাজ করে থাকেন। যে ছাত্র-ছাত্রীরা এই পেশায় নিজেদের কেরিয়ার গড়ে তুলতে চান, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এমএ ইন-কনভারজেন্ট জার্নালিজম শিরোনামে একটি কোর্স চালু করেছে। স্নাতক স্তরে রয়েছে বিএ ইন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিষয়টি, যা সাংবাদিকতার পাশাপাশি ফিল্ম, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপন, জনসংযোগ প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে।

(ঘ) একইসঙ্গে প্রয়োজন বিনোদন জগতের মিডিয়া পেশাদারদেরও। যাঁরা সৃজনশীলতার সঙ্গে টেলিভিশন সিরিয়াল, সিনেমা, ব্র্যান্ডেড ফিল্ম, সংগীত এবং রেডিও বিনোদন জগতে গবেষণা, স্ক্রিপ্ট লেখা, পরিচালনা ইত্যাদির দিকে মনোনিবেশ করে থাকেন। তাদের জন্য রয়েছে এম এ ইন এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়া নিয়ে পড়ার সুযোগ।

তাই বলা যেতে পারে, এমন উচ্চমানের উন্নততর কোর্স এবং হাতেকলমে শিক্ষা-এই দুইয়ের মেলবন্ধনকে হাতিয়ার করে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সৃজনশীল শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে।

Powered by Froala Editor