গানবাজনা ছেড়েছেন আগেই, চাকরি হারিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন এই গ্র্যাজুয়েট বাঙালি!

কালো জামা, শীর্ণ চেহারা, মুখ ভর্তি বহুদিনের না-কাটা দাড়ি। নিজের রিকশা নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। কখনও যাত্রী পাচ্ছেন, কখনও পাচ্ছেন না। ভরা রোদ, বৃষ্টি সবসময়ই তিনি হাজির। এখন এই রাস্তাই তো তাঁর জীবন, তাঁর রোজগার। অথচ এমন দিনের কথা কি কখনও মাথায় এসেছিল? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের দিকেই তাকান মহম্মদ এহসানুর রশীদ পুনম। ভাঙাচরা মুখে হাত বোলাতে থাকেন। মনে পড়ে নিজের ব্যান্ডের কথা, গান-বাজনার কথা, চাকরির কথা। আজ সেসব কত দূরে সরে গেছে… 

বাংলাদেশের অন্যান্য তরুণের মতোই বেড়ে উঠছিলেন পুনম। সোশ্যাল সায়েন্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশনে ভর্তি হয়েছিলেন কাজীপুরের একটি কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেছিলেন গানবাজনাও। যুক্ত হন একটি ব্যান্ডের সঙ্গে, নাম ‘স্যালভেশন’। একসঙ্গে রাত জাগা, গান তৈরি করা, সুর খোঁজা— যেন অন্য জগতের দিন ছিল। সেইসঙ্গে চাকরির মধ্যেও ঢুকে পড়েছিলেন পুনম। নামিদামি কোম্পানিতে কাজ করেছেন। অফিসার পদেও কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে চালিয়ে গেছেন নিজের ব্যান্ড, কি-বোর্ড এবং গান। ঠিক যেন ‘রক অন’ সিনেমার আদিত্য শ্রফ! ইতিমধ্যেই ২০০৪ সালে ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতায় সেরা ব্যান্ডের তকমা পায় ‘স্যালভেশন’। তারপর থেকে শো বাড়তে থাকে; সঙ্গে চাপও…  

কিন্তু ভাগ্য সবার জন্য একরকম হয় না। আদিত্যও একদিন পরিস্থিতির চাপে গানবাজনা ছেড়ে চলে গিয়েছিল বহু দূরে। পুনমের জীবনেও ঘটে তেমনই ঘটনা। চাকরির জাঁতাকলে পড়ে দূরে চলে যায় ব্যান্ড। দূরে চলে যায় গানের জগত। একটু একটু করে ঝড় নামতে থাকে জীবনে। তার মধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। গত বছর অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন পুনম। তারপর থেকেই শরীরের জোর কমে এসেছে। মাথায় ৪৮টা সেলাই, চোখের পাশে ১১টা। টানা ৯ মাস বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে হয়। পরে দেখেন, তাঁর চাকরিটাও আর নেই।  

এত টাকার ধাক্কা, তার ওপর চাকরিও চলে গেছে। রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসে চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন; এমন সময় হানা দেয় করোনা ভাইরাস। গোটা বিশ্ব বন্ধ হয়ে যায় এক নিমেষে। এমন আঘাত থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায়নি। অফিস-কাছারিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, পুনমের হাত থেকে শেষ ভরসাটাও চলে যায়। তাঁর সিভি রয়ে গেছে সমস্ত অফিসে; কিন্তু চাকরি? সেটা এখন হবে না। 

এফিকে বাঁচতে তো হবে! অন্যের দয়ায় কোনোদিনও বাঁচেননি এহসানুর রশীদ পুনম। তাই রিকশা নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। ১০ বছর দূরে পড়ে রয়েছে নিজের গান-বাজনার জগত। চাকরির পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে কেউ জানে না। স্ত্রীয়ের সঙ্গেও ডিভোর্স হয়ে গেছে; মা-ভাইদের ছেড়ে ঢাকার রাস্তাতেই জীবন বেছে নিয়েছেন পুনম। তাঁর কথাবার্তা, উচ্চারণ শুনলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। বুঝতে পারেন না এমন শিক্ষিত ছেলের এরকম অবস্থা কেন! পুনম হাসেন; কেবলই হাসেন। জীবনযুদ্ধে এত সহজে হেরে যাবেন! হোক না রিকশা, যেভাবেই হোক পেটে তো কিছু পড়ছে। একদিন ঠিক চাকরি হবে তাঁর। আর গান? রিকশা চলতে থাকে… 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
আষাঢ়ের প্রথম দিনে ‘গেরিলা গার্ডেনিং’, উপমহাদেশ জুড়ে বৃক্ষরোপণ একদল গাছপাগলের