উপযুক্ত পরীক্ষা না করে ভ্যাকসিন প্রয়োগে বিপদের সম্ভাবনা, উদাহরণ রয়েছে ইতিহাসেই

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যত ছড়িয়ে পড়ছে, তত বেশি করে আতঙ্ক গ্রাস করছে মানুষকে। কবে মুক্তি মিলবে এই আতঙ্ক থেকে? এই প্রশ্নই সকলের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ কিছুই আবিষ্কার হয়নি। বেশ কিছু প্রতিষেধক চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হলেও, শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি মেলেনি কারোরই। আর সেইসঙ্গে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শুধুই সাধারণ মানুষ নয়, এর মধ্যেই ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কমিশনার ডা. স্টিভেন হানও জানিয়ে দিয়েছেন এরপর উপযুক্ত মডেল পাওয়া গেলে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই তাকে স্বীকৃতি দিতে পারে এফডিএ। আইন অনুযায়ী এমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন বা ইইউএ-র অধিকার সংস্থার আছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, তাই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

এর আগেই চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে প্রতিষেধকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে রুশ সরকার। এবার সেই প্রশ্নের মুখে এফডিএ-ও। সেইসঙ্গে ফিরে আসছে কিছু ইতিহাসের প্রসঙ্গও। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে প্রতিষেধকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ইতিহাসে এর আগে এমনটা বহুবার হয়েছে। আর তার ফল কখনোই ভালো হয়নি। ২০০৫ সালে ইইউএ ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল এফডিএ। সেবার আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাই দ্রুত অ্যান্থ্রাক্স ভ্যাকসিনের দাবি জানিয়েছিলেন। আদালতও সেই দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তার ফলে মহামারী তো আটকানো যায়নি, বরং নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল মানুষের শরীরে।

১৯৫৫ সালে প্রথম যখন পোলিও ভ্যাকসিনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তখন অবশ্য পরীক্ষানিরীক্ষার যাবতীয় নিয়মকানুন জানা ছিল না। অর্থাৎ যা ঘটেছিল তাকে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলা যায়। কিন্তু ভুল থেকেও তো শিক্ষা নিতে হয়। মারণ ভাইরাস পোলিও তখন ক্রমশ অসংখ্য শিশুকে পঙ্গু করে দিচ্ছিল প্রতি বছর। তাই ভাইরাসকে আটকানোর পথ খুঁজে পেতেই প্রত্যেক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয় পোলিও ভ্যাকসিন। কিন্তু সেই প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে থেকে গিয়েছিল জীবন্ত পোলিও ভাইরাস। আর তাই ২০ হাজারের বেশি শিশু রাতারাতি আক্রান্ত হয় পোলিও রোগে। স্বাভাবিক মহামারী পরিস্থিতিতেও এমনটা হয়নি ততদিন।

এরপর ১৯৭৬ সালে আরেক মহামারীর মুখোমুখি হয়েছিল আমেরিকা। সেই রোগের নাম ‘সোয়াইন ফ্লু’। সেবারেও বলা হয়েছিল, এমন মহামারী এর আগে কোনোদিন দেখা যায়নি। আর তাই তড়িঘড়ি প্রতিষেধকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় সরকার। কিন্তু না, মহামারী তাতে আটকানো যায়নি। বরং যে ৪ কোটি মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন গালিয়ান ব্যারে সিন্ড্রোম নামে একধরনের স্নায়বিক রোগে। আর এই রোগের পিছনে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকেই দায়ী করেছিলেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন
ক্যানসার ভ্যাকসিন ও তার শ্রেণীবিভাগ : আরোগ্য কতদূর?

সম্প্রতি আমেরিকায় তাই যে ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলন দেখা যাচ্ছে, তাকে খুব অপ্রত্যাশিত বলা যায় না। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে আন্দোলনের মধ্যে থেকে এক ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতাই ফুটে উঠছে, কিন্তু একথাও ঠিক ভ্যাকসিনের সঙ্গে এক আতঙ্কও ঐতিহাসিকভাবে গ্রাস করেছে আমেরিকাবাসীকে। এমনকি এই করোনা পরিস্থিতিতেও তড়িঘড়ি হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন ব্যবহারের স্বীকৃতি দিয়েছিল এফডিএ। কিন্তু তাতে সুচিকিৎসার বদলে হৃদযন্ত্রের সমস্যাই আরও বেড়ে গিয়েছিল। তাই ভাইরাসের আতঙ্ক যতই গ্রাস করুক, তাড়াহুড়ো করলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না। এগোতে হবে একটু একটু করে। নিয়ম মেনে। এবং অবশ্যই সমস্ত সতর্কতা মেনে।

আরও পড়ুন
ভ্যাকসিন-বিরোধী প্রচার নিয়ে বিতর্ক পশ্চিমি দুনিয়ায়; গোটা পৃথিবীতেই পিছিয়ে পড়ছে বিজ্ঞান?

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
রাশিয়া, বিশ্বের প্রথম করোনা ভ্যাকসিন ও কিছু সংশয়