বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ কিংবা স্পর্শ অনুভূতি রয়েছে শব্দেরও?

মঙ্গলবারের রং কী? ইংরাজি ‘এ’ অক্ষরের গন্ধ কেমন? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হলে খানিকটা অবাকই হবেন অধিকাংশ মানুষ। তবে কেউ কেউ আবার উত্তর দিতে পারেন, মঙ্গলবারের রং লাল কিংবা ‘এ’ হরফের গন্ধ মিষ্টি আতরের মতো। ভাবছেন, এ বুঝি নতুন কোনো ধাঁধাঁ? না, তেমনটা নয় বিভিন্ন শব্দ কিংবা অক্ষর শোনা বা দেখার মধ্যে দিয়েই গন্ধ, বর্ণ বা স্পর্শের অনুভূতি লাভ করেন বহু মানুষ।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই বিষয়টিকে বলা হয় সিনেস্থেসিয়া (Synaesthesia), দ্বৈত অনুভূতি বা যুগ্মবেদন। কবিতায় যেভাবে ‘মেটাফর’-এর ব্যবহার করে থাকি আমরা। এই বিশেষ অনুভূতিও অনেকটা তেমনই। স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষ গঠনের কারণে, সাদৃশ্যহীন পদার্থ বা জিনিসের মধ্যেও সাদৃশ্য খুঁজে পান অনেকে। গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৪ শতাংশ মানুষের মধ্যে রয়েছে এই বিশেষ দ্বৈত অনুভূতির ক্ষমতা। কিন্তু কীভাবে এই ক্ষমতা পায় মানুষ? কীভাবেই বা মুক্তি পাওয়া সম্ভব এই অদ্ভুত অবস্থা থেকে? 

না, দ্বৈত অনুভূতি কোনো মানসিক রোগ নয়, স্বাভাবিকভাবেই তাই রোগমুক্তির প্রসঙ্গও আসে না এক্ষেত্রে। আসলে বর্ণ, গন্ধ, শব্দ, স্বাদ বা স্পর্শ— এইসব কিছুই আমাদের স্বতন্ত্র উপলব্ধি। প্রতিটি পৃথক পৃথক বর্ণ, গন্ধ, শব্দ, স্বাদকে আমরা নামকরণ করেছি ভিন্ন ভিন্ন নামে। অর্থাৎ, ‘লাল’ রং বলে আমরা যাকে চিনি, তা বহুকাল আগেই নামকরণ করা হয়েছে ‘লাল’ হিসাবে। সেভাবেই নামকরণ হয়েছে ‘লেবু’, ‘ঘণ্টা’ কিংবা ‘বাজি’-র নামও। ছোটোবেলায় বিভিন্ন কথ্য শব্দের মধ্যে দিয়েই আমরা এই পৃথক পৃথক পদার্থের নাম শিখেছি বা পরিচিত হয়েছি এইসব সামগ্রীর সঙ্গে। 

তবে ছোটোবেলায় অনেকেই লাল রং-কে চিহ্নিত করার সময় সূত্র হিসাবে কল্পনা করেন দমকল কিংবা টমেটোর মতো পদার্থকে। সেক্ষেত্রে কথ্য শব্দ বা শব্দবন্ধের সঙ্গেই স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয় সংশ্লিষ্ট পদার্থটির বৈশিষ্ট্যও। যেমন দমকলের ঘণ্টার শব্দ কিংবা টমেটোর হালকা টক গন্ধ। পরবর্তীতে ঘণ্টার শব্দ শুনলে তাঁরা লাল রং দেখতে পান চোখ বুজিয়েও। কিংবা নাকে আসে হালকা টক গন্ধ। 

সবমিলিয়ে বলতে গেলে মানুষের বিষয়গত অভিজ্ঞতা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী এই ঘটনার পিছনে। অর্থাৎ, মানুষের দৈনিক যাপনের অভিজ্ঞতা থেকেই যেভাবে অবচেতন মনে জন্ম নেয় স্বপ্ন, সেভাবেই মানুষের সচেতন অবস্থায় দৃশ্যপট তৈরির ক্ষমতাকে বলা হয় সিনেন্থেশিয়া। ১৯৬০ সালে প্রথম এই বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দার্শনিক স্যার জন লক। তবে এক জার্মান চিকিৎসক জর্জ টোবিয়াসের লেখা ১৮১২ সালের ডায়েরিতে প্রথম উল্লেখিত হয়েছে দ্বৈত অনুভূতির ঘটনা। জর্জ নিজেই ছিলেন সিনেস্থেশিয়ার অধিকারী। ফলে, এমন দ্বৈত অনুভূতির ক্ষমতা থাকলে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছুই নেই। গবেষণা বলছে অধিকাংশ দ্বৈত অনুভূতি-সম্পন্ন মানুষের শৈল্পিক চেতনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে, খোদ ভিনসেন্ট ভ্যান গঘও ‘আক্রান্ত’ ছিলেন এই বিশেষ মানসিক অবস্থার…

Powered by Froala Editor

More From Author See More