'সৌর গান্ধী'র ভারতভ্রমণ

আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা এবং চর্চিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন। আর বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। আজ জীবিত থাকলে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হতেন মহাত্মা গান্ধী। এমনটাই বিশ্বাস আইআইটি বম্বে-র (IIT Bombay) অধ্যাপক চেতন সিং সোলাঙ্কির (Chetan Singh Solanki)। জনসচেতনতা তৈরি করতে পথে নামতেন গান্ধীজিও। এবার জাতির জনকের অনুপস্থিতি ঢাকতে তাই নিজেই পথে নেমেছেন গান্ধীবাদে বিশ্বাসী অধ্যাপক ডঃ সোলাঙ্কি।

২০২০ সালের শেষের দিক। তখন মহামারীর প্রকোপ দেশ-জুড়ে। বন্ধ স্কুল-কলেজ। বম্বে আইআইটির ছবিও ছিল একইরকম। ফলে, বাড়িতে থেকেই তাঁকে অনলাইনে চালিয়ে যেতে হচ্ছিল গবেষণা ও অধ্যাপনার কাজ। ফলে হাতে অবসর সময়ের অভাব ছিল না। এই সময়টাই যদি ভারতভ্রমণ করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজে ব্যবহার করা যায়? যদি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায় সৌরশক্তি ব্যবহারে? এই ভাবনাই তাড়িত করে ডঃ সোলাঙ্কিকে। 

যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। আস্ত একটি বাসকে তিনি বদলে ফেলেন ক্যারাভ্যানে। রান্নাঘর, শোয়ার জায়গা, অফিস সব কিছুই পৃথকভাবে বাসের মধ্যে তৈরি করেন আইআইটির গবেষক। শেষে নিজের কৌশলে বাসের ইঞ্জিনকে বদলে ফেলেন সৌরশক্তি চালিত ইঞ্জিনে। তারপর একজন বাসচালক এবং রাঁধুনিকে নিয়ে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মধ্যপ্রদেশ থেকে পাড়ি জমান ভারতভ্রমণের উদ্দেশ্যে।

টানা দু-বছর পর ভারতের প্রতিটি রাজ্য ও মূল ভূখণ্ডের অন্তর্গত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ঘুরে আগামী মাসেই ফের মধ্যপ্রদেশে ফিরছেন তিনি। তবে এখানেই তাঁর যাত্রা শেষ হচ্ছে না। ডঃ সোলাঙ্কি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ২০৩০ সালের আগে বাড়ি ফিরবেন না। বরং, আগামীতে তাঁর লক্ষ্য হয়ে উঠতে চলেছে প্রান্তিক অঞ্চলগুলি। দরিদ্ররা নিজেরাই কীভাবে সৌরচালিত যন্ত্র তৈরি করতে পারেন, সেই প্রশিক্ষণই দেবেন তিনি। 

তবে তাঁর এই প্রকল্প নতুন নয়। এক দশক আগের কথা। ২০১০ সাল সেটা। ততদিনে তাঁর প্রায় ৬ বছর শিক্ষকতা হয়ে গেছে আইআইটি বম্বেতে। টানা ৬ মাসের অবৈতনিক ছুটি নিয়ে মধ্যপ্রদেশের এক প্রান্তিক গ্রামে হাজির হয়েছিলেন অধ্যাপক সোলাঙ্কি। সাধারণ মানুষকে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে হাজির করে, ছ’মাস ধরে সৌরলণ্ঠন তৈরির বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন তিনি। যথেষ্ট সফলও হয়েছিল তাঁর এই প্রচেষ্টা। সবমিলিয়ে ৬ মাসে তাঁরা প্রায় ২৫ হাজার সৌরলণ্ঠন তৈরি করেছিলেন। এবার নিজের লক্ষ্যকে আরও খানিকটা দীর্ঘায়িত করেছেন তিনি। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সাধারণ মানুষকে দিয়েই ১ কোটি সৌরলণ্ঠন তৈরি করানো তাঁর একমাত্র পাখির চোখ। 

এরই সঙ্গে অনলাইনে শিক্ষকতার কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এভাবে কতদিন? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে তাতে বিচলিত নন ‘সৌর গান্ধী’-খ্যাত বম্বে আইআইটির এই অধ্যাপক। তাঁর স্পষ্ট কথা, পরিবেশ বাঁচলে তবে না জীবন টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন থাকে। তাঁর এই লড়াই যেন মনে করিয়ে দেয় ‘স্বদেশ’ সিনেমার শাহরুখ খান অভিনীত ‘মোহন ভার্গভ’ চরিত্রটির কথাই…

Powered by Froala Editor