চরমে আর্থিক মন্দা, বেঁচে থাকতে আস্তাকুঁড় থেকেই খাবার সংগ্রহ লেবানিজদের

রমজান মাসের সন্ধে মানেই আলো ঝলমল করে ওঠা শহর। সারাদিনের রোজার পর রাস্তায় অজস্র মানুষের ভিড়। ইফতার খাওয়া-দাওয়া। উৎসবের মাসে লেবানন ঠিক এমনটাই। তবে এবছর রমজান মাস একেবারে অন্যরকম সেখানে। করোনার থাবায় ধ্বসে পড়েছে গোটা দেশের অর্থনীতি। ইফতার তো দূরের কথা, সন্ধে গড়ানোর পর মুখে দানা কাটার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না অনেকেই। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে উপবাস।

তৈলখনির ওপর নির্ভরশীল না থাকা আরবিক দেশগুলির মধ্যে উপার্জনের নিরিখে শীর্ষস্থানেই ছিল লেবাননের নাম। আর এখন সেখানেই হাহাকার একটুকু খাদ্যের জন্য। বাসিন্দাদের ঘিরে রেখেছে চূড়ান্ত এক অনিশ্চয়তা। কেউ আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই খাবার খুঁজে চলেছেন তন্ন তন্ন করে। যদি কিছু জোটে তবে বাড়ি ফিরে তুলে দেওয়া যাবে সন্তানের মুখে। কারোর ভাগ্য জুটছে পচা লেবু, উচ্ছিষ্ট খাবার, আধ-খাওয়া কোল্ড-ড্রিঙ্কের বোতল। আবার কেউ রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সপরিবারে বসে আছেন অধীর আগ্রহে। যদি প্রভাবশালীরা ‘দয়া’ করে এগিয়ে দেন সামান্য খাবার। 

এই অর্থনৈতিক মন্দার শুরুয়াত হয়েছিল ২০১৯ সালের একেবারে শেষের দিক থেকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশের গোটা পরিকাঠামোই। অধিকাংশ অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কাজ হারান বহু মানুষ। যাঁরা কাজ টিকিয়ে রাখতে পারলেন, তাঁদেরও সংকুচিত হয়ে এল আয়ের পরিধি। স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ কম পারিশ্রমিকেই ঘাম ঝরাতে হত তাঁদের। 

তবে লেবানিজ অর্থনীতিতে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় গত বছরে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। বেইরুট বন্দরে বিস্ফোরণের ফলে কার্যত ধ্বসে পড়ে অর্থনীতি। বন্ধ হয়ে যায় টিম টিম করে জ্বলে থাকা কর্মসংস্থানগুলির একাংশ। বিগত এক বছরেও কাটেনি সেই অন্ধকার। বরং, সেই সঙ্গে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি অসম্ভব করে তুলেছে নাগরিকদের বেঁচে থাকাকে। বিগত কয়েক মাসেই খাদ্যের দাম বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। অর্থাৎ, খাবারের দাম এখন আটগুণ। শুধু রমজানের প্রথম সপ্তাহেই ২৩.৭ শতাংশ বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য। বাড়ি ভাড়াও বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

আরও পড়ুন
দারিদ্র্যে ধুঁকছে দেশ, অন্যদিকে বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ১৫ জন নতুন ভারতীয়

পবিত্র রমজান মাসে বাড়ির বাড়তি খাবার প্রতিবেশীদের সঙ্গে আদানপ্রদান করা হয় লেবাননে। বহু বছর ধরেই চলে আসছে এই প্রথা। তবে সেই ইফতার ‘উপহার’-এর অপেক্ষাতেই চেয়ে রয়েছেন লেবাননের বাসিন্দারা। কিন্তু খাবার কোথায়? এই আর্থিক পরিস্থিতিতে কেই বা এগিয়ে আসবে সঞ্চয় না করে? বন্ধ হয়ে গেছে ভীক্ষা করার পথও। 

আরও পড়ুন
বিস্ফোরণের পর এবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড লেবাননে, জ্বলছে বেইরুট বন্দর

বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ বর্তমানে রয়েছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। ৭০ লক্ষের দেশে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের দারিদ্র পৌঁছেছে চরমে। দ্রুত সাহায্য না পৌঁছালে অনাহারে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে অনেকের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাই। এই অবস্থায় আর কতদিন চালিয়ে যাওয়া যাবে অস্তিত্বরক্ষার লড়াই? জানা নেই উত্তর…

আরও পড়ুন
বিস্ফোরণে আশঙ্কাজনক লেবাননের ৬০টি স্থাপত্য, সাহায্যের হাত বাড়াল ইউনেস্কো

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More